মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন

 প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, কয়েকটি দেশ এই বাহিনীতে অবদান রাখতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৩টি দেশ, এর মধ্যে ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়া। কোনো দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা তাদের ভূখণ্ডে বিদেশি বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।

টেলিগ্রামে এক বার্তায় সংগঠনটি বলেছে, এই পরিকল্পনা “গাজার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও গোষ্ঠীগুলো প্রত্যাখ্যান করে।”

তাদের ভাষায়, “এই প্রস্তাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাহিনীকে গাজার ভেতরে দায়িত্ব দেওয়া হলে এবং প্রতিরোধ শক্তিকে নিরস্ত্র করা হলে তা আর নিরপেক্ষ উদ্যোগ থাকবে না, বরং সরাসরি (ইসরায়েলি) দখলদারদের পক্ষ হয়ে দাঁড়াবে।”

২০ দফা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইএসএফ-এর অন্যতম দায়িত্ব হবে ‘অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে থাকা অস্ত্র স্থায়ীভাবে অপসারণ’ করতে হবে, যেসব বাহিনীর মধ্যে হামাসও রয়েছে।

আইএসএফ গঠনের অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি খসড়ায় বলা হয়েছে, এ বাহিনী ইসরায়েল ও গাজার দক্ষিণ দিকের প্রতিবেশী মিশরের সঙ্গে কাজ করবে।

সেই সঙ্গে গাজায় নতুনভাবে প্রশিক্ষিত একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী গঠনের কথাও বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গাজায় পুলিশিংয়ের কাজটি হামাসের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে এসেছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, আইএসএফ-এর দায়িত্ব হবে “এলাকা সুরক্ষিত করা, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণে সহায়তা করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”

পরিকল্পনার প্রথম ধাপ ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়, যার আওতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও আটক ব্যক্তিদের হস্তান্তর শুরু হয়।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় একটি ‘বোর্ড অব পিস’ গঠনের কথাও বলা হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজে।

আর দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনের অর্থায়ন আসবে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় গঠিত একটি ট্রাস্ট ফান্ড থেকে।

ওই প্রস্তাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে, যার বিরোধিতা করে আসছে ইসরায়েল। আরব দেশগুলোর চাপের মুখেই ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের পথচিত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের এই শান্তি পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে লড়াইয়ের আপাত অবসান ঘটে, যা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে এক হামলার পর। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

এরপর দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিকে হত্যা করা হয়।