সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ৭ ১৪৩২, ০২ রজব ১৪৪৭

ব্রেকিং

হাদির খুনি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই: পুলিশ হাইকমিশনে বিক্ষোভের ঘটনায় দিল্লির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ঢাকার হাদি হত্যা: সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, জানতে চায় ইনকিলাব মঞ্চ হাদি হত্যা: সিবিউন ও সঞ্জয় ফের ৫ দিনের রিমান্ডে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, বিঘ্নিত করলে কঠোর ব্যবস্থা: ইসি বগুড়ায় খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ মগবাজারে ‘বাসি খাবার’ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ইসির বৈঠক রাবির আওয়ামীপন্থি ৬ ডিনের পদত্যাগের দাবিতে চেম্বারে তালা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে গণতন্ত্রের খুঁটিটা যেন মজবুত হয়: সালাহউদ্দিন ফেরি থেকে ট্রাকসহ পাঁচ যান ধলেশ্বরীতে: ৩ জনের মৃত্যু ছায়ানটে হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি সাড়ে তিনশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের জানাজা অনুষ্ঠিত হাদির সমাধিস্থল নিয়ে ছড়ানো ছবি বানোয়াট-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গাজার ধ্বংসস্তূপে একদিনে মিলল ৯৪ জনের দেহাবশেষ ভেনেজুয়েলা উপকূলে দ্বিতীয় তেল ট্যাঙ্কার জব্দ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অবসানের দায় ইউক্রেন ও এর মিত্রদের : পুতিন পশ্চিম তীরে দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যার দাবি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মাখোঁর সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত পুতিন

পর্যটন

আজ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ

 প্রকাশিত: ১২:৪৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আজ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ

আজ থেকে সেন্টমার্টিনে যে কোনো প্রকার পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আজ থেকে নয় মাস কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না। পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও বন্ধ থাকবে। সরকারি বিধিনিষেধের অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে স্থানীয় প্রশাসন। এর আগে ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিবন্ধনের নিয়ম চালু করে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করা হয়। 

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হকের নেতৃত্বে সম্প্রতি পরিবেশবাদীদের ১০ সদস্যের একটি দল সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে এসেছেন। তারা জানান, পর্যটক সীমিত করায় দ্বীপে যত্রতত্র ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার, নানা ভাবে পরিবেশ দূষণ এবং নির্বিচারে প্রবাল- কোরাল -পাথর উত্তোলন কমে এসেছে। 

অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বাসসকে বলেন, সেন্টমার্টিনে যে অবৈধ হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশাসনের কারও অজানা নয়।

তারপরও আশার বাণী হচ্ছে গত ডিসেম্বর থেকে পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে, দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা দূষণমুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একটা পরিচ্ছন্ন দ্বীপ পাচ্ছেন। যা সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটা বড় সাফল্য।

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধের পর দ্বীপ সম্পর্কে কী পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়। 

জানা যায়, পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকার সময়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই কর্মসূচিতে দ্বীপটিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে প্লাস্টিক বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে অভিযান চালানো হবে। এর বাইরে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একই সময়ে জীববৈচিত্র রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এরপর কেউ সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন কি না, তা নজরদারিতে রাখা হবে। 

তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানেই সেন্ট মার্টিনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এসময় ভ্রমণের আগে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়েছে পর্যটকদের। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়। 

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আগে দ্বীপের বাসিন্দা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেন্ট মার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল- রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। দ্বীপবাসীর কল্যাণে তাদের অবদান কতটুকু তা খতিয়ে দেখতে হবে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

আগে পর্যটকবাহী ১২টির বেশি জাহাজ সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে ভিড়লে শক্তিশালী পাখার ঘূর্ণিপাকে সমুদ্রতলের বালু নীল জলের স্বচ্ছ পানিতে মিশে ঘোলাটে আকার ধারণ করত। এসব বালু ও পলিথিনসহ বর্জ্যে মারা যেত প্রবাল-শৈবাল। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকের কারণে দ্বীপের কিছু প্রভাবশালী লাভবান হলেও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয় না। অতিরিক্ত পর্যটকের উপস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে উল্টো তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সাধারণত জুন, জুলাই, আগস্ট-এই তিন মাসে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় পর্যটক ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সেন্ট মার্টিনে তেমন যান না।

এই সময়টাতে প্রভাবশালীরা দ্বীপের ভ্রমণ নিষিদ্ধ এলাকায় রিসোর্টসহ নানা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আসছেন। এসব স্থাপনায় ব্যবহৃত হয় সৈকত থেকে তুলে আনা পাথর। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এবার যাতে পর্যটক না থাকার সময়ে কেউ এ ধরনের স্থাপনা তৈরি করতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০২০ সালের আগস্টে সেখানে প্রথম পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) একটি সমীক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা শেষে জানায়, দ্বীপটিতে কোনোভাবেই পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না।