বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

ভোট আয়োজনে বিভিন্ন বাহিনীর সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা গণভোট নিয়ে করণীয় কী: অধ্যাদেশের অপেক্ষায় ইসি আচরণবিধি বাস্তবায়নের ‘সক্ষমতা নেই’ ইসির: এনসিপি ডেঙ্গুতে ছয়জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ মাসুদ কারাগারে নাইজেরিয়ার স্কুল অপহরণের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ক্ষোভ ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে রুশ হামলায় নিহত ৯ কেনিয়ায় বন্যায় হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত বিজয় দিবসে এবারও প্যারেড হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তফসিলের পর মাঠ প্রশাসনে একযোগে রদবদল চায় জামায়াত ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাইলেন সিইসি লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৩ বাংলাদেশ ফুটবল দলকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবে দুজনের মৃত্যু জাপানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: পুড়েছে ১৭০টির বেশি ভবন এআই বুদ্বুদ ফাটলে কেউই নিরাপদ থাকবে না: গুগল প্রধান যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের শততম টেস্ট শতরানে রাঙানোর অপেক্ষায় মুশফিক

খেলা

শততম টেস্ট শতরানে রাঙানোর অপেক্ষায় মুশফিক

 প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

শততম টেস্ট শতরানে রাঙানোর অপেক্ষায় মুশফিক

শেষ বেলায় তুমুল উত্তেজনা। নাটকীয় কোনো ম্যাচের শেষ কয়েকটি মুহূর্ত যেন। দিনের খেলার যখন দুই বল বাকি, সেঞ্চুরি ছুঁতেও তখন দুই রান প্রয়োজন মুশফিকুর রহিমের। পঞ্চম বলে প্রিয় সুইপ শট খেললেন তিনি, টাইমিংও হলো দারুণ। গ্যালারি থেকেও ভেসে এলো উল্লাস। কিন্তু বল গেল স্কয়ার লেগে একদম ফিল্ডারে সোজাসুজি। রান হলো কেবল একটিই!

শেষ ডেলিভারিতে স্ট্রাইকে হলো না তার। খানিকটা নাটকীয়তার জন্ম হলো ওভার শেষেও। সময় শেষ নাকি আরেকটি ওভার চালিয়ে নেওয়া যাবে, সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নিলেন আম্পায়াররা। রুদ্ধশ্বাস কয়েকটি মুহূর্ত শেষে আম্পায়া তুলে নিলেন বেলস। গোটা বিকেলে একটু একটু করে জমে ওঠা রোমাঞ্চ পেল না শেষের পরিণতি। অপেক্ষা পরদিন সকালের। শততম টেস্টের প্রথম দিনটি মুশফিক শেষ করলেন ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ২৯২।

এই ম্যাচটি এমনিতেই হয়ে উঠেছে মুশফিকের ম্যাচ। তার শততম টেস্ট ঘিরে রোমাঞ্চের জোয়ার বইছে কদিন ধরেই। টেস্ট শুরুর আগেও সকালে তাকে ঘিরে ছিল নানা আয়োজন। এমন দিনে ব্যাট হাতেও সেঞ্চুরিটা পেলে প্রাপ্তির পূর্ণতায় টইটম্বুর হতো তা। কিন্তু দিন শেষে অপরাজিত তিনি ৯৯ রানে।

ইনিংসের শুরু থেকেই এ দিন মুশফিক ছিলেন বেশ সতর্ক। আয়ারল্যান্ডের বোলিং এমনিতেই ধারহীন। তিনি কোনো ঝুঁকির পথও বেছে নেননি একদমই। ঠাণ্ডা মাথায় সোজা ব্যাটে খেলে গড়েছেন ইনিংস। প্রিয় স্লগ সুইপ বা রিভার্স কিংবা স্কুপ খেলেননি বললেই চলে। ১৮৭ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি মেরেছেন স্রেফ পাঁচটি।

দ্বিতীয় দিন সকালে এক রান করতে পারলে শততম টেস্টে শতরান করা একাদশ ক্রিকেটার হবেন তিনি।

আইরিশদের হয়ে চারটি উইকেটই নিয়েছেন অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ আবারও ভালো শুরু পায় সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে। কোনো বিশেষজ্ঞ পেসার ছাড়াই একাদশ সাজানো আইরিশদের বোলিংয়ের সূচনা করেন দুই অলরাউন্ডার জর্ডান নিল ও কাটির্স ক্যাম্ফার। তবে তেমন কোনো প্রভাব তারা রাখতে পারেননি। বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি অবশ্য আগের টেস্টের মতো অতটা বড় হয়নি জুটি। দুজনের কেউ বড় করতে পারেননি ইনিংস। আউটের ধরন যদিও ছিল ভিন্ন।

ম্যাকব্রাইনের দারুণ একটি ডেলিভারিতে ৩৫ রানে এলবিডব্লিউ হন সাদমান। জুটি থামে ৫২ রানে।

এরপর ম্যাকব্রাইন ও ম্যাথু হামফ্রিজের আঁটসাঁট বোলিংয়ে টানা ১০ ওভার বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। এতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন জয়। ম্যাকব্রাইনকে ক্রিজ ছেড়ে মেরে ৩৪ রানে ধরা পড়েন তিনি মিড অফে।

একটু পরই বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে যাওয়ার একটু পরই দারুণ শটে ছক্কা মারেন তিনি ম্যাকব্রাইনকে। কিন্তু ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়ে যান তিনি পরের বলেই।

৯৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কিছুটা চাপে।

সেই চাপ আরও বাড়তে পরত, যদি ম্যাকব্রাইনের বলে ২৩ রানে মুমিনুলের ক্যাচ না পড়ত।

জীবন পেয়ে মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন মুমিনুল। ক্রমে সরে যায় চাপ। মুমিনুল আরেক দফা রক্ষা পান ৪৯ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।

দুবার জীবন পেয়েও সেঞ্চুরি কাছে যেতে পারেননি মুমিনুল। চা বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই তার ইনিংস শেষ হয় ৬৩ রানে।

বাকি সময়টায় অনায়াসেই খেলে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়ে তোলেন মুশফিক ও লিটন কুমার দাস। তিন স্পিনারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করে ফিল্ডার ছড়িয়ে মাঠ সাজিয়ে ব্যাটসম্যানদের বড় শট খেলতে প্রলুব্ধ করেন আইরিশ অধিনায়ক। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি খুব একটা।

দিনের শেষ আধঘণ্টায় উত্তেজন ক্রমেই বাড়তে থাকে মুশফিক শতরানের কাছে এগিয়ে যাওয়ায়। ৮০ ওভার শেষে আইরিশরা যখন দ্বিতীয় নতুন বল নেয়, তার রান তখন ৮১। তিনি যখন ৯০ স্পর্শ করেন, ওভার বাকি তখনও ৬টি।

কিন্তু শেষ দিকে আইরিশরা সময় ক্ষেপণের পথ বেছে নেন। মুশফিকও কোনো তাড়াহুড়ো করেননি। শেষ ওভার শুরুর সময় তার প্রয়োজন ছিল তিন রানের। স্ট্রাইকে ছিলেন তিনিই। ওভারের তৃতীয় বলে তিনি পান সিঙ্গল। পরের বলে লিটন নেন এক রান। মুশফিকের সম্ভাবনা জেগে ওঠে আবার। কিন্তু পঞ্চম বলে কেবল এক রানই নিতে পারেন তিনি। শেষ বলটি খেলেন লিটন। তিনি অপরাজিত রয়ে যান ৪৭ রানে।

শেষ ওভারের প্রতিটি ডেলিভারি করার আগেই বেশ কিছুটা সময় নেন লেগ স্পিনার গ্যাভিন হোয়ে, যাতে ৯০ ওভারের পর আর খেলা না হয়।

মুশফিকের সেঞ্চুরিটা এ দিন হয়ে গেলে বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু তো আর হতো না। তবে এই যে এক রানের দূরত্ব, উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা নিয়ে রাত কাটিয়ে সকালের দিকে তাকিয়ে থাকা, এই অপেক্ষার রোমাঞ্চটুকুও খুব একটা মন্দ নয়!

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৯২/৪ (জয় ৩৪, সাদমান ৩৫, মুমিনুল ৬৩, শান্ত ৮, মুশফিক ৯৯*, লিটন ৪৭*; নিল ৮-০-৩৭-০, ক‍্যাম্ফার ৮-০-২৮-০, ম‍্যাকব্রাইন ২৬-২-৮২-৪, হামফ্রিজ ২৬-০-৮৩-০, হোয়ে ১৯-১-৪৮-০, টেক্টর ৩-০-১০-০)