পোস্টাল ভোটিং: প্রবাস থেকে ব্যালট পেপার আনা-নেওয়া কতদিনে
প্রথমবারের মত পোস্টাল ভোটিং চালু করতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন হচ্ছে মঙ্গলবার। এ অ্যাপে নিবন্ধনের পর সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হবে প্রতীক সম্বলিত ব্যালট পেপার। টিক বা ক্রম চিহ্ন দিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
প্রবাসীদের বাংলাদেশি ভোটারের পাশাপাশি দেশে ভোটের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী ও আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধনের পর নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করে দেবে ইসি। এরপর অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধিত ভোটারদের কাছে প্রবাসে ব্যালট পেপার পাঠানো শুরু হবে, যা ১৬ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছাতে হবে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ব্যালট পেপার আনা-নেওয়ার সময় বিবেচনা করে নিবন্ধনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ব্যালট পেপার দেশে পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সার্বিক বিষয়ে অ্যাপ উদ্বোধনের পর বিস্তারিত সূচি জানানো হবে এবং প্রচার চালানো হবে।
অ্যাপ উদ্বোধনের প্রস্তুতির মধ্যে সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে পোস্টাল ভোট বিডি উদ্বোধন হবে। এটা একটা ঐতিহাসিক মাইলফলক।
রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন সেই অনুষ্ঠানে এবং ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে দলের প্রতিনিধিদের সহায়তা চান সিইসি।
‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই)’ প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান বলেন, তফসিল ঘোষণার পরে প্রবাসে ব্যালট পেপার চলে যাবে বাংলাদেশ থেকে। প্রবাসীদের কার্যক্রমের শেষের দিকে দেশের তিন ধরনের ব্যক্তির (অ্যাপে নিবন্ধিত) ঠিকানা ধরে পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর পর এখান থেকে পাঠানো শুরু হয়ে যাবে, যাতে প্রতীক বরাদ্দের আগেই পৌঁছে। আর বরাদ্দের পরপরই ভোটার যেন নিজের প্রার্থী মোবাইল অ্যাপে দেখে ভোটটা দিয়ে দেন, তারপরে পাঠিয়ে দিতে পারেন।”
পোস্টাল ব্যালট আনা নেওয়ার সম্ভাব্য সময়
|
গন্তব্য |
ভোটারের কাছে পাঠানো (দিন) |
ভোট ও ডাক (দিন) |
ফেরত (দিন) |
বিমানবন্দর থেকে রিটার্নিং অফিসার (দিন) |
সম্ভাব্য কত সময় (দিন) |
|
মধ্যপ্রাচ্য |
৮ |
২ |
৮ |
২ |
২০ |
|
দক্ষিণ এশিয়া |
৬ |
২ |
৬ |
২ |
১৬ |
|
পূর্ব এশিয়া |
৬ |
২ |
৬ |
২ |
১৬ |
|
ইউরোপ |
১০ |
২ |
১২ |
২ |
২৬ |
|
ওশেনিয়া |
৯ |
২ |
৯ |
২ |
২২ |
|
উত্তর আমেরিকা |
১২ |
২ |
১২ |
২ |
২৮ |
|
দক্ষিণ আমেরিকা |
১২ |
২ |
১২ |
২ |
২৮ |
|
আফ্রিকা |
১২ |
২ |
১২ |
২ |
২৮ |
পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়া
পোস্টাল ভোট বিডির প্রচার, নিবন্ধন, ব্যালট পেপার ও তিন ধরনের খাম মুদ্রণ, নির্বাচন কর্মকর্তার উপস্থিতি, পার্সোনালাইজেশন (ডাক বিভাগ), পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু, ব্যালট ট্র্যাকিং, ভোট প্রদান, প্রবাসে কাছাকাছি ডাকবাক্সে খাম রাখা, পোস্টাল ব্যালট ফেরত ও ট্র্যাকিং, ডাক বিভাগ গ্রহণ, রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছানো, রিটার্নিং অফিসারের গ্রহণ, পোস্টাল ব্যালট ব্যালট বাক্সে রাখা, গণনা এবং শেষ ধাপে ফল ঘোষণা।
ওসিভি: প্রবাসী বাংলাদেশির তালিকাভূক্তি ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া
অ্যাপ ডাইনলোড> লগইন ও রেজিস্ট্রেশন পেজ> এনরুলমেন্ট এর জন্য অ্যাকাউন্ট তৈরি> মোবাইল, ইমেইল অ্যাড্রেস, ওটিপি, ভেরিফিকেশন, পাসওয়ার্ড> লগইন উইথ ইউজারনেম (মোবাইল নম্বর) ও পাসওয়ার্ড>এনআইডি ভেরিফিকেশন>ফ্যাসিয়াল রেকগনিশন, লাইভলিনেস চেক>সেলফি>প্রবাসের ঠিকানা, পাসপোর্টসহ আনুষঙ্গিক তথ্য>তালিকাভুক্ত ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন।
আইসিপিভি: সরকারি চাকরিজীবীর তালিকাভুক্তি
ওপেন এনরুলমেন্ট প্রসেস>পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ লগইন>ই-কেওয়াসি ডিসক্লেইমার>ফেসিয়াল রেকগনিশন, লাইভলিনেস চেক>এনআইডি ভেরিফিকেশন>আইবাস++ভেরিফিকেশন> ঠিকানা, ওটিপি>তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন সম্পন্ন>ভোটার তালিকা মুদ্রণ>ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো>ভোটার গ্রহণ করবে।
ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের তালিকাভুক্তি
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের পোস্টাল ভোট অ্যাপ ব্যবহার> অ্যাপ লগইন>ই-কেওয়াসি ডিসক্লেইমার>ফ্যাসিয়াল রেকগনিশন, লাইভলিনেস চেক>এনআইডি ভেরিফিকেশন>ঠিকানা, ওটিপি>তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন সম্পন্ন>ভোটার তালিকা মুদ্রণ>ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো>ভোটার গ্রহণ করবে ব্যালট।
কারাবন্দিদের তালিকাভুক্তি
তফসিল ঘোষণার পর কারা অধিদপ্তর তালিকা>বিভিন্ন কারাগারে পোস্টাল ভোট অ্যাপ লগ ইন>ই-কেওয়াসি ডিসক্লেইমার>ফেসিয়াল রেকগনিশন, লাইভলিনেস চেক>এনআইডি ভেরিফিকেশন> ঠিকানা, ওটিপি>তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন সম্পন্ন>ভোটার তালিকা মুদ্রণ>ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো>ভোটার গ্রহণ করবে ব্যালট।
ভোটারদের প্রতি ইসির নির্দেশনা ও সতর্কতা
সোমবার দলের সংলাপে পোস্টাল ব্যালটের অগ্রগতি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, “প্রবাসে সকল নিবন্ধিত ভোটারের কাছে যাবে সিম্বল ব্যালট। একটা নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি ভোটটা ‘কাস্ট’ করবেন না, যতক্ষণ না দেশে প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত না হচ্ছে। যে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করছে, এ তথ্যটা বলে দেওয়া হবে ভোটের আনুমানিক তিন সপ্তাহ আগে এটা (প্রতীক বরাদ্দ) হয়ে থাকে। উনি জানতে পারবেন, উনার আসনে কারা চূড়ান্ত প্রার্থী ও প্রতীক কী। এটা দেখে ভোট দেবেন এবং ডিক্লারেশন সাইন করবেন, দেশে পাঠাবেন।”
পুরো প্রক্রিয়াটা ডাক বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা থাকলে ভবিষ্যতে সুসংহত হবে।”
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতিটি ভোট আনা নেওয়া ও প্রিন্টের কাজ শেষ করতে ৭০০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করি, যেন এ ভোট নষ্ট না হয়। প্রবাসী ভোট দেওয়ার পর বাতিল হওয়া প্রার্থী আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলে ওই ভোট নষ্ট হয়ে যাবে।
প্রবাসে পোস্টাল ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করে সানাউল্লাহ বলেন, “কোনোভাবেই যেন গোপনীয়তা ভঙ্গ না করি। ঘোষণাপত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে, ভঙ্গ করলে আইনি ব্যবস্থা নেব।”