বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩২, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

তফসিল ঘোষণা: সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি গণঅধিকারের সঙ্গে আসিফের ‘আলাপ’, মাহফুজের খবর নেই তারেক রহমানের ফেরার দিন যেন বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে: ফখরুল ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১১ শুক্রবার থেকে সারাদেশে নামছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাখাইনে ‘হাসপাতালে মিয়ানমার জান্তার বিমান হামলায়’ নিহত অন্তত ৩০ সরকারি ব্যয় সংকোচনে ‘কিছুটা সফল’: ইলন মাস্ক গুলশানে ফ্ল্যাট জালিয়াতি : টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে অস্ট্রিয়া রোজা সামনে রেখে খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমল চিকিৎসায় ‘রেসপন্স’ করছেন খালেদা জিয়া গোপালগঞ্জে কভার্ড ভ্যান চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত ধনীদের জন্য চালু হল ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা চীন-রাশিয়ার যৌথ যুদ্ধবিমান টহলে জাপান-ন্যাটো’র গভীর উদ্বেগ

পর্যটন

পাহাড় অক্ষত রেখে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের পথ খোঁজার আহ্বান

 প্রকাশিত: ২০:৫১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

পাহাড় অক্ষত রেখে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের পথ খোঁজার আহ্বান

 একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন ঘটেছে দেশের পর্বত ও বনাঞ্চলেও। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পাহাড় কাটা, গাছপালা ধ্বংস ও বহুতল ভবন নির্মাণসহ নানাবিধ পাহাড় বিনাশী কর্মকাণ্ড পার্বত্য এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ নষ্ট করে চলেছে।   

 

পরিবেশবাদীদের মতে, পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সবুজ পাহাড়, কৃত্রিম কাপ্তাই লেক আর ঝরনাময় নৈসর্গিক সৌন্দর্য বহু বছর যাবৎ ধরে রেখেছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে। কিন্তু জনসংখ্যার চাপ, বেপরোয়া পাহাড় কাটা আর নির্বিচারে বন উজাড় করায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য অঞ্চল। অপরিকল্পিত বসতির কারণে ঝুঁকি বাড়ছে পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন ও প্রকৃতির। তাই পার্বত্য এলাকার মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাকৃতিক পাহাড় অক্ষুণ্ন রেখে উন্নয়নের পথ খুঁজতে হবে।

 

আজ ১১ ডিসেম্বর। আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। এই দিবসকে সামনে রেখেই পরিবেশবাদীরা বাসসের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। পাহাড়-পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই পাহাড় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরতেই প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয়। 

 

বনজ সম্পদ আহরণ, পাথর উত্তোলন আর অপরিকল্পিত বসতি শুধু পাহাড়কেই বিপন্ন করেনি, বর্ষায় ভূমিধসেও প্রাণহানি বাড়ছে। পাহাড় ধসের কারণে সীতারাম পাহাড়সহ কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ও রাঙামাটির অসংখ্য পাহাড় আজ বিপর্যয়ের মুখে। এতে যেমন : কমছে জীববৈচিত্র্য, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পার্বত্য কৃষি, পর্যটন এবং স্থানীয় অর্থনীতি।

 

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোর সঠিক সমীক্ষা নেই। পরিবেশ রক্ষায় নীতিমালা থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ সীমিত। তাই জরুরি ভিত্তিতে সার্ভে হলে পাহাড় রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। 

 

রাঙামাটি পাবলিক কলেজ এর অধ্যাপক মুকুল কান্তি ত্রিপুরা বাসসকে বলেন, পাহাড়, লেক, গিরি ও ঝরনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নৈসর্গিক লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। এই পাহাড়ই পার্বত্য এলাকার প্রাণ। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলোর এখনো পরিপূর্ণ কোনো সমীক্ষা হয়নি। পার্বত্য এলাকার প্রাণ অক্ষত রেখে উন্নয়ন করতে হলে সবার আগে সমীক্ষা হওয়া জরুরি। রাঙামাটিতে কতগুলো পাহাড় আছে, তার প্রাকৃতিক অবস্থান, পরিবেশগত ভারসাম্য, জনবসতি ইত্যাদি বিষয়গুলোর যথাযথ তথ্য থাকলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পার্বত্য এলাকায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন করা সম্ভব। 

 

তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী পাহাড়ের কোনো ক্ষতি না করে মাচাং করে বসবাস করে। 

 

এতে পাহাড়ের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। পাহাড় ধসেরও কারণ ঘটে না। তাদের এই আদি কৌশল ব্যবহার করে পার্বত্য এলাকায় বসবাস করলে পার্বত্য প্রকৃতি রক্ষা হবে। 

 

পার্বত্য এলাকায় কোনো স্থাপনা তৈরি করতে হলে সরকারের আইন ও নিয়ম কানুনগুলো কঠোরভাবে মানা জরুরি উল্লেখ করে মুকুল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ের রূপ ও প্রকৃতি অক্ষুণ্ন রেখে এসব করা হলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বেনা। তাই রাঙামাটির সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

 

রাঙামাটি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বাসসকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে পাহাড়ের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এ প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে পারছি না। এখানে পাহাড় ও পরিবেশের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। 

 

তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের জন্য চমৎকার সব নীতিমালা আছে। কিন্তু এর বাস্তবিক প্রয়োগ সীমিত। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে হবে এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বিল্ডিং কোড থেকে শুরু করে পাহাড়ে স্থাপত্য নির্মাণের যে কৌশল আছে, সে কৌশলগুলো অবলম্বন করতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পার্বত্য রাঙামাটির পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।  

 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাস এর নির্বাহী পরিচালক ললিত সি চাকমা বাসসকে বলেন, পাহাড়ের সৌন্দর্য ঘিরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটা বিশাল চাপ এই পাহাড়ের ওপরেও পড়েছে। জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে পাহাড়ের ভূ-প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। পরিকল্পনা ছাড়া আবাসন নির্মাণ ও বনজ সম্পদ আহরণ পাহাড়ের প্রতিবেশ নষ্ট করছে। 

 

তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় মানুষের আবাসনের প্রয়োজন মেটাতে হলে তার জন্য একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। নির্বিচারে বনজ সম্পদ ও পাথর আহরণের ফলে পাহাড়ের যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে পার্বত্য অঞ্চলকে রক্ষা করতে হবে। 

 

পরিবেশ অধিদপ্তর রাঙামাটির সহকারী পরিচালক মো. মোমিনুল ইসলাম বাসসকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯০ ভাগই উঁচু পাহাড় নিয়ে গঠিত। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাসহ দেশের ১৬ টি জেলায় পাহাড় রয়েছে। পুরো বাংলাদেশে ১৫ লাখ ৪১ হাজার হেক্টর পাহাড়ি ভূমি রয়েছে। 

 

তিনি জানান, রাঙামাটি জেলায় উঁচু নিচু মিলে ৪ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর পাহাড়ি এলাকা ও পাহাড়ি ভূমি। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৬০ হেক্টর উঁচু পাহাড়। ইতিপূর্বে পাহাড় রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রম বিভাগীয় চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত হতো। ২০২৪-এর নভেম্বর থেকে রাঙামাটি থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। চলতি বছরে পাহাড় কাটার ঘটনায় বিভিন্ন স্থান থেকে ২৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় কাটার ঘটনায় গত ৬ মাসে ১৯ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

 

আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসে রাঙামাটির মানুষের প্রত্যাশা, প্রাকৃতিক পাহাড় অক্ষুণ্ন রেখে উন্নয়নের পথ খোঁজা হোক। টেকসই নীতিমালা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতাই পারে পাহাড়কে রক্ষা করতে।