বুধবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ২ ১৪৩২, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

আমাদের তরুণদের রক্ষা করুন, জাতির ‍উদ্দেশে ভাষণে ইউনূস খালেদা জিয়া ইতিহাসের ‘গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ’: ইউনূস হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের সহযোগী কবির ৭ দিনের রিমান্ডে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধ নয়, ভারতের বিরুদ্ধে ছিল: আমির হামজা নারায়ণগঞ্জে ‘নিরাপত্তা শঙ্কায়’ ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা বিএনপি প্রার্থীর একাত্তর ও চব্বিশের দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি: নাহিদ স্বাধীনতার শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়: ফখরুল প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী জাহাজে মার্কিন হামলায় ৮ নিহত ‘ঘৃণার প্রতীক’ পাকিস্তানের পতাকা আঁকা নিয়ে জবিতে তুলকালাম বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টা মহান বিজয় দিবস আজ ওসমান হাদিকে গুলি: শ্যুটার ফয়সালের সহযোগী গ্রেপ্তার বিবিসির বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা ট্রাম্পের

স্পেশাল

সুস্থ জীবনে ফেরার আকুতি আহত জাকারিয়ার

 প্রকাশিত: ১২:০৮, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

সুস্থ জীবনে ফেরার আকুতি আহত জাকারিয়ার

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ধোপাখালি ইউনিয়নের মেছোখালি গ্রামের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র মোহাম্মদ জাকারিয়া। এস এস সি পাস করে কাজের জন্যে তিন বছর আগে ছুটে আসেন রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীচরের বড় গ্রামে। কিছুদিন পর একটি বোরখা কারখানায় ম্যানেজার পদে চাকরি পান। বেতন পেতেন সামান্য। তা দিয়েই কোনরকম চলে যাচ্ছিল দিন।

কিন্তু দেশে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যখন রাস্তায় মানুষ নেমে আসে, বসে থাকেননি জাকারিয়াও। তিনি চাকরির কথা না ভেবেই ১৫ জুলাই থেকে নিয়মিত মিছিলে অংশ নিতে থাকেন।

সেদিন ছিল শুক্রবার, ১৯ জুলাই। জুম্মার নামাজ আদায় করে জাকারিয়া নেমে পড়েন গগনবিদারী শ্লোগানে মুখরিত বিশাল মিছিলে। ঢাকা নিউমার্কেট নীলক্ষেতের সামনে মিছিলটি এলে খুনি হাসিনার পেটোয়া গুন্ডা পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলি শুরু করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জাকারিয়ার ডান পায়ের গোড়ালিতে গুলি লাগে। রক্তাক্ত আর আহত অবস্থায় কাতরাতে থাকেন তিনি। এ সময় মিছিলে অংশ নেয়া অন্য সহকর্মীরা তাকে দ্রুতই নিয়ে যান ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতালে। সমস্যা হওয়ায় সেখান থেকে পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিছুদিন চিকিৎসা শেষে ফিরে আসেন গ্রামে। 

এখন তার কর্মহীন জীবন। হাঁটতে পারেন না। চলতে হয় হুইল চেয়ারে। স্বাভাবিক কোন কাজকর্মই করতে পারছেন না। আটকে আছেন বেকারত্বের বেড়াজালে। কেউ কোন খোঁজ খবর নেয়নি। কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতাও পাননি। ধার দেনা হয়েছে অনেক। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। 

জাকারিয়া হতাশা ভরা কন্ঠে জানান, তিনি দ্রুতই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব জানেন না। সরকার যদি এগিয়ে আসতো, তাহলেই হয়তো তিনি সুস্থ জীবনে ফিরতে পারতেন। 

এ সময়ে তিনি সরকারি সহায়তার জন্যে আকুল আবেদন জানান।

জাকারিয়ার মা হেলেনা বেগম (৪৬) গৃহিণী। তিনি বাসস প্রতিনিধিকে জানান, তার ছেলে প্রতিবাদী চরিত্রের। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতো। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় পেট চালাতে ঢাকায় পাড়ি জমায় চাকরির জন্য। কলেজে পড়াশুনার ইচ্ছে ছিল ছেলের। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অসচ্ছলতর কারণে তা সম্ভব হয়নি। অভাব তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আহত জাকারিয়ার মা হেলেনা আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকার সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না। হায়রে পোড়া কপাল আমাদের!’

জাকারিয়ার পিতা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন(৫৩)। পেশায় ভ্যানচালক। ছেলের পঙ্গুতের ভারে তিনিও যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন। ছেলের চিকিৎসার জন্যে তিনিও সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান।

জাকারিয়ারা চার ভাই বোন। বড়ভাই মো: আব্দুর রহমান (২৭)। তৃতীয় ভাই মো: ওমর (২১)। তারাই বর্তমানে জাকারিয়ার দেখভাল করছেন। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। একমাত্র কনিষ্ঠ বোন ফাতেমা খাতুন (১৫)। মাধবকাঠি আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়েন।

আহত জাকারিয়ার ভাই মো: আব্দুর রহমানের জিজ্ঞাসা, তাদের ভাই কি সরকারি ভাবে চিকিৎসা সহায়তা পাবে না? দেশ যদি দ্বিতীয় বার স্বাধীনতা লাভ করে তাহলে তার ভাই মোহাম্মদ জাকারিয়াও তো তার একজন গর্বিত অংশীদার। তাহলে তার চিকিৎসার টাকা পেতে সমস্যা কোথায়?

আহত ও পঙ্গু জাকারিয়ার সহকর্মী আত্মীয় স্বজন বন্ধুদের দাবি, অবিলম্বে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। জাকারিয়া পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।