শনিবার ২২ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর আবার ভূমিকম্প ভূমিকম্পে ফাটল ধরা ভবনে আবার কম্পন, আতঙ্কিত শ্রমিকদের বিক্ষোভ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দুইটি সমঝোতা স্মারক সই নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন ‘চ্যালেঞ্জিং’: সিইসি সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে, ইসিকে সরকারের চিঠি দিনাজপুরে মিনিবাস-অটোরিকশা সংঘর্ষ, নিহত ৪ সোমালিদের অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা বাতিলের ঘোষণা ট্রাম্পের ফের ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ নরসিংদীতে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৫ এবার রেকর্ড সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট দেখবে যুদ্ধবিরতিতেই গাজায় অন্তত ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে: ইউনিসেফ হোয়াইট হাউসে উষ্ণ সাক্ষাতে মামদানিকে প্রশংসায় ভাসালেন ট্রাম্প ভিয়েতনামে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা কুষ্টিয়ায় ‘আধিপত্যের জেরে’ কৃষককে গুলি করে হত্যা ৫.৭ মাত্রার ঝাঁকুনি দিল ‘বড় বিপর্যয়ের’ সতর্কবার্তা

ইসলাম

সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার ১০ অমুসলিম দেশ

 প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২১ নভেম্বর ২০২৫

সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার ১০ অমুসলিম দেশ

বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মানচিত্রে এমন অনেক স্থান রয়েছে, যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও গড়ে তুলেছেন নিজেদের স্বতন্ত্র সমাজ ও সংস্কৃতি। কোথাও তারা শতবর্ষের ঐতিহ্যের ধারক, আবার কোথাও আধুনিক নগরজীবনের উজ্জ্বল অংশ। ধর্মীয় বৈচিত্র্যের মধ্যেও এসব দেশ আজ মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর একটি—তবু দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। চলুন পরিচিত হই সেইসব দেশের সঙ্গে, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলমান বসবাস করে।

. ভারত

দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল দেশ ভারতে প্রায় ২০ কোটির বেশি মুসলমান বাস করেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ—পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। মুঘল সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আজও তাজমহল, লালকেল্লা, উর্দু সাহিত্য, কওয়ালি সংগীত এবং নানা খাদ্যসংস্কৃতিতে জীবন্ত। কাশ্মীর থেকে দিল্লি, লখনউ থেকে কলকাতা—ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে মুসলমানদের অবদান বহুমাত্রিক।

. ইথিওপিয়া

আফ্রিকার শিং নামে পরিচিত ইথিওপিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন কোটির মতো মুসলমান বাস করেন (প্রায় ৩৩%)। ইসলামের ইতিহাসের প্রথম হিজরতের স্মৃতি এই দেশকে বিশেষ মর্যাদা দেয়। ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছিলেন খ্রিষ্টান রাজা নাজ্জাশী। দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে মুসলমানদের ঘনবসতি এবং নাজাশী মসজিদ এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করে।

. চীন

চীনে মুসলমানদের সংখ্যা দেড় থেকে চার কোটি বলে অনুমান করা হয় (১.১%–৩%)। হুই, উইঘুর, সালার, কাজাখসহ নানা জাতিগোষ্ঠীর মুসলমানরা এখানে বসবাস করেন। হুইরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও উইঘুররা মূলত জিনজিয়াং অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত, যাদের সংস্কৃতি মধ্য এশীয় বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। প্রাচীন সিল্ক রুটের মাধ্যমে ইসলাম চীনে পৌঁছায় এবং আজও বহু ঐতিহাসিক মসজিদ সেই ইতিহাসের সাক্ষী।

৪. রাশিয়া

ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত রাশিয়ায় প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি মুসলমান (১০%–১৩%) বসবাস করেন। তাতারস্তান, বাশকোর্তোস্তান এবং ককেশাস অঞ্চলে মুসলিম বসতি বহু শতাব্দী পুরোনো। দেশটিতে ইসলাম রাষ্ট্রস্বীকৃত চারটি ধর্মের একটি। জাতিগত বৈচিত্র্য, বিভিন্ন ভাষা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে রাশিয়ার মুসলমানরা একটি শক্তিশালী বহুসাংস্কৃতিক সমাজ গড়ে তুলেছেন।

৫. তাঞ্জানিয়া

তাঞ্জানিয়ায় প্রায় দুই কোটির মতো মুসলমান (প্রায় ৩৩%) বাস করেন। ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যপথ ধরে আরব ও পারস্য বণিকদের মাধ্যমে ইসলাম এখানে ছড়িয়ে পড়ে। জানজিবার দ্বীপ বিশেষভাবে ইসলামিক সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সুয়াহিলি ভাষা, স্থাপত্য ও দৈনন্দিন জীবনে ইসলামি প্রভাব স্পষ্ট।

৬.আইভরি

পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ (মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০%)। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, প্রশাসনসহ সমাজের নানা খাতে মুসলমানদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। সুফি তরিকার প্রভাব এখানকার সামাজিক উৎসব, সংগীত ও শিল্পকলায় বিশেষভাবে দৃশ্যমান, যা মুসলিম সম্প্রদায়কে এক অনন্য ঐক্যবদ্ধ পরিচিতি দিয়েছে।

  1. ৭. ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো

ডিআর কঙ্গোতে প্রায় এক কোটি মুসলমান (প্রায় ১০%) বাস করেন। মূলত পূর্ব আফ্রিকা ও সুদান থেকে বাণিজ্যিক পথ ধরে ইসলাম এখানে পৌঁছায়। বিভিন্ন সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সুন্নী শাফেয়ী মাযহাব অনুসারী এই সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে স্থিতিশীলভাবে টিকে আছে।

৮. জার্মানি

জার্মানিতে প্রায় ৫০ লাখ মুসলমান (প্রায় ৭%) বসবাস করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তুরস্ক থেকে গেস্ট ওয়ার্কার হিসেবে আগত শ্রমিকরাই মূলত এখানকার মুসলিম জনসংখ্যার ভিত্তি। পরবর্তীতে সিরিয়া, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীরা এই কমিউনিটিকে আরও বৈচিত্র্যময় করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও শ্রমবাজারে তাদের অবদান দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

৯. ফ্রান্স

ফ্রান্সে প্রায় ৩৫–৪০ লাখ মুসলমান (প্রায় ৯%) বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই আলজেরিয়া, মরক্কোসহ উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত। শিক্ষা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে মুসলমানদের উপস্থিতি দৃশ্যমান হলেও দেশের কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মাঝে মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি করে—বিশেষ করে ধর্মীয় পোশাক ও প্রতীকের ব্যবহারে বিধিনিষেধ ঘিরে।

১০. যুপ্রায় ৩০ লাখের বেশি মুসলমান (প্রায় ৬.৫%) বাস করেন। বাংলাদেশের, পাকিস্তানের ও ভারতের বংশোদ্ভূত নাগরিকরাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারের মতো শহরগুলোতে তাদের দৃঢ় উপস্থিতি রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হালাল সংস্কৃতি থেকে রাজনীতি, সাহিত্য ও শিল্প—সব ক্ষেত্রেই মুসলমানদের অবদান উল্লেখযোগ্য।

এই দশটি অমুসলিম দেশের তথ্য-উপাত্ত দেখায় যে মুসলমানদের উপস্থিতি কেবল সংখ্যা নয়—ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সমাজের গভীরে তাদের প্রভাব ছড়িয়ে আছে। জাতিগত, ভাষাগত ও সামাজিক বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে আজকের বিশ্ব মুসলিম সমাজ আরও বিস্তৃত, সমৃদ্ধ এবং বহুরঙে উজ্জ্বল।