কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ. লীগ ঘোষিত ‘লকডাউন’ ঘিরে চাপা আতঙ্ক
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান দেখা গেলেও, স্বাভাবিক দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহন চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তাদের চোখে-মুখে শঙ্কার ছাপ স্পষ্ট।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ নির্ধারণ করবেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
সরেজমিনে রাজধানীর ফার্মগেট, খামারবাড়ি, মহাখালী ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের সকালেও সড়কে যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। রাস্তায় যাত্রীও অনেক কম। যারা বের হয়েছেন, তাদের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। যাত্রীর অভাবে টার্মিনালগুলো থেকেও দূরপাল্লার বাস কম ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট দলে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, মালিকদের পক্ষ থেকে বাস বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা নেই। তবে চালক ও সহকারীরা আতঙ্কের কারণে রাস্তায় নামতে অনীহা প্রকাশ করছেন। যারা বাস নিয়ে বের হয়েছেন, তারাও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
রাজধানীর বিজয় সরণি থেকে ভূঁইয়া পরিবহনের একটি বাসে কুর্মিটোলার উদ্দেশে যাত্রাকালে দেখা যায়, হেলপার যাত্রীদের বারবার সতর্ক করছেন। জানালা বন্ধ রাখতে অনুরোধ করছেন সবাইকে।
হৃদয় নামের ওই হেলপার বলেন, আজকে রাস্তায় বাস কম, যাত্রীও কম। সবাই ভয়ে আছে। জানালা বন্ধ রাখতে বলছি যেন কেউ পেট্রোল বোমা না ছুড়তে পারে।
খামারবাড়ি মোড়ে ভিআইপি পরিবহনের চালক রাসেল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, “মালিকরা বাস বের করতে বললেও অনেকে ভয় পাচ্ছে। কারণ কিছু হলে চালকই মরবে, মালিকের তো শুধু বাস যাবে। তাছাড়া আজকে যাত্রীও কম।”
রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল কম হলেও কর্মজীবীরা বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। গণপরিবহন কম থাকায় তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে, আবার ভিড়ের মধ্যে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ভূঁইয়া পরিবহনে শ্যামলী থেকে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলেন ফিজিওথেরাপি মেডিকেলের শিক্ষার্থী মো. সুমন হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছিলাম না। রাস্তায় বাস কম, যাত্রী বেশি। পরে ভিড় ঠেলে কোনো মতে উঠেছি।
মিরপুর থেকে অছিম পরিবহনে করে বাড্ডা যাচ্ছিলেন দোকানকর্মী মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে ককটেল বিস্ফোরণ আর বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছে। অনেকে ভয় পেয়ে বেরই হচ্ছে না। কিন্তু চাকরি করি, যেতে হয়। ভয় তো আছেই।”
খামারবাড়ি মোড়ে দায়িত্ব পালনরত ডিএমপির ট্রাফিক সহকারী মাহমুদ হাসান বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচির কারণে সড়কে যানবাহন ও যাত্রী কম। অনেকেই ভয়ে গাড়ি বের করছে না। আবার অনেক স্কুল-কলেজ বন্ধ। তবে বেলা বাড়লে ধীরে ধীরে গাড়ি বাড়ছে।
এদিকে লকডাউন ঘিরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, মেট্রোরেল স্টেশন, নৌ ও বাস টার্মিনালসহ সব গণপরিবহন কেন্দ্রে কঠোর নজরদারি চলছে। বিশেষ করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলস্টেশন ও উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল রুটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ১৩ নভেম্বর ঘিরে আতঙ্কের কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ককটেল বিস্ফোরণ এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ও ঝটিকা মিছিল করতে গিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।