সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার দশ ঘণ্টা পর দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
বুধবার ভোরে তাকে স্ত্রীর জিম্মায় বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল আলম জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “উনি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই সভাপতি-সেক্রেটারির নাম ব্যবহার করেছিলেন।
"পরে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারিকে ডেকে আনি এবং বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি হওয়ায় ভোরবেলা সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে বাসায় দিয়ে আসা হয়েছে।"
সোহেল নিজেও ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিবি অফিস থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) সংবাদ সম্মেলন পণ্ড করার জন্য ‘সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায়’ তাকে আটক করা হয়েছিল, কারণ তিনি ওই সংগঠনের মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া একজনকে মধ্যরাতে গ্রেপ্তার কেন করা হল জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এই জিনিসটা আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। ইনভেস্টিগেশন করার পরে বলতে পারব।"
‘ডিবি’ পুলিশ পরিচয় দিয়ে পাঁচ ব্যক্তি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নতুন বাড্ডার বাসা থেকে মিজানুর রহমান সোহেলকে তুলে নিয়ে যায়।
তার স্ত্রী সুমাইয়া সীমার ভাষ্য, “ওই পাঁচজনের একজন নিজেকে আশরাফুল পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে চান। এজন্য তাকে নিতে এসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তাকে ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়া হবে।’”
সোহেল সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজম (সিটিজে) নামে ঢাকার তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের সহসভাপতি।
ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ আহমাদ রাতে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিটের সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় বলেন, “রাত ১২টার পর তাকে (সোহেল) বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা শুধু উদ্বেগের নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। ডিবিপ্রধান ঘটনাটি স্বীকার করলেও এত গভীর রাতে একজন সাংবাদিককে কেন এভাবে নেওয়া হল, তার স্বচ্ছ ব্যাখ্যা অত্যন্ত জরুরি।”
ছাড়া পাওয়ার পর বুধবার সকালে সোহেল এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, ‘বিনা অপরাধে’ প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে রাথার পর তাকে ‘সসম্মানে’ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “গত রাত ১২টার দিকে ডিবি প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন, এই অজুহাতে ৫/৬ জন ডিবি সদস্য জোর করে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় আমার নাম লেখা হয়। জুতা-বেল্ট খুলে রেখে গারদে আসামিদের সাথে আমাকে রাখা হয়।
“কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো? তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। আমার সাথে সংগঠনের (এমবিসিবি) সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়।”
ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নিয়ে বুধবার ডিআরইউতে এমবিসিবির সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল জানিয়ে সোহেল লিখেছেন, “সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস, যে উদ্দেশ্যে তারা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে চাইল, সেটা দেশের সবাই জেনে গেল।”
তার অভিযোগ, “দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনও রয়েছে। অথচ মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙ্গে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুল-বন্ধু।”
সোহেল লিখেছেন, “একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হল? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?”
