ঢাকা এখন পোস্টারে ঢাকা
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম পোস্টারবিহীন সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, কিন্তু তফসিল ঘোষণার তিন সপ্তাহ আগে রাজধানীর পথ-ঘাট দেখে তা বোঝার উপায় নেই।
ধানমন্ডি এলাকার একাংশ ঢাকা-১০ আসন; আরেক অংশ ঢাকা-১৩ আসনে পড়েছে। ধানমন্ডি-২৭ এর আই-হাসপাতালের পাশে দাঁড়াতেই দেখা গেল অলিগলির দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, বাসার গেইট––সবখানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের রঙিন পোস্টার।
বুধবার সকালে ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকার ছোট এক গলির মধ্যেই দেখা গেল ‘সর্বস্তরের জনগণ’-এর নাম দিয়ে ঢাকা-১৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মোবারক হোসাইন, ঢাকা-১০ আসনে খেলাফত মজলিশের মুফতি ইলিয়াস হামিদী, বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সিপিবির শংকর আচার্য, জামায়াতের জসীম উদ্দিন সরকারের রঙিন পোস্টার সাঁটানো হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে ডিসেম্বরে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়েছে। আগাম প্রচারের ডামাডোলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন পোস্টারে পোস্টারে।
এ ধরনের আগাম পোস্টার সরাতে রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনুরোধ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
গত ১১ নভেম্বর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি’ জারি করেছে ইসি। সেখানে পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
১৩ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর সময় সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা চেয়ে বলেছেন, “আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলুন, কমিশন এবার কঠোরভাবে আচরণবিধি বাস্তবায়ন করবে।”
সংলাপের শেষ ধাপে বুধবার নির্বাচন কমিশন বসতে যাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ১৩টি দলের সঙ্গে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ অক্টোবর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এবং ৩০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের আচরণবিধি প্রতিপালন, পোস্টারসহ প্রচার সামগ্রী অপসারণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বলা হয়, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পূর্বেই সম্ভাব্য প্রার্থী কর্তৃক ব্যবহৃত পোস্টার, দেয়াল লিখন, ব্যানার, বিলবোর্ড, গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী অপসারণ বা এরূপ কার্যক্রম রোধে ‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’ বা প্রচলিত আইনের বিধান অনুসারে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।”
সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধিদপ্তর/দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে তা বাস্তবায়ন করতে বলেছে ইসি।
নির্বাচন কশিমনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে।
“তফসিল ঘোষণা হলে আমরা কঠোরভাবে আচরণবিধি প্রতিপালনের ব্যবস্থা নেব। আমরা দলগুলোকে অনুরোধ করছি, তারাও রেসপন্স করছে, তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে উনারা সহযোগিতা করবেন, পোস্টার সরিয়ে নেবেন। এরপরেও যদি না হয়, সরকারের ব্যবস্থা রয়েছে, মোবাইল কোর্ট রয়েছে। এগুলো রিমুভ করতে হবে।”
তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে ভিজিলেন্স ও অবজারভেশন টিম থাকবে মাঠ পরিস্থিতি দেখতে। মনিটরিং টিম ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেল থাকবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি রক্ষায়। পাশাপাশি ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক টিম থাকবে। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি টিম থাকবে, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে, তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন। এক্সিকিউটিভ মাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন; আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য তাৎক্ষণিক সাজা ও জরিমানার ব্যবস্থা করবেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্গন করলে প্রার্থী হওয়ার পরে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আইনে। আরপিও অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচার চালাতে পারেন।
আচরণবিধি অনুযাযী, প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। আর দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। প্রয়োজনে তদন্ত করে আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিলেরও ক্ষমতা রয়েছে ইসির।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার ২৪-৪৮ ঘণ্টা আগে সম্ভাব্য প্রার্থদের স্বউদ্যোগে পোস্টার, ব্যানার ও প্রচারসামগ্রী সরাতে বলা হবে। স্থানীয় সরকারও এসব প্রচার সামগ্রী সরানোর উদ্যোগ নেবে। তাতেও কাজ না হলে প্রার্থদের সতর্ক করা হবে। না মানলে প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেবে ইসি।
বুধবার সংলাপ যাদের
ধারাবাহিক সংলাপে বুধবার ১৩টি দলের সঙ্গে বসবে নির্বাচন কমিশন।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ হবে।
দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি – বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বাসদ মার্কসবাদীর সঙ্গে সংলাপ রয়েছে।
নির্বাচন ভবনে এ সংলাপে নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত থাকবেন।
