আমাদের তরুণদের রক্ষা করুন, জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইউনূস
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকে শুধু একজন ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দেশের তরুণদের রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
সরকার এ ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা গেছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
“পরাজিত শক্তি ‘ফ্যাসিস্ট’ সন্ত্রাসীদের এই অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস ঘটিয়ে বা রক্ত ঝরিয়ে এই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।”
হাদিকে গুলির ঘটনাকে গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর আঘাত হিসেবে তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের সামনে আজ উপস্থিত হয়েছি অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে। এই আনন্দের দিনে গভীর বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সম্প্রতি যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়, এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত।”
সংকটাপন্ন অবস্থায় বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন হাদির চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে ভাষণে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংযম বজায় রেখে অপপ্রচার বা গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীরা, যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের মোকাবিলা করব। তাদের ফাঁদে পা দেব না।
“পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি এ দেশের পবিত্র মাটিতে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের তরুণদের রক্ষা করুন। তাহলে আমরা সবাই এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষা পাবে। যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তারা বুঝে গেছে তরুণ যোদ্ধারা তাদের পুনরুত্থানের পক্ষে ভীষণ রকম বাধা। এই অস্ত্রহীন, ভীতিহীন, ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন দৈনন্দিন এই চেহারার ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাদের সাংঘাতিক ভীতি।
“তাদের লক্ষ্য হলো নির্বাচন আসার আগেই পথের এই বাধাগুলি সরিয়ে ফেলা, নিজেদের রাজত্ব আবার কায়েম করা। তাদের বন্ধুরা যতদিন তাদের সঙ্গে আছে ততদিন তারা এই স্বপ্ন দেখবে। নির্বাচন হয়ে গেলে তাদের বন্ধুরা সমর্থন জোগাতে বেকায়দায় পড়বে। সেজন্যই তো এত তাড়াহুড়া। তারা চায় নির্বাচনের আগেই তাদের ফিরে আসা নিশ্চিত করতে। নানা ভঙ্গিতে এটা তারা করবে। এই চোরাগোপ্তা খুন করার উদ্যোগ তার একটা রূপ। আরও কঠিনতর পরিকল্পনা নিয়ে তাদের প্রস্তুতি আছে।“
তিন বলেন, “দেশের সবাইকে জোর গলায় বলতে হবে আমরা তরুণদের রক্ষা করবো। এখানে পুরনো আমলের দাসত্ব মেনে যারা আছে তাদেরকে দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে আমরা সবাই মিলে দেশের ওপর আমাদের পরিপূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠিত করবো।”
তিনি নির্বাচন পর্যন্ত বাকি দিনগুলো উৎসবমুখর করে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যেহেতু আমাদের কিশোর কিশোরী তরুণ তরুণীদের মনে কোনো ভয়ডর নেই তাই তারা নির্বাচনের আগের দু’মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে উৎসবমুখর করে রাখবে। সব রকমের হিংসা, কোন্দল থেকে দেশকে বাঁচিয়ে রাখবে।“