বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ফাল্গুন ৭ ১৪৩১, ২০ শা'বান ১৪৪৬

ফিচার

জর্ডানের শিবিরে থাকা সিরীয় শরণার্থীদের বাড়ি ফেরার মতো কিছুই নেই

 আপডেট: ১৮:৩৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

জর্ডানের শিবিরে থাকা সিরীয় শরণার্থীদের বাড়ি ফেরার মতো কিছুই নেই

জর্ডানে বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির জাতারিতে বসবাসকারী সিরীয়দের অনেকেই বাড়ি ফিরে যেতে চান, তবে, তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পরেও নিশ্চিত নন।

কারণ তারা আশঙ্কা করছেন, ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে পারে এবং কেউ কেউ বলেছেন, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, আবার অনেকে তাদের চাকরি হারিয়েছেন। তারা মনে করছেন, ফিরে যাওয়ার মতো তাদের কিছুই নেই।

জর্ডানের জাতারি শরণার্থী শিবির থেকে এএফপি জানায়, ২০১২ সালে, সিরিয়ায় যুদ্ধের এক বছর পর, প্রতিবেশী জর্ডান সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য জাতারি শিবির খোলে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, এটি এখন ৭৫ হাজার মানুষের আবাসস্থল।

শুরুতে, এটি ছিল শুষ্ক মরুভূমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁবুর এক নোংরা শহর, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি পূর্বনির্মিত ঘর স্থাপনের মাধ্যমে একটি শহরে পরিণত হয়, যেখানে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ করা হয় এবং স্বাস্থ্যসেবা ও স্কুল রয়েছে।

বিখ্যাত প্যারিসিয়ান অ্যাভিনিউয়ের নামানুসারে চ্যাম্পস-এলিসিস নামে একটি রাস্তায়, ৬০ বছর বয়সী দোকান মালিক ইউসুফ হারিরি এএফপিকে বলেন, তিনি তার পরিবারের সাথে জাতারিতে থাকতে চান, যেখানে তারা নিরাপদ বোধ করেন।

নির্মাণ সামগ্রী বিক্রির দোকান মালিক হারিরি বলেন, ‘আমি ফিরে যেতে পারব না। এর অর্থ হবে সবকিছু হারানো এবং দোকান বিক্রি করা কঠিন হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘সিরিয়ায় পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভালো নয় এবং আগামীতে কী হবে তা স্পষ্ট নয়। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া এবং সশস্ত্র বিদ্রোহীরা রয়েছে। আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

২০১১ সালে আসাদ বিরোধী বিক্ষোভের ওপর দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সিরিয়ার যুদ্ধ লাখ লাখ মানুষকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে, যাদের বেশিরভাগই প্রতিবেশী দেশগুলোয় আশ্রয় নেয়।

৮ ডিসেম্বর ইসলামপন্থী জোট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে হাজার হাজার মানু দেশে ফিরে এসেছে, কিন্তু বেশিরভাগ শরণার্থী এখনও বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি।

অবিচার ও অত্যাচার : জাতারিতে শরণার্থীদের বেশিরভাগই জর্ডান সীমান্তের কাছে দক্ষিণ সিরিয়ার দারা প্রদেশ থেকে এসেছেন।

সংঘাতের আগে এটি ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের আবাসস্থল।

শিবিরে শরণার্থীরা খাবারের জন্য নগদ সহায়তা পান এবং তাদের শিবিরের বাইরে কাজ করার অধিকার রয়েছে।

২০১২ সাল থেকে শিবিরে বসবাসকারি ৭২ বছর বয়সী খালেদ আল-জোয়াবি যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা আর কোথায় ফিরে যাব?’  

তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের আর্থিক অবস্থা এত ভালো নয় যে কেউ ফিরে যেতে পারে এবং কেউ জানে না সিরিয়ায় কী ঘটবে। 

দোকানের মালিক বলেন, ‘আমরা সিরিয়ায় আসাদের দলের লোকদের অন্যায় ও অত্যাচার থেকে পালিয়ে এসেছি, যেখানে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য ছিল না। আমি মনে করি, এখানে আমি একজন মানুষ এবং আমি এখানে থাকতে পছন্দ করছি।’

আজ পর্যন্ত, মানুষকে ফিওে যেতে সাহায্য করার জন্য কোনও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।

৫৪ বছর বয়সী তিন সন্তানের জনক রাদওয়ান আল-হারিরি বলেন, সিরিয়ায় তার পরিচিত সকলেই তাকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

জাতারিতে একটি মসজিদের ইমাম বলেছেন, ‘সিরিয়ায় কেউ আপনাকে কোনো সাহায্য করবে না এবং কোনো কাজ নেই।’

জর্ডান কর্তৃপক্ষের মতে, আসাদের উৎখাতের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে জাবের সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ৫২ হাজার সিরীয় বাড়ি ফিরে গেছে।

জর্ডানে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রোল্যান্ড শোয়েনবাউয়ার এএফপিকে বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতা একটি উদ্বেগের বিষয়। এখনও অনেক অস্থিতিশীলতা রয়েছে, দেশের কিছু অংশে সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং খন্ড যুদ্ধ এবং অবিস্ফোরিত অস্ত্রের কারণে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ 

‘প্রত্যেক শরণার্থীর তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে, যখন স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় প্রবেশের সঠিক সময় আসবে তখন তাদের সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।’

জাতিসংঘ বলছে, ২০১১ সাল থেকে জর্ডানে প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার সিরীয় নিবন্ধিত হয়েছে, যদিও দেশটি বলেছে, তারা ১.৩ মিলিয়ন শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে।

জাতারির সমস্ত সিরীয় ফিরে যেতে দ্বিধাগ্রস্ত না।

৬৩ বছর বয়সী মরিয়ম মাসালমেহ বলেন, তিনি, তার স্বামী ও তাদের সন্তানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে, তিনি তার গোলাপের ঝোপ ও  আপেল গাছের বাগান দেখিয়ে বলেন, জাতারি ছেড়ে যেতে তিনি দুঃখ বোধ করছেন। এটি তার জন্মভূমি হয়ে উঠেছে।

বাড়ি যাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষা আর সইতে পারছেন না ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আতমে। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে, আমি ১৩ বছর ধরে আমার মা এবং ভাইদের দেখিনি।’

‘এখানে, আমাদের সম্মানের সাথে রাখা হয়েছিল এবং আমাদের মর্যাদা রক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে ফিরে যাওয়া তাদের প্রত্যেকের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।’