গণভোট নিয়ে করণীয় কী: অধ্যাদেশের অপেক্ষায় ইসি
সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের ঘোষণা সরকারের তরফে এলেও এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে অধ্যাদেশ জারির অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার বিকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন এ কথা বলেন।
এদিন বিকালে চতুর্থ দিনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে কমিশন।
এ নিয়ে চার দিনে ৪৮টি দলের সঙ্গে মত বিনিময় করা হল।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেনে, “অধ্যাদেশটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। কিন্তু রাজনীতিবিদরা অনেক জিজ্ঞাসা করছেন, কীভাবে করবেন, কীভাবে এগুলোর জবাব দেবেন, কতটা বাক্স করবেন। এগুলোর সব চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা অধ্যাদেশটা হওয়ার পর।”
‘নির্বাচন নিয়ে কম অভিজ্ঞা হয়নি’
৭৩ বয়সী সিইনি ‘সৌভাগ্যের’ কথা তুলে ধরে বলেন, “বয়স হওয়ার পর থেকে দেশের রাজনীতিকদের দেখে আসছি। ছাত্র অবস্থায় মান্না ভাইকে পেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হিসেবে। স্যারের (মঈন খান) সঙ্গে তো চাকরিই করেছি।
“রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ডিল করতে করতে এবং এ দেশের নির্বাচন দেখতে দেখতে, পাকিস্তান আমল থেকে দেখে এসেছি, বেসিক ডেমোক্রেসি থেকে সব কিছু।”
সিইসি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আমাদের কম অভিজ্ঞতা হয়নি; যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুধু আমাদের উচিত হবে, দেশের আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বাস্তবতাটা মেনে নিয়ে চিন্তাভাবনাটা করা।”
রাজনৈতিক বাস্তবতা কী, তা রাজনীতিকরা জানেন বলে মন্তব্য করেন সিইসি।
নাসির উদ্দিন বলেন, “আমি আর খোলাসা করে বলতে চাই না। এগুলোর হিটওয়েব আমি ফিল করি এখানে বসে। রাজনৈতিক বাস্তবতার হিটওয়েবটা আমাকে ফিল করতে হয়। কারণ, এটা খুব মসৃণ বাস্তবতা নয়। সামাজিক বাস্তবতাও সেরকম। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই আমাদেরকে এগোতে হচ্ছে।”
‘বাস্তবতা বিবেনচায় সিদ্ধান্ত’
নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “এমন নয় যে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে, আপনাদেরও যদি এখানে বসিয়ে দিই, এগুলোকে উপেক্ষা করে যাওয়া সম্ভব নয়। বাস্তবতা যেটা আছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে আপনাকে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুত নিতে হবে। বাস্তবতাটা পুরোপুরি উপেক্ষা করা না সম্ভব নয়।”
গেল বছর সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু হয়। আর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম, যারা অক্টোবরে সুপারিশ জমা দিয়েছে।
সেই সুপারিশ পাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সিইসি বলেন, “সবকিছু যদি ঐকমত্য কমিশনের জন্য বসে থাকতাম, আমি জানি না নির্বাচন আদৌ করতে পারতাম কিনা।”
তিনি সিইসি বলেন, “গণভোটের কথা এসেছে। আগে আইনটা তো হতে হবে। ওখানে বলা আছে, ঘোষণার মধ্যে বলা আছে, একটা আইন হবে, যেটা ইলেকশন কমিশনকে অথরাইজড করবে, প্রেসক্রাইব করে দেবে, কী বিষয়ে গণভোট হবে, কীভাবে হবে ইত্যাদি।”
সবশেষ ১৯৯১ সালের গণভোট আইনের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “ওই আইনটা তো হতে হবে। ওই আইনটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার।
“সব চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা ওই আইনটা হওয়ার পরে। এর আগে তো আমি জানি না, হোয়াট কোর্স ইট উইল টেক।”
এদিন দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সংলাপে অংশগ্রহণ করা বাকি চারটি দল হলো—গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাসদ মার্কসবাদী।