৫.৭ মাত্রার ঝাঁকুনি দিল ‘বড় বিপর্যয়ের’ সতর্কবার্তা
ঢাকার কাছে নরসিংদীতে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই যে ক্ষতির তথ্য আসছে, সেটা ৭ মাত্রার হলে কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা একবার কল্পনা করতে বললেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী।
সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প, এটা সেগুলোর একটি।”
এ অঞ্চলে এর চেয়ে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা যে রয়েছে, সেটা স্মরণ করে দিয়ে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পন হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হবে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভবন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকা এড়ানো হয়ত সম্ভব নয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে ভবনের মান পরীক্ষা করা, ঝুঁকির ভিত্তিতে সেগুলোকে আলাদা করা এবং নাগরিকদের সতর্ক করাসহ নিয়মিত মহড়া আয়োজনে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
শুক্রবার ছুটির দিনের সকালে দেশের মানুষ যে ভূমিকম্প দেখল, তার মাত্রা ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
রেলিং ধসে, দেয়াল ধসে, মাথায় ইট পড়ে এবং গাছ থেকে পড়ে এখন পর্যন্ত তিন জেলায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে; আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার কয়েক দশক ধরে ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আর্থজারভেটরির তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ঝুঁকির জায়গাটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভূমিকম্প, পাহাড়-পর্বত, অগ্নুৎপাত—সবই নিয়ন্ত্রিত হয় ভূত্বক গঠনকারী প্লেটগুলোর সঞ্চারণের ওপর।
পৃথিবীর উপরিভাগের ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পুরুত্বের লিথোস্ফিয়ার ছোট-বড় ১৩টি খণ্ড বা প্লেটে বিভক্ত। উত্তপ্ত ও নরম এস্থোনোস্ফিয়ারের ওপর ভাসমান থাকা এসব প্লেট গতিশীল।
দেশের উত্তরে আছে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল; পূর্বে বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল।
হুমায়ুন আখতার বলেন, “এবার ভূমিকম্পটা হয়েছে ইন্ডিয়া ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে, যেটা সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে যমুনা নদীর নিচে নেমে গেছে। এ সংযোগস্থলের উত্তর পূর্ব-কোণে ভূমিকম্পটা হল।”
তিনি বলেন, “৮ দশমিক ২ মাত্রার যে শক্তি, সেটা কিন্তু এখনো জমা হয়ে আছে। যে কোনো সময় দেখা যাবে, এরচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে গেছে।”
শুক্রবারের ঘটনাকে বড় ভূমিকম্পনের ‘ওয়েকআপ কল’ মন্তব্য করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “এটা (শক্তি) আনলকিং শুরু হয়েছে। এটা লকড অবস্থায় ছিল। মানে একটার সঙ্গে আরেকটা (দুই প্লেট) লেগে ছিল, আটকে ছিল।
আর বুয়েটের অধ্যাপক আনসারী শুক্রবারের ভূমিকম্পের কথা তুলে ধরে বলেন, “রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রায় যে ক্ষতি হয়েছে, ৭ মাত্রার হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে। ভবন ধসে পড়বে, হতাহত বাড়বে।
“ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বড় ভূমিকম্প হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতহাত হবে। ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে।”
বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছেন, দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে পড়ায় এখানে বড় ভূকম্পনের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া নদ-নদীর গতি পরিবর্তন হওয়ায় তা দেশে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
অতীত কী বলে
অধ্যাপক আনসারীর পর্যবেক্ষণ বলছে, এই অঞ্চলে গড়ে দেড়শ বছর পরপর ৭ মাত্রার এবং আড়াইশ থেকে তিনশ বছর পরপর ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
১৭৬২ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে ৭ থেকে সাড়ে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের নজির রয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই বিশ্লেষক বলেছিলেন, “শেষ এক-দেড়শ বছরে এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প হয়নি। এখন যে কোনো সময় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে; ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা এখন নেই। ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে একটা বড় ভূমিকম্প হবেই।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে ২৭টি ভূমিকম্প হয়েছে। এরপর ২০২২ সালে ১৯টি, ২০২৩ সালে ৩৫টি, ২০২৪ সালে ৫৪টি ভূমিকম্প হয়েছে।
এর মধ্যে ২০২১ সালে ৯টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ছিল সাতটি এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে উৎপত্তিস্থল ছিল দুটি।
২০২৪ সালে ১৩টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে কোনো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশে ছিল না।
বিগত কয়েক বছরে যেসব ভূমিকম্প হয়েছে, সেগুলো ছিল ২ দশমিক ৮ থেকে ৬ মাত্রার।
অধ্যাপক আনসারী বলেন, “এ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ১ মাত্রার একটা ভূমিকম্প হয়েছে, সেটা ১৮৯৭ সালে। এমন ভূকম্পনের শঙ্কা আড়ইশ থেকে তিনশ বছর পর পর আসে।”
১৯৩০ সালের পর থেকে এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি, কিন্তু গবেষণা অনুযায়ী সেটা হওয়ার শঙ্কা থাকার কথা বলেছেন এ বিশ্লেষক।
কোথায় ঝুঁকি বেশি
ভূতাত্ত্বিক গঠন বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক আখতার বলেন, দেশের মধ্যে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাব্য ফাটলগুলোর একটি পড়েছে সিলেট-মেঘালয় সীমান্তের ডাউকি ফল্টে। আরেকটি পড়েছে চট্টগ্রাম উপকূল বরাবর সীতাকুণ্ড-টেকনাফ ফল্টে।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সমতল ভূমিতে অসংখ্য ফাটল রয়েছে, যা থেকে ভূমিকম্প হতে পারে। ঢাকার পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ—চারপাশেই ভূমিকম্প সৃষ্টির মত ফাটল রয়েছে।
২০১৬ সালে প্রকাশিত নিজেদের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইন্ডিয়া ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যে ‘সাবডাকশন জোন’, সেটি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়ে আছে। আমরা বলেছি, যে কোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে।”
এ অধ্যাপকের ব্যাখ্যায়, ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি হওয়ার মত যে শক্তি ভূত্বকের মধ্যে জমা হয়ে আছে, সেই শক্তি বের হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে ঘন ঘন হওয়া কম মাত্রার ভূমিকম্পগুলো।
বড় ধরনের যে কোনো ভূমিকম্পে ঢাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। এখানে ভবন ও জনবসতি অনেক বেশি।
দেশের উত্তর পূর্ব ভাগকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ এক নম্বর অঞ্চল; মধ্যভাগের দুই নম্বর অঞ্চলকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমের তিন নম্বর অঞ্চলকে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।
২০০৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার যৌথ জরিপের ফল বলছে, ঢাকায় ৭ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে; ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক লাখ ৩৫ হাজার ভবন।
ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২০১১ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭৮ শতাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। গত দেড় দশকে এই হার খুব একটা কমেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ক্ষয়ক্ষতি
হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব উপরে রয়েছে। যে পরিমাণ শক্তি ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে জমা হয়ে আছে, সেই শক্তিটা যদি বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
“এটা আগামীকালও হতে পারে, ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে, সেটা আমরা বলতে পারি না। তবে যেটা হবে, সেটা খুব মারাত্মক হবে। ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প ভয়ঙ্কর হয়।”
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এবারের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭।
ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ঢাকা থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরত্বে এমন ভূমিকম্প স্মরণকালের মধ্যে দেখা যায়নি মন্তব্য করে অধ্যাপক আখতার বলেন, “আমরা কয়েক প্রজন্ম এমন তীব্র ভূমিকম্প দেখিনি।”
এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
আরমানিটোলায় বহুতল ভবনের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন—রাফিউল ইসলাম, হাজী আবদুর রহিম ও তার ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন।
ঢাকায় আরেকজনেরর মৃত্যু হয় মুগদা এলাকায়। সেখানে ভূমিকম্পের সময় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়া রেলিংয়ের আঘাতে মৃত্যু হয় নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদের।
বাকি ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে; আরেকজন মারা যান নারায়ণগঞ্জে।
নরসিংদীতে নিহতরা হলেন—সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল (৪০) ও তার ছেলে হাফেজ মো. ওমর (৮), পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫), কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভবনের দেয়াল ধসে মৃত্যু হয় দশ মাসের এক শিশুর। আহত হন শিশুটির মাসহ দুজন।
ভূমিকম্পের মধ্যে গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে চার শতাধিক মানুষ আহত হন।
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক আব্দুল সালাম সরকার বলেন, “এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভূমিকম্পে কম-বেশি আহতরা এ হাসপাতালে এসেছেন।”
নরসিংদীতে আহত হয়েছেন শতাধিক। গুরুতর আহ ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের তিনতলা ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের চারতলা থেকে নিচে লাফ দিয়ে তিন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন কেউ কেউ।
হাতহতের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু ভবনে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। হেলে গেছে অনেক ভবন।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাতীয় গ্রিডের সাবস্টেশনের যন্ত্রাংশ পুড়ে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ।
ভূমিকম্পের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি।
কিছু সময়ের জন্য বিঘ্নিত হয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক।
করণীয় কী
ভূতত্ত্ববিদ হুমায়ুন আখতার বলেছেন, “এখন ভূমিকম্প মোকাবেলার প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর একমাত্র উপায় হলো মহড়া, মহড়া ও মহড়া।”
ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ ভবন ঝুঁকির মধ্যে জানিয়ে বুয়েট অধ্যাপক আনসারী বলেন, ২১ লাখ ভবনের মান যাচাই করা অন্যতম কাজ এবং ‘রেড বিল্ডিং’ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
“ভূমিকম্পের আগে সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রঙে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে।”
প্রশিক্ষিক লোকবল ও প্রস্তুতি দেশে রয়েছে মন্তব্য করে এ বিশ্লেষক বলেন, “এখন এগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। দেশে প্রায় ৫০টি কোম্পানি রয়েছে, যাদের আমরা ট্রেনিং দিয়েছি রানাপ্লাজা ধসের পর।”
তিনি মনে করেন, “ভবনগুলোর নকশায় যেসব পরিবর্তন আসছে, সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষক দরকার। জাতীয় পর্যায়ে ইনস্টিটিউট করা খুবই দরকার। এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় করা সম্ভব নয়, সেন্ট্রালাইজ ইনস্টিটিউট দরকার।
“এ জন্য ২০১৫ সালে একটা চিন্তা ছিল ইন্সটিটিউট করার, এটা স্থবির হয়ে আছে। এ মুহূর্তে যদি ইনস্টিটিউট করতে পারি, তাহলে বড় ভূমিকা থাকবে।”
দেশের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু স্থাপনা ঢাকার বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। ফলে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
“গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পশ্চিমাঞ্চলে স্থানান্তর করা গেলে ঢাকার ক্ষতি হলেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা যাবে।”
ভূমিকম্পের সময় করণীয় কী
• ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সম্ভব হলে আশপাশের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলতে হবে। সম্ভব হলে দ্রুত বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার জন্য সময় নষ্ট করা যাবে না।
• যদি ঘর থেকে বের হওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে ইটের গাঁথুনি দেওয়া পাকা ঘর হলে ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিতে হবে।
• ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করা, জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত।
• সাধারণ নিয়ম হলো, এ সময় যত বেশি নড়াচড়া করা যাবে, তত বেশি আহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
• আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, উত্তম পন্থা হলো 'ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন' বা 'ডাক-কাভার' পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়া, তারপর কোনো শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে ‘কাভার’ নেওয়া। এমন ডেস্ক বেছে নিতে হবে বা এমনভাবে ‘কাভার’ নিতে হবে, প্রয়োজনে ‘কাভারসহ’ চলাচল করা যায়।
• কোনো ভবন ভূমিকম্পরোধক হলে তা খুব কমই ধসে পড়ে। যেটা হয়, আশপাশের বিভিন্ন জিনিস বা ফার্নিচার গায়ের ওপর পড়ে আহত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এগুলো থেকে বাঁচার জন্য এ সময় কোনো শক্ত ডেস্ক বা টেবিলের নিচে ঢুকে আশ্রয় নেওয়াটা জরুরি।
• ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর বা লিফট ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
• ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকতে হবে। বাইরে থাকলে আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
• 'মেইন শক' বা মূল ভূমিকম্পের আগে-পরে মৃদু থেকে মাঝারি আরো কিছু ভূমিকম্প হতে পারে, যেগুলো 'ফোরশক' এবং 'আফটার শক' নামে পরিচিত। সতর্ক না থাকলে এগুলো থেকেও বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত কোনো বড় ভূমিকম্পে 'আফটার শক' প্রথম ঘণ্টার মধ্য থেকে শুরু করে কয়েক দিনের মধ্যে হতে পারে।
• প্রথম ভূমিকম্পের পর গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগগুলো দেখে নিতে হবে।
