মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৭ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি

রোজ দিনাজপুর থেকে শতাধিক মেট্রিক টন টমেটো বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ

 প্রকাশিত: ১১:২৪, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

রোজ দিনাজপুর থেকে শতাধিক মেট্রিক টন টমেটো বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ

 দিনাজপুর সদর উপজেলার গাবুড়া বাজার টমেটোর রাজ্য থেকে  প্রতিদিন শতাধিক মেট্রিক টন টমেটো দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

দিনাজপুর জেলা শহর সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে গর্ভেশ্বরী নদীর পাড়ে গড়ে উঠা গাবুড়া বাজার নামক স্থানে পরিচিতি পেয়েছে টমেটোর হাট হিসেবে। হাটজুড়ে তো বটেই, গাবুড়া বাজারে রাস্তাঘাট এমনকি গৃহস্থ বাড়ির আঙিনায় ও অস্থায়ী আরতে বিক্রি হয় কৃষকদের উৎপাদিত  টাটকা  ও তাজা মুখোরচক  টমেটো।

সরেজমিন দিনাজপুর সদর উপজেলার গাবুড়া বাজারে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের উৎপাদিত টমেটো প্রতিদিন ভোর বেলায় ক্ষেত থেকে তুলে এ বাজারে নিয়ে আসা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন পাইকারেরা এ বাজারে তাদের পছন্দমত টমেটো কিনতে আসেন। পাইকারদের চাহিদা মত টমেটো কৃষকেরা তাদের জমিতে চাষ করে  তাদের  কাছে সরবরাহ করে থাকে। জনশ্রুতি রয়েছে ঢাকা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে দিনাজপুরে গাবুড়া বাজারে টমেটো নামে ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে। এখানকার টমেটেরা রাজধানী ঢাকার নামি-দামি চাইনিজ হোটেল ও রেস্তোরাঁ গুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছ। ওইসব হোটেলে গ্রাহকদের কাছে সব ধরনের খাবারের সাথে বিশেষ করে সালাদ হিসেবে ক্রেতাদের নিকট খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ওই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ও মতিউর রহমান জানান, তাদের জমিতে উৎপাদিত টমেটো কৃষি বিভাগের মাঠ প্রদর্শনীতে বিভিন্ন জেলার প্রশিক্ষণাথীদের সরেজমিন মাঠে নিয়ে  গিয়ে দেখানো হয়। প্রতিবছর এ এলাকার টমেটোর চাহিদা বেড়েই চলছে।

টমেটো চাষীরা জানান, যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না, সে সময় এ এলাকার উৎপাদিত  টমেটো ফালগুন ও চৈত্র মাসে বাজারে চাহিদা না থাকার কারণে জমিতে নষ্ট হয়ে  যেতো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার ফলে মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সারা বছর টমেটোর চাহিদা ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে।  

ওই বাজারের আরতদার মফিজুল ইসলাম ও সোলাইমান আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, যুগের পরিবর্তনের সাথে এখন আধুনিক পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের খাচায় টমেটো ভরে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে। এতে করে সরবরাহ করা টমেটোর কোন ক্ষতি হয় না ও মান ভালো থাকে। ফলে এখানকার সরবরাহ করা টমেটো যেসব পাইকারিরা নিয়ে যায় তারা সহজেই বাজারজাত করতে পারে।
পাইকারদের ব্যবসায় মুনাফা ভালো হয়। এভাবেই এখানকার টমেটোর বাজার সারা দেশের সুনাম অর্জন করেছে।  

দিনাজপুর হটিকালচার বিভাগের সরকারী পরিচালক কৃষিবিদ ফয়জার রহমান জানান, দিনাজপুর সদর উপজেলার গাবুড়া  বাজার  এ যেন এক টমেটোর রাজ্য। প্রতিদিন এ বাজারে গিয়ে দেখা যায় , চারিদিকে লালরঙা টমেটোয় ছেয়ে গেছে এ হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল  ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, গাজীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কক্সবাজারসহ সারাদেশ থেকে পাইকারেরা আসেন টমেটো কিনতে। টমেটো সাধারণত শীতকালীন রবি মৌসুমের ফসল হলেও দিনাজপুরে খরিপ-১ মৌসুমেও আগাম টমেটোর চাষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে কৃষক আমন ধান কাটার পরে বোরো ধান না লাগিয়ে টমেটো চাষ করছেন।

তিনি জানান, এ অঞ্চলে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী রাণী ও পভলিন সিট জাতের টমেটোর সরবরাহ বেশি। পাইকাররা টমেটো কিনে আড়তে ঢালছেন। প্রতিটি আড়তে ১০-৩০ জন শ্রমিক টমেটো বাছাই করে ক্যারেটে (ঝুড়ি) ভরছেন। কেউ ট্রাকে মাল তুলছেন, কেউ চাষিদের কাছ থেকে মাল বুঝে নিয়ে টাকা পরিশোধ করছেন।

এখানকার ক্ষেতের টমেটো সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে টমেটো  উৎপাদনের মর্যাদা বাড়িয়েছে দিনাজপুর অঞ্চলকে। খাদ্যের জেলার হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চল এখন টমেটো উৎপাদন ও সুখ্যাতি বেড়েছে।

মন্তব্য করুন: