বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩২, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

পদত্যাগ করেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম ভারত হাসিনাকে ফেরত দিতে রাজি না হলে ‘করার কিছু নেই’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচন করবো, তবে কোন দল থেকে নিশ্চিত না: আসিফ মাহমুদ আগামী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে হবে: ইউএনওদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা ধানের শীষকে জেতানোর বিকল্প নেই: তারেক রহমান মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় সেই গৃহকর্মী গ্রেপ্তার অচিরেই দেশে ফিরে হাল ধরবেন তারেক রহমান: মির্জা আব্বাস ‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে আন্দোলন, ‘অবরুদ্ধ’ অর্থ উপদেষ্টা দক্ষিণ চীনে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১২ জনের মৃত্যু ইউরোপকে ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ও ‘দুর্বল’ বললেন ট্রাম্প ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর: খালেদার জন্য হাসিনা ‘উদ্বিগ্ন’ প্রথম ধাপে ১২৫ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলো এনসিপি মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর বিজয়ের মাসেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: আতিকুর রহমান প্রাথমিকের ছুটি বাতিল করে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ

পর্যটন

সুনসান নিরবতা ভেঙে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

 প্রকাশিত: ১১:০৮, ৩ এপ্রিল ২০২৫

সুনসান নিরবতা ভেঙে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

পুরো রমজান মাস জুড়েই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ছিল সুনসান নীরবতা। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকতে ছিল না কোনো কোলাহল কিংবা হইহুল্লোড়। হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলো ভাড়ায় ছাড় দিয়েও অতিথি পায়নি। বন্ধ ছিল পর্যটক নির্ভর রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসা। সেই নীরবতা ভেঙেছে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে।

গতকাল ছিলো ঈদুল ফিতর। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিনেই বদলে গেছে সেই দৃশ্য। সাগরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমে শরীর জুড়িয়ে নিতে অনেকে নেমে পড়ছেন সাগরের পানিতে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার সৈকতে এসেছেন অন্তত ৬০ হাজার পর্যটক।  স্থানীয় আরও ৪০-৪৫ হাজার মানুষও আজ সাগরে নামেন। সব মিলিয়ে আজ সাগরের লোনাজলে নেমে গোসল করেন প্রায় এক লাখ মানুষ।

সৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, মাথিনকূপ, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির। ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার সৈকত ভ্রমণে আরও অন্তত এক লাখ পর্যটক আসবেন বলে আশা করছেন কক্সবাজারের হোটেল- মোটেলের মালিকরা।

আজ সকাল সাড়ে নয়টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ছয় হাজার পর্যটক সমুদ্রের কোমরসমান লোনাজলে নেমে শরীর ভেজাচ্ছেন। কেউ দ্রুতগতির জলযান জেডক্সিতে চড়ে গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ টিউবে গা ভাসিয়ে সাগরের ঢেউয়ের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছেন।

স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকতে গোসলে নামেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম। তারপর বালুচরে উঠে এসে কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) বসে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আব্দুল আলীম (৫১) বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে সমুদ্রের লোনাজলে শরীর ভেজানোর মজাই আলাদা। পানিতে ভেসে ঢেউয়ের সাথে মিতালি দারুণ আনন্দের।’ 

সকালে উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে সৈকত তীরের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ওঠেন আব্দুল আলীম। রুমে জিনিসপত্র রেখেই দ্রুত সৈকতে নেমে পড়েন। আগামীকাল সকালে কক্সবাজার- টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ঘুরে বেড়াবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়োজাহাজে ঢাকায় ফিরে যাবেন।

একইভাবে সুগন্ধা পয়েন্টের পাশাপাশি উত্তর দিকের সিগাল, লাবণী এবং দক্ষিণ দিকের কলাতলীর চার কিলোমিটারের সৈকতেও মানুষ গিজ গিজ করছে। সমুদ্রে গোসলের পাশাপাশি পর্যটকরা বালুচরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিংবা বিচ বাইকে উঠে সৈকতের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুঠোফোনে ছবি তুলছেন ইচ্ছেমতো। অনেকে ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুক, ইউটিউবে।
হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, রমজান মাসের আগের চার মাসে বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ঘুরতে এসেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক এসেছেন। আর গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। এবার অনেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইন বা ফোনে যোগাযোগ করে কক্ষ বুকিং দিয়েছেন। ১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে আছে। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের পাঁচ শতাধিক হোটেল- মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘বাইরের পর্যটকরা ঈদের পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। পর্যটকরা ভ্রমণে এসে যাতে সমস্যার সম্মুখীন না হন এর জন্য অনলাইনে হোটেল বুকিং দিয়ে এলেই সবচেয়ে ভালো।’

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের আগেই রোজার মাসে বন্ধ থাকা পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। হাজার হাজার পর্যটক রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার সেরেছেন। সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় হচ্ছে কি না, তা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। খাবার টেবিলে মূল্যতালিকা রাখা থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখেই যেন খাবারের অর্ডার দেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বাসসকে বলেন, পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমুদ্রসৈকত ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকরা এসে যাতে ভালো সেবা পান তার জন্য পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে। হোটেল- মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি রোধ এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। কোনো অভিযোগ পেলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।