বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২৯ ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলুন, দলগুলোকে সিইসি

 প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলুন, দলগুলোকে সিইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।

ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে সব ধরনের আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ‘কোনো ছাড় দেওয়া হবে না’। এছাড়া ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় দেখতে চান মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “মূল প্লেয়ারদের সহযোগিতা না পেলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়ে যাবে।”

এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন নাসির উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের শুরুত্বে সভাপতি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য দেন সিইসি। এসময় প্রথম পর্বে ডাক পাওয়া ছয়টি দলের প্রতনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০ থেকে ১২টার মধ্যে সংলাপে ডাকা হয়েছে- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে।

নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা আনন্দিত। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। এ ধরনের আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

বিলম্বে সংলাপের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেছেন সংলাপের পরিকল্পনা আগে নেওয়া হলেও, এর মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘদিন আলোচনা চলেছে। যে আলোচনায় সবার ব্যস্ততা গেছে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে। অনেক সুপারিশের সাথে ইসি একমত, অনেক সুপারিশেরর বিষয়ে ইসি মন্তব্যও দিয়েছে বলে জানিয়েছেন নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “এসব ঐকমত্যের প্রয়োজন। সরকারের ঐকমত্য কমিশন দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন প্যারালাল আরেকটা আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে না ইসি। একই দলের সঙ্গে দ্বৈত আলোচনা হলে নানা মন্তব্যও আসবে। এজন্য আমরা অপেক্ষা করেছিলাম, এজন্য সংলাপ পিছিয়ে গেছে”

“আচরণবিধির বিষয়ে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়, তখন দলসহ নানা মতামত পেয়ে তা ইনকরপোরেট করা হয়েছে। ৩ নভেম্বর আরপিও হয়েছে। আচরণবিধিও জারি হয়েছে সোমবার। এরপরই আলোচনা শুরু হয়।”

এবার পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট নেওয়া, এআই অপব্যবহার রোধসহ নানা ধরনের কাজের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “অনেকগুলো এক্সট্রা বার্ডেন এসে গেছে। সব নিয়েই এগোতে হচ্ছে, নানা ধরনের যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।”

পোস্টার সরান, সহযোগিতা না করলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে ইসি

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, “দেখুন, খেলবেন আপনারা। আপনার প্লেয়ার, আমরা রেফারির ভূমিকায়। প্রকৃত অর্থে একদম নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় থাকতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া রেফারির কাজ করা বড় মুশকিল। সুষ্ঠুভাবে খেলা পরিচালনা করা মুশকিল। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, জাতির কাছে আমরা সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনেউপহার দিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই এ উপহার দিতে হবে।”

দলগুলোর সহায়তা না পেলে ভোট ‘প্রশ্নবিদ্ধ হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাসির উদ্দিন বলেন, “মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। কারণ, মূল প্লেয়ারদের সহযোগিতা না পেলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়ে যাবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে পেতে চাই, আমাদের চেষ্টার মধ্যে সঙ্গে পেতে চাই। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন, আপনারা অন্যভাবে নেবেন না। যখনই একটা দল রেজিস্ট্রেশন পাবে ইসির, গেজেট করব যখন, এখন নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫৪টা। এসব দল বড় ছোট নেই ইসির কাছে।

“সব দলই আমাদের কাছে সমান, সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাই। বড় ছোট মাপার ক্রাইটেরিয়া আমাদের কাছে নেই। আমাদের কাছে যারা নিবন্ধিত, সবাই আমাদের কাছে সমান। মূল্যবান মতাত, পরামর্শ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখব, গ্রহণযোগ্য হলে আমাদের উপকার হবে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও পরে-এই পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা দরকার হবে।

ভোট ঘিরে ইতোমধ্যে ঢাকাশহর পোস্টারে ছেয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

সিইসি বলেন, “এখন ঢাকা শহরে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অলরেডি পোস্টার লাগিয়ে ফেলেছে। অথচ আমরা পোস্টার নিষিদ্ধ করেছি। আমরা গণমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। এগুলো সরাতে হবে। এ ধরনের পোস্টার মেনে নেব না। আগেভাগে জানিয়ে দিচ্ছি-যারা পোস্টার লাগিয়েছেন দয়া করে নিজেরা সরিয়ে ফেলেলেন। এটা হবে ভদ্র আচরণ। আর যাতে কেউ পোস্টার লাগাবেন না।”

প্রকাশিত আচরণবিধি এখন থেকে মানার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

“আচরণবিধি প্রকাশ হয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী বিহেভ করবেন। যে দল এটা করবেন না আমরা মনে করবো, নিয়ত সাফ নয়। কারণ, এসব ক্ষেত্রে আমরা স্পেয়ার করবো না। যেখানে ব্যত্যয় ঘটবে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো, যখন তফসিল ঘোষণা করবো। আশা করবো, ভদ্রোচিতভাবে এসব সরিয়ে ফেলা, আর না লাগানো।”

দলগুলোকে সাথে পেতে চাই এবং সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা চান সিইসি।

অনেক অতিরিক্ত দায়িত্বে ইসি, তার উপরে এসে গেছে গণভোটে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নেওয়া, সরকারি কর্মকর্তা ও কারা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ভোট নেওয়াসহ বিভিন্ন কাজের বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তুলে ধরেন সিইসি।

এর সঙ্গে গণভোটের বিষয়টি ‘অফিসিয়িালি না জানলেও’ কাজের পরিধির কথা তুলে ধরেন তিনি।

“সুন্দর জাতীয় নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য আপনাদের সাথে পেতে চাই। আমাদের অনেকগুলো অতিরিক্ত দায়িত্ব এসে পড়েছে- আউট অব কানিট্র ভোটিংয়ের দিকে যাচ্ছি, নির্বাচনি কাজে জড়িতদের ভোটের ব্যবস্থা, সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা...। আরেকটি বিষয় খুবই আলোচনায় আছে যে রেফারেন্ডাম একটা বিষয়, এখনো অফিসিয়ালি আমরা কিছু জানি না। কিন্তু আলোচনা যা দেখতেছি, এইটাও যদি আমাদের আমাদের ওপর এসে পড়ে! এমনিতেই তো এক ধরনের বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে, একটি বিশেষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে।”

মুসিবত মোকাবিলা করতে হবে

নাসির উদ্দিন বলেন, “এখন পরিস্থিতি একটা ভিন্নধর্মী আপনারা সবাই জানেন। আপনারা সবাই জানেন। আমার বুঝিয়ে বলার দরকার নাই। সুতরাং এরমধ্যে এই নির্বাচন করতে গিয়ে অনেকগুলো জিনিস কিন্তু আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আপানাদের সহযোগিতা এখন অধিকতর প্রয়োজন। নরমাল ইলেকশনে আপনারা যতটুকু সহযোগিতা করেন, এই ইলেকশনে আপনাদের আরও বেশি সহযোগিতা লাগবে। কারণ এক্সট্রা বার্ডেন এসে গেছে। অনেকগুলো এক্সট্রা বার্ডেন এসে গেছে। যেটা নরমালি আগের ইলেকশন কমিশনের কাঁধে ছিল না। ”

সোশাল মিডিয়ার অফব্যবহারের বিষয়টিকে ‘মুসিবত’ বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি।

“এ মুসিবত, এআই অপব্যহার করে বোগাস জিনিস ছুড়ে দেওয়া আগে ছিল না।...যুদ্ধ কত ফ্রন্টে করতে হচ্ছে আমাদের। কতটা ফ্রন্ট্রে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া পারবো না। আপনাদের সহযোগিতা চাই।”

দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের সঙ্গে সংলাপে বসার কথা রয়েছে ইসির।

ভোটার তালিকা, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা, পর্যবেক্ষক সংস্থা ও দল নিবন্ধনসহ আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি সেরে শেষ ধাপে শুরু হল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ।