শ্রমিক অসন্তোষ, আশুলিয়ায় ২০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা
বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পোশাক শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে অন্তত ২০টি কারখানায় আবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকাসহ আশপাশের এলাকার এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া জানান।
তিনি বলেন, “শ্রমিকরা ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন ছাড়া কোনো বিশৃঙ্খলা করছেন না। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করছে পুলিশ। কোনো কারখানায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি।
“এরপরও যে কোনো সহিংসতা রোধে পুরো শিল্পাঞ্চলে যৌথ বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরিসহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাঁজোয়াযান ও জল কামান।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকরা ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ প্রবেশ করে। এরপর অন্তত ২০টি কারখানার শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করে। অনেকে হাজিরা নিশ্চিত করে কয়েক ঘণ্টা কারখানায় অবস্থান করে বেরিয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে নিউ এইজের তিনটা কারখানা, বান্দু ডিজাইন, মেডলার অ্যাপারেলস ও শারমিন গ্রুপের কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও চলমান অস্থিরতার কারণে নাসা গ্রুপের একাধিক কারখানাসহ ছয়টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে বলে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় চলতি বেতনে জীবনযাত্রা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাৎসরিক বেতন ১৫ শতাংশে বৃদ্ধি, প্রতি মাসে অর্জিত ছুটির টাকা পরিশোধ, নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে কর্মবিরতিসহ আন্দোলনে নেমেছেন তারা। চলমান বেতন-ভাতা নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের দাবি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেই হিসেবে তাদের বেতন বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, “আগে পোশাক শ্রমিকদের ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি করা হতো। সরকার আরও ৪ শতাংশ বাড়ানোর সিন্ধান্ত নিয়েছে। এতে মোট ৯ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি পাবে পোশাক শ্রমিকদের। কিন্তু পোশাক শ্রমিকদের দাবি ১৫ শতাংশ।”
“তবে অনেক কারখানায় শ্রমিকপক্ষ সরকার ঘোষিত বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা না দেওয়ার কারণেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শ্রমিকরা কোনো বিশৃঙ্খলা করছে না। তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করছে। তবে ২০ থেকে ২৫টি কারখানা কর্তৃপক্ষ দুপুরের পর ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যান।”
এদিকে সাধারণ ছুটি দেওয়া একাধিক কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগোযোগের চেষ্টা করলেও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।