শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সীতাকুণ্ড ডিপো থেকে হাসপাতাল, পরিস্থিতি বিভীষিকাময় 

 প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৫ জুন ২০২২

সীতাকুণ্ড ডিপো থেকে হাসপাতাল, পরিস্থিতি বিভীষিকাময় 

সীতাকুণ্ডের বিএম কনেটেইনার ডিপোতে শনিবার লাগা আগুন ১৩ ঘণ্টা পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আগুনের উৎস সম্পর্কে বলতে না পারলেও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা,  গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডস্থ বিএম কন্টেইনার ডিপোতে একটি দাহ্য পদার্থের কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।  

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ডিপো এলাকার পাঁচ কিলোমিটার প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। 

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, প্রায় ২৬ একর আয়তনের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট সেখানে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩০ কর্মী ও পুলিশের ১০ সদস্য আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন চার শতাধিকের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা গুরুতর। 

এর মধ্যে সব মিলে ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে। এর মধ্যে ৫ জন হলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। 
 
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই আহতদের আর্তনাদে এলাকায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রথমে স্থানীয়রা এবং ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট অগ্নিনির্বাপনে যোগ দেয়। অবস্থা বেসামাল দেখে কুমিল্লা থেকেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সীতাকুণ্ডে আসে। রাত একটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পানি সংকট সৃষ্টি হয়। পরে বিভিন্নভাবে পানি যোগাড় করে তারা আবার আগুন নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েন। 

রাত সাড়ে তিনটার দিকে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ শুরু হলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নিরাপদ স্থানে সরে যান। ভোর থেকে তারা আবার বিভিন্ন কনটেইনার ও কনটেইনারবাহী লরিতে লাগা আগুন নির্বাপনে কাজ শুরু করেছেন। 

অন্যদিকে, আহতদের বিভিন্ন গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সকল স্তরের চিকিৎসকদের দগ্ধ ও আহতদের সেবায় কাজ করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার আহবান জানান।

বিভিন্ন টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, গাউছিয়া কমিটিসহ বিভিন্ন সেচ্ছ্বাসেবী সংগঠনের কয়েক হাজার মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় জমান। সময়ের সাথে সাথে আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সিভিল সার্জনের আহবানে সরকারি-বেসরকারি সকল এম্বুলেন্স সীতাকুণ্ডে গিয়ে আহতদের পরিবহনে লেগে পড়ে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী মধ্যরাতেই
চমেক হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সকল পর্যায়ের ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। 

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, আগুন লাগার পর তাদের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদেরকে কনটেইনারে দাহ্য পদার্থ থাকার কথা জানানো হয়। তাদের বলা হয়েছিল, ওই কনটেইনারে গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে। এ কারণেই তারা আগুন নেভাতে পানি ছিটিয়েছিলেন। দাহ্য পদার্থের বিষয়ে অবগত হলে তারা পানির পরিবর্তে ফোম ব্যবহার করতেন। এতে বিস্ফোরণ ঘটতো না এবং ক্রমান্বয়ে এতগুলো কনটেইনারে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তে পারতো না।

এদিকে, আহত ও নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে মেডিকেলের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। রক্ত দেয়ার জন্য সেচ্ছ্বাসেবীরা চমেক ব্লাড ব্যাংকে ভিড় করে আছে। 

মন্তব্য করুন: