রোববার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৩০ ১৪৩২, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৭ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারতীয় দূতকে ডেকে ফের অনুরোধ হাদিকে গুলি করে ফয়সাল, বাইকে চালক ছিলেন আলমগীর: পুলিশ হাদিকে গুলির ঘটনা মাথায় বাজ পড়ার মতো: সিইসি হাদিকে বিদেশে নেওয়ার ভাবনা জগন্নাথ হলের রাস্তায় আঁকা গোলাম আজমদের ছবি মুছে দিল প্রশাসন সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২ মার্কিন সেনাসহ নিহত ৩ অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি সৈকতে গুলিতে বন্দুকধারীসহ নিহত ১২ হাদিকে গুলি: সন্দেহভাজন মাসুদ ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

ইসলাম

ইসলামী বিধানে ওহি ও যুক্তির সমন্বয়

 প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলামী বিধানে ওহি ও যুক্তির সমন্বয়

এ কথা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে ইসলামের বিধান যুক্তি ও দর্শন নির্ভর বিষয় নয়। দ্বিন-ইসলাম হলো, বিশুদ্ধ সনদ-পরস্পরা আগত ওহি নির্ভর জ্ঞান। যদিও এক্ষেত্রে ওহি ও যুক্তির মধ্যে ব্যাপক সমন্বয় দেখা যায়। তবে দ্বিন-ইসলাম শুধু যুক্তি আশ্রিত নয়।

আমরা জানি, যুক্তি ও দর্শন অনেক সময় তার স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। অভিজ্ঞতার পরিবর্তনের কারণে দর্শন ও যুক্তিরও পরিবর্তন ঘটে। একদিন যে যুক্তি বলিষ্ঠ ও অকাট্য ছিল তা আরেক যুগপ্রেক্ষিতে একেবারেই অসার ও অলীকতায় প্রতিপন্ন হয়। মানবীয় জ্ঞান ও যুক্তির ইতিহাসের প্রতি দৃকপাত করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। ‘পৃথিবী নয় সূর্য ঘুরে’—যুক্তির আলোকে প্রতিষ্ঠিত বিষয়টি বর্তমানে এসে কত হাস্যস্পদরূপে প্রকটিত তা আমরা সবাই জানি। পক্ষান্তরে দ্বিন হলো মানবস্বভাবানুকূল শাশ্বত বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই সত্য আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে দ্বিন হলো বিশুদ্ধ সনদ-পরম্পরা আগত ওহিলব্ধ জ্ঞান ও বাস্তবানুগ আমলের সমষ্টি। কোনো দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী, কল্পনার অশ্বারোহী কবি ও সাহিত্যকর্মী, কোনো নীতিবিদ ও মনোবিজ্ঞানী, দিগ্বিজয়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা, কুশলী সেনাধ্যক্ষ ও সমরবিদ, উচ্চাভিলাষী রাজনীতিজ্ঞ ও জনপ্রিয় লোকপাল, কোনো সমাজবিজ্ঞানী বা প্রযুক্তিবিদের মারফত্ আমরা এই দ্বিন পাইনি। আমরা এই মহান দ্বিন ও জীবন পরিচালনা বিধান পেয়েছি সেসব মহান ও সুপবিত্র নিষ্পাপ সত্তাগণের মাধ্যমে, মহান নবী ও রাসুলদের মাধ্যমে, যাঁদের আছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে আগত বিশুদ্ধতম জ্ঞান ওহি। সর্বশেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নববী জিন্দেগিতে যে ধারার হয় পরিসমাপ্তি। ইরশাদ হয়েছে কোরআন মাজিদে—‘আজ আমি পরিপূর্ণ করে দিলাম তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন আর সম্পূর্ণ করে দিলাম তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত এবং পছন্দ করে নিলাম তোমাদের জন্য দ্বিন ও জীবনবিধান হিসাবে ইসলামকে।’ (সুরা আল মায়িদা, আয়াত : ৩)

যা হোক, এই বিশুদ্ধ ওহীিপরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত এসেছে দ্বিন, এই শরিয়ত। এর কোথাও কোনো ভুল নেই, অসম্পূর্ণতা নেই। নবী (সা.)-এর নববী জীবন ছিল সর্বতোভাবে ওহী নিয়ন্ত্রিত। সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে কোরআন মাজিদে—‘তিনি কিছু বলেন না নিজের ইচ্ছা, প্রবৃত্তি থেকে। এটা তো অন্যকিছু নয় ওহি ছাড়া এবং যা ওহিরূপে প্রেরিত হয়েছে তাঁর সমীপে।’ (সুরা আন-নাজম, আয়াত : ৩-৪)

নবী (সা.) পেয়েছেন আল্লাহ থেকে, আর নবী (সা.) থেকে তা আহরণ করেছেন বিশুদ্ধতার চূড়ান্ত মার্গে সাহাবা-ই-কেরাম রা., আর সাহাবিদের থেকে তাবিঈন, তাবিঈন থেকে তাবে তাবিঈন-এই বিশুদ্ধ পরম আস্থাপূর্ণ ধারায় সনদ-পরম্পরায় পেয়েছি পরবর্তী যুগের আমরা। এই সনদ-পরম্পরা অব্যাহত থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত—শেষদিনেও।

ADVERTISEMENT

সুতরাং এই দ্বিন আকল ও অভিজ্ঞতা নির্ভর কোনো বিষয় নয়। তাই আকলের মাপকাঠিতে নিরূপণের বিষয় নয় তা। এটিকে মাপতে হবে সনদ-পরম্পরতার বিশুদ্ধতায় ও আস্থাভাজনতার মাপকাঠিতে। যেমন, কোনো খবর বা সংবাদ কোনো যুক্তিতে নিরূপিত হয় না; বরং তা দেখা হয় উেসর নির্ভরযোগ্যতা ও পরিবেশন পরম্পরার বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে। যুক্তি প্রায়শই স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। ফলে এ দ্বারা কোনো শাশ্বত, চিরন্তন অনুভাবীয় বিষয়কে মাপা যায় না। ওহির শাশ্বত-পরমতা শুদ্ধতার এত চরমতায় অধিষ্ঠিত যে আকল-যুক্তির গ্রহণ-বর্জন নির্ভর করে তা কতটুকু ওহি অনুকূল সে কথার ওপরে। পক্ষান্তরে ওহিলব্ধ জ্ঞানের গ্রহণীয়তা যুক্তি ও আকলের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে ধারাপরস্পরতার বিশুদ্ধতার ওপর। আকল ও যুক্তির ঘোড়াদৌড়ানোর ময়দান ওহী এবং ওহীলব্ধ দীন ও শরিয়াত নয়।

হ্যাঁ, এ কথা নয় যে, ইসলাম আকল ও যুক্তিকে একেবারে ফেলনা বলে মনে করে। আকল ও যুক্তি হলো ওহির নির্ভরযোগ্যতা মাপার জন্য নয়; বরং এর মর্ম ও মানুশার অনুধাবনের জন্য, ওহিলব্ধ জ্ঞান থেকে আলোকরশ্মি গ্রহণ করে মানবজীবনের সমস্যাসমূহের সমাধান বের করার জন্য এবং এর বাস্তবায়ন কৌশল নির্ণয় করার জন্য। সুতরাং আকল-যুক্তি, অভিজ্ঞতাকে রাখতে হবে তার স্থানে আর ওহিলব্ধ জ্ঞানকেও রাখতে হবে তার স্থানে। নিজ নিজ স্থান বিচ্যুতি সবসময়ই বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজকের পৃথিবীর বিজ্ঞান ও দর্শনচিন্তার সবচেয়ে বড় ভুল এখানেই।