বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ১১ ১৪৩২, ০৫ রজব ১৪৪৭

ইসলাম

ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে ইসলামের উৎসাহ

 প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে ইসলামের উৎসাহ

একটি জাতির শক্তি শুধু তার জনসংখ্যায় কিংবা অর্থনীতিতে নয়; বরং জাতির প্রকৃত শক্তি লুকিয়ে থাকে তার ভেতরের সংহতির রূপরেখায়। যে জাতি একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে পারে, পাহাড়সম সংকটও তাদের সামনে ছোট হয়ে যায়। আর যখন সেই কাঁধগুলো আলাদা হয়ে যায়, তখন সামান্য ধাক্কায়ই ভেঙে পড়ে রাষ্ট্র, সমাজ ও সভ্যতা। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে তার পরতে পরতে দেখা যায়, যে জাতি ঐক্য হারিয়েছে, সে জাতি শুধু ক্ষমতাই হারায়নি; হারিয়েছে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের স্বপ্নও।

ইসলাম ঐক্যকে কোনো ঐচ্ছিক নৈতিকতা হিসেবে দেখেনি; বরং একে ঈমানি ফরজের মূল্যায়ন করেছে। কারণ আল্লাহ ভালো করেই জানেন, ভাঙা জাতি কখনো আল্লাহর আমানত রক্ষা করতে পারে না।

কোরআনের সরাসরি নির্দেশে ঐক্য

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

এই আয়াতে ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে কোরআন, দ্বিন ও সম্মিলিত আনুগত্যকে বোঝানো হয়েছে, যা মানুষকে এক সুতায় বেঁধে রাখে।ঐক্য এখানে শুধু সামাজিক প্রয়োজন নয়; এটি সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ। ফলে বিভক্তি শুধু রাজনৈতিক দুর্বলতা নয়; এটি দ্বিনি অবাধ্যতারও শামিল।

বিভক্তি জাতিকে কিভাবে দুর্বল করে কোরআনের বিশ্লেষণ

আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে।’ (সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ৪৬)

এই আয়াত জাতির পতনের একটি সুস্পষ্ট সূত্র তুলে ধরে—পরস্পর বিবাদ থেকে জাতির মধ্যে দুর্বলতা তৈরি হয়, যা একসময় তাদের সব শক্তির বিলুপ্তি ঘটায়।এখানে ‘শক্তি’ বলতে শুধু সামরিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতা নয়; বরং আত্মবিশ্বাস, নৈতিক দৃঢ়তা এবং আল্লাহর সাহায্য—সবই এর অন্তর্ভুক্ত। যখন অন্তরে বিদ্বেষ জন্মায়, তখন আল্লাহর নুসরাত সরে যায়; আর সেটিই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

সুন্নাহর আলোকে ঐক্যহীনতার ভয়াবহতা

রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মাহর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, সম্পর্ক ছিন্ন কোরো না...আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৩)অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একটি দেহের ন্যায়; দেহের একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে পুরো দেহ জ্বরে আক্রান্ত হয়।’(বুখারি, হাদিস : ৬০১১)

এই হাদিসগুলো দেখায় যে, উম্মাহর ভেতরের সম্পর্ক যদি দেহের মতো সংহত না থাকে, তাহলে সামান্য আঘাতেই পুরো জাতি অসুস্থ হয়ে পড়ে।