৬৩১৪ দিন পর দেশে ফিরলেন তারেক রহমান
দেড় যুগের দীর্ঘ নির্বাসন ভেঙে অবশেষে দেশের পৌঁছেছেন বিএনপি নেতা তারেক রহমান। তার সঙ্গে আছেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়ে এবং আলিঙ্গনে-করমর্দনে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেনও উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে।
বিমানবন্দর থেকে ফোনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলছেন। নিরাপত্তা ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তার জন্য এসময় তিনি সরকারপ্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কথোপকথনে তারেককে বলতে শোনা যায়- “জি জি...আমার জন্য আমার...জি জি...আপনার শরীর কেমন আছে?”
“হ্যাঁ, দোয়া করবেন, দোয়া করবেন।”
তারেক বলেন, “আমি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি আপনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম আয়োজন করেছেন, বিশেষ করে আমার নিরাপত্তার জন্য। অ্যান্ড উই আর থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ...থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। সব রকম আয়োজনের জন্য।
“নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। জি নিশ্চয়ই...ইনশাল্লাহ...ইনশাল্লাহ।”
বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় লাগোয়া বাগানে জুতা খুলে খালি পায়ে ঘাসের উপরে দাঁড়িয়ে দেশের মাটির স্পর্শ নেন তারেক রহমান। এসময় এক টুকরো মাটি হাতে নিয়ে স্পর্শ নেন মাতৃভূমির।
বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনার পর দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে বিএনপির পতাকা রঙে সাজানো বাসে চড়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ৩০০ ফিট সড়কের পথে রওনা হন তিনি। সেখানে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বিএনপি নেতা বাসের সামনের অংশ থেকে হাত নেড়ে কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
সংর্বধনাস্থলের পথে তারেকের গাড়ি বহর ধীর গতিতে চলতে শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা চারপাশে নজর রাখার পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে থাকা কর্মী সমর্থকদের গাড়ি বহর থেকে দূরে রাখছেন।
সেই অনুষ্ঠান হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। মঞ্চে উঠে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তারেক রহমান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সেরে তারেক রহমান যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত ২৩ নভেম্বর থেকে সেখানে ভর্তি আছেন তার মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এভারকেয়ার থেকে পরে তারেক রহমান যাবেন গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায়।
অন্যদিকে বিমানবন্দর ছেড়েছেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান। তাদের বহনকারী গাড়ি যাচ্ছে। গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাসায়।
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড, ব্যানারসহ ফুল হাতে নিয়ে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা ‘তারেক রহমানের আগমন, শুভেচ্ছা-স্বাগতম’, ‘বাংলাদেশের প্রাণ, তারেক রহমান’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জনস্রোতের কারণে বিমানবন্দর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট দেখা যায়। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়কে গাড়ি চলছে থেমে থেমে।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটসহ আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিমানবন্দরের বের হওয়ার গেইট থেকে একবারে সমাবেশস্থল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান রয়েছে।
এদিকে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে (তিনশ ফিট সড়ক) জনসমুদ্রে পরিণত হয় সকাল থেকেই
সকাল ৮টায় তিনশ ফিট সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু করে সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত পুরো সড়ক নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী রাতেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। অনেককেই রাত কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।
মঞ্চ আর আশপাশের এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই, পুরো এলাকায় চলছে উৎসবের আমেজ।
সবার মুখে মুখে একটি স্লোগান বেশি শোনা যাচ্ছে—‘লিডার আসছেন’। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড আর উচ্ছ্বাসে পুরো সমাবেশস্থল উৎসব কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
মঞ্চের ব্যানারে লেখা রয়েছে- ‘জনাব তারেক রহমান এর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’। মঞ্চে রয়েছে ১৯টি চেয়ার। মঞ্চের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
কুষ্টিয়ার কুমার খালী থেকে ভোরে ঢাকায় এসেছেন সানাহ উল্লাহ। তিনি বলেন, “এত দিনে তারেক ভাইকে দেখেছি ফেইসবুকে, আজকে দেখব সামনা-সামনি। উনাকে দেখার জন্য আমরা চার বন্ধু ঢাকায় এসেছি।
“বাড়িতে বলে এসেছি, তারেক ভাইকে দেখতে যাচ্ছি, দেখে এসে মিষ্টি খাওয়াব। “
পশ্চিম ও পূর্ব দিকে মহাসড়ক দিয়ে নেতা-কর্মীদের মিছিল দেখা যায়। বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ থেকে বিশেষ ট্রেনগুলোতে নেতা-কর্মীরা রাতেই ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন সময়ে।
সিলেটে তারেকের ফ্লাইট ও ফেইসবুক পোস্ট
ঢাকায় পৌঁছানের আগে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে সোয়া ঘণ্টার যাত্রাবিরতি শেষে বেলা ১১টা ১১ মিনিটে বিমানটি ঢাকার পথে রওনা হয়।
যাত্রাবিরতির সময় তারেক রহমান বিমানেই অবস্থান করেন। সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে ফেইসবুকে সস্ত্রীক হাস্যোজ্জ্বল ছবি পোস্ট করে বিএনপি নেতা লেখেন, “অবশেষে সিলেটে, বাংলাদেশের মাটিতে!”
এর আগে সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, “দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!”
প্রথম তিনদিন তারেক যা যা করবেন
বৃহস্পতিবার
• বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমান যাবেন পূর্বাচলের তিনশ ফিট সড়কে, সেখানে হবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
• সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সেরে তারেক রহমান যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত ২৩ নভেম্বর থেকে সেখানে ভর্তি আছেন তার মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
শুক্রবার
• জুমার নামাজের পর তারেক যাবেন শেরেবাংলা নগরে। সেখানে তার বাবা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন।
• জিয়ার সমাধি থেকে তারেক যাবেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
শনিবার
• নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ভোটার তালিকায় নাম লেখাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
• জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ সেরে তিনি যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখানে ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন।
• পরে শ্যামলীতে যাবেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে তিনি সেখানে যাবেন।