বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, বৈশাখ ১৮ ১৪৩২, ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রামে ক্লিনিক খুলে চিকিৎসা, এমবিবিএস পরিচয়ে প্রতারণা — ভুয়া ডাক্তারকে এক বছরের কারাদণ্ড

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

গ্রামে ক্লিনিক খুলে চিকিৎসা, এমবিবিএস পরিচয়ে প্রতারণা — ভুয়া ডাক্তারকে এক বছরের কারাদণ্ড

দশ বছর ধরে এমবিবিএস পরিচয়ে চিকিৎসা, শেষমেশ ভুয়া প্রমাণিত হয়ে এক বছরের জেল

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ‘এমবিবিএস চিকিৎসক’ পরিচয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে রোগী দেখে আসছিলেন মো. রেজাউল করিম। অবশেষে ভুয়া চিকিৎসক সেজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাইনুল ইসলাম খান অভিযান চালিয়ে এ রায় ঘোষণা করেন।

‘মায়ের দোয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে পশ্চিম সাতলা গ্রামে পরিচালিত ওই ক্লিনিকে দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে আসছিলেন রেজাউল করিম। অথচ তিনি শুধুমাত্র দাখিল (মাদ্রাসা স্তর) পাস করেছিলেন।

উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, কয়েক দিন আগেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুমি রানী মিত্র ওই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়মের প্রমাণ পান এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো মেডিকেল ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও রেজাউল করিম শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা নয়, বরং জটিল রোগ নির্ণয় ও অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করে আসছিলেন। এলাকাটি দূর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এবং প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় এতদিন কেউ মুখ খুলতে পারেনি।

রেজাউল করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’

তবে অভিযানের সময় তাঁর কাছে ‘চার্টার অব অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব ইন্ডো অ্যালোপ্যাথি অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন’ নামক একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সনদ পাওয়া যায়, যেটি অনুসন্ধানে ভুয়া প্রমাণিত হয়। ক্লিনিকে রোগীদের তথ্য রেজিস্টার, ব্যবস্থাপত্র কিংবা অর্থ গ্রহণের কোনো প্রামাণ্য রসিদও পাওয়া যায়নি।

উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আগে দুবার তদন্ত করে তাঁকে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। বিএমডিসি’র অনুমোদন ছাড়া কেউ নিজেকে চিকিৎসক দাবি করতে পারেন না, এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল ইসলাম খান বলেন, “তাঁর দেখানো সনদ যাচাই করে বৈধতা পাওয়া যায়নি। যেহেতু এমবিবিএস ডিগ্রি নেই, তিনি ভুয়া চিকিৎসক। তাই আইন অনুযায়ী এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”

উজিরপুর মডেল থানার ওসি আবদুস সালাম জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।