ভারতে পানি সংকটে বিঘ্নিত হচ্ছে নারীশিক্ষা
প্রতিদিন সকালে ১৭ বছর বয়সী রামাতি মঙ্গলাকে শুধু পানি আনার জন্য কয়েক কিলোমিটার দূরে খালি পায়ে হেঁটে যেতে হয়। তারপর ঝর্ণা থেকে স্টিলের পাত্রে করে খাবার ও রান্নায় ব্যবহার করার পানি নিয়ে আসেন।
খবর এএফপি’র।
দুরের সেই ঝর্ণা থেকে ফিরতে ফিরতে, স্কুল শুরু হয়ে যায়।
সে জানায় ‘আমি আমার বই রেখে দিয়েছি। কিন্তু আমি কী আবার কখনো স্কুলে যেতে পারব?’
মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক ও নান্দুরবার জেলার খরা-প্রবণ গ্রামগুলোতে দিন দিন কুয়া শুকিয়ে যাচ্ছে এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে পরিবারগুলোকে হতে হচ্ছে কঠিনতর জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি।
পুরুষরা কাজের সন্ধানে কাছাকাছি শহরে চলে যাওয়ায়, মঙ্গলার মত মেয়েদেরই পানির সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
এই দৈনন্দিন কাজটি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। ফলে কাজ শেষ হওয়ার পর স্কুলে যাওয়ার সময় থাকে না।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, এই অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানি সংকটে ভুগছে।
২০২১ সালে ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইতোমধ্যেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা শিক্ষকরা বলছেন, শীতসহ শুষ্ক মৌসুমে মেয়েদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
আবার, অনেক পরিবার টিকে থাকার লড়াইয়ে মেয়েদের ঘরে বসিয়ে রাখা বা অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার বাইরে আর কোন উপায়ও খুঁজে পাচ্ছে না।
জাতিসংঘের শিশু তহবিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খরাপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত শিশুদের নিয়মিত স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ তারা পানি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকে। এ সময়টায় পানি কম থাকায় ও দূষিত হওয়ায় সংগ্রহেও বেশি সময় লাগছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ভারতজুড়ে রামাতি মঙ্গলার মত অনেক মেয়ের জন্যই পানি সংগ্রহের মত সাধারণ কাজটিই হয়ে উঠেছে বেঁচে থাকা ও শিক্ষা গ্রহণের মধ্যকার বড় বাধা।
মঙ্গলার গল্পটি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় শেফালি রফিকের ফটোগ্রাফি সিরিজে। ছবিগুলো ২০২৫ সালের ‘মারাই ফটো গ্রান্ট’-এ পুরস্কারের জন্যও নির্বাচিত হয়। পুরস্কারটি দক্ষিণ এশিয়ার ২৫ বছর বা তার কম বয়সী আলোকচিত্রীদের জন্য উন্মুক্ত।
২০২৫ সালে প্রতিযোগীতার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং আলোকচিত্রশিল্পীদের দৈনন্দিন জীবন ও তাদের কমিউনিটিতে তার প্রভাব নিয়ে।
শাহ মারাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুরস্কারটি আয়োজন করা হয় বার্তা সংস্থা এএফপি’র পক্ষ থেকে । কাবুলের এএফপি শাখার সাবেক প্রধান ফটোগ্রাফার ছিলেন শাহ মারাই। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল কাবুলে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন।