মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ২ ১৪৩২, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

আমাদের তরুণদের রক্ষা করুন, জাতির ‍উদ্দেশে ভাষণে ইউনূস খালেদা জিয়া ইতিহাসের ‘গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ’: ইউনূস হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের সহযোগী কবির ৭ দিনের রিমান্ডে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধ নয়, ভারতের বিরুদ্ধে ছিল: আমির হামজা নারায়ণগঞ্জে ‘নিরাপত্তা শঙ্কায়’ ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা বিএনপি প্রার্থীর একাত্তর ও চব্বিশের দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি: নাহিদ স্বাধীনতার শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়: ফখরুল প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী জাহাজে মার্কিন হামলায় ৮ নিহত ‘ঘৃণার প্রতীক’ পাকিস্তানের পতাকা আঁকা নিয়ে জবিতে তুলকালাম বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টা মহান বিজয় দিবস আজ ওসমান হাদিকে গুলি: শ্যুটার ফয়সালের সহযোগী গ্রেপ্তার বিবিসির বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা ট্রাম্পের

রাজনীতি

গুলশানে তারেকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাসা, অফিস করবেন কোথায়?

 প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গুলশানে তারেকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাসা, অফিস করবেন কোথায়?

দেড় যুগ নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর তারেক রহমান কোথায় থাকবেন, কোথায় বসবেন, সেই প্রস্তুতি গুছিয়ে আনছে তার দল বিএনপি।

তিনি উঠবেন গুলশান অ্যাভেনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে। এর পাশেই ‘ফিরোজা’ নামের বাড়িটিতে থাকেন তার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বারও তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া গুলশানে আরেকটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

মঙ্গলবার বিকালে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে ১০/সির নতুন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে জাতীয় রিল-মেকিং প্রতিযোগিতা কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন।

আগামী ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক। এ উপলক্ষে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

২৫ তারিখ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে সংবর্ধনা জানাবে নেতাকর্মীরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের নেতার অপেক্ষা আছে দেশবাসী। সেদিন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সড়কে দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবে। আমরা সেই প্রস্তুতির কাজ করছি।”

তারেক রহমানকে কীভাবে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে তা নিয়ে সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের যৌথসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারেক রহমান যে বাসভবনে উঠবেন, সেই ১৯৬ নম্বর বাড়িটি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরে তার সহধর্মিনী খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভা।

মাস কয়েক আগে এ বাড়ির দলিলপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে হস্তান্তর করেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু।

এ বাড়ির প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে নিরাপত্তা ছাউনি বসানো হয়েছে। সড়কের সামনে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মী বললেন, “এখানে তারেক রহমান সাহেব থাকবেন, সেজন্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের পাশাপাশি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আলাদা চেম্বার রয়েছে। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্যও চেম্বার করা হলো।

নতুন অফিস, প্রথম অনুষ্ঠান

গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি চারতলা ভবনটিতে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখানে দোতলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম। অন্যান্য তলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে; আছে গবেষণা সেল।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, “আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, তারা এখন অধীর আগ্রহে সময় গুনছি— কখন আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র আধুনিক স্বনির্ভর রাষ্ট্র নির্মাণে স্বপ্নদ্রষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন।

“সেই লক্ষ্যে আপনি যাই বলুন, আমাদের সব প্রস্তুতি তাকেই ঘিরে। ইনশাল্লাহ দেশের মানুষ যেমন প্রত্যাশা করছে; আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা হারানো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন।”

নতুন অফিস খোলার পর প্রথমবারের মতো এদিন আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মাহাদী আমিন বলেন, “এটি বিএনপির একটি কার্যালয়। এখান থেকে নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।”

মাহাদী আমিন বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই অবগত যে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরবেন, ইনশাআল্লাহ। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে গণমানুষের মাঝে রয়েছে তীব্র আবেগ, আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ।

“আমাদের নেতা বিশ্বাস করেন, আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতি এবং আদর্শের ঊর্ধ্বে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমাদের এ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।”

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে বিএনপি প্রণীত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচি নিয়ে ঢাকায় এক সপ্তাহব্যাপী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন।

“আমাদের তৃণমূলের নেতা গণমানুষের নেতা জনাব তারেক রহমান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন; যেহেতু এই বাংলাদেশটা আমাদের সবার, আমাদের ধর্ম-বর্ণ-আদর্শ-দর্শন রাজনীতি অবস্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের দল-মত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সবাইকে এক হয়ে এই দেশটাকে গড়তে হবে। আমাদের সবাইকে একযোগে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।”

 

রিল-মেকিং প্রতিযোগিতা

মাহাদী আমিন বলেন, “তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা একটি জাতীয় রিল মেকিং প্রতিযোগিতা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের এই আয়োজন শুরু হবে আজকে থেকে এবং এই প্রতিযোগিতা চলমান থাকবে জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

“এই সময়ের মধ্যে দেশ এবং বিদেশের সব শ্রেণি এবং পেশার মানুষ দেশ গড়ার প্রত্যয়—তাদের নিজ নিজ যে পরিকল্পনা, প্রত্যাশা, ভাবনা-চিন্তা তা প্রত্যেকে এক মিনিটের রিল ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে সাবমিট করতে পারবেন।

“এই রিল হতে পারে ছোট্ট একটা ভিডিও, যেখানে যেকোনো কন্টেন্টের মাধ্যমে প্রত্যেকটা অংশগ্রহণকারী তাদের নিজেদের বক্তব্য, স্যাটায়ার, গান, সংলাপ, ডকুমেন্টারি অ্যানিমেশন কিংবা কয়েকটি ছবি বা আর্টের সমন্বয় সেটি সাবমিট করতে পারবেন। যার মাধ্যমে হতে পারে গঠনমূলক সমালোচনা, হতে পারে নতুন কোনো ভাবনা; হতে পারে সুবিস্তৃত কোনো পরিকল্পনা কিংবা ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ।”

তিনি বলেন, “‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’—এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশ গড়ার মহাপরিকল্পনায় দেশের প্রতিটি মানুষকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ করে দেওয়া এবং একটি গণমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ মানুষের যে ভাবনা এবং পরিকল্পনা; সেগুলোকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা।

“আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিন্তাগুলোকে পৌঁছে দিতে চাই এবং তৃণমূলের সাথে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বে যদি বিএনপি আসে; সেই দলের সকল পর্যায় নেতাকর্মীর একটি আন্তরিকতার এবং সৌহার্দের মেলবন্ধন তৈরি করতে চাই।”

মাহাদী আমিন বলেন, “বাংলাদেশের সকল তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ যেকোনো বয়সের যেকোনো নাগরিক তিনি দেশে থাকুক, কিংবা দেশের বাইরে থাকুক—যেন নিজের ভাবনাকে সর্বোচ্চ সৃজনশীল তার মাধ্যমে কন্টেন্ট রূপে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারেন; সেই সুযোগ আমরা এর মাধ্যমে তৈরি করে দিতে চাই।”

তিনি বলেন, “‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’-এই কর্মসূচির সবচাইতে বড় চমক হচ্ছে, যারা বিজয়ী হবেন— মেধাভিত্তিক সেই বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের শীর্ষ ১০ জনকে আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সাথে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একান্ত আলাপচারিতার সুযোগ দেব।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জিয়া উদ্দিন হায়দার, চেয়ারপারসনের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য সাইমুম পারভেজ এবং মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।