এদেশের মানুষই ছিল তার পরিবার, সত্তা, অস্তিত্ব: তারেক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় অনিঃশেষ ভূমিকা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “দেশের জন্য তিনি হারিয়েছেন স্বামী, হারিয়েছেন সন্তান। তাই এই দেশ, এই দেশের মানুষই ছিল তাঁর পরিবার, তাঁর সত্তা, তাঁর অস্তিত্ব।
“তিনি রেখে গেছেন জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
যুক্তরাজ্যে দেড় দশকের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরা তারেক রহমান সেদিন সংবর্ধনা, বক্তৃতা শেষে মা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
দেশে ফেরার পর থেকে তিনি দিনের অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি নিয়মিতভাবে মাকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় যখন খালেদা জিয়ার মৃত্যু ঘোষণা করা হয়, তখন তারেকসহ পরিবারের সবাই হাসপাতালেই ছিলেন।
মায়ের মৃত্যুর কথা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লিখেছেন, “অনেকের কাছে তিনি ছিলেন দেশনেত্রী, আপোষহীন নেত্রী; অনেকের কাছে গণতন্ত্রের মা, বাংলাদেশের মা। আজ দেশ গভীরভাবে শোকাহত এমন একজন পথপ্রদর্শককে হারিয়ে, যিনি দেশের গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় অনিঃশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
“আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। আজীবন লড়েছেন স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে; নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।”
গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো খালেদা জিয়ার চার দশকের রাজনৈতিক জীবনের বড় সময় কেটেছে রাজপথের আন্দোলনে। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন; তবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কখনো তিনি হারেননি।
তারেক রহমান লিখেছেন, “ত্যাগ ও সংগ্রামে ভাস্বর হয়েও, তিনি ছিলেন পরিবারের সত্যিকারের অভিভাবক; এমন একজন আলোকবর্তিকা যাঁর অপরিসীম ভালোবাসা আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়েও শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়েছে।
“তিনি বারবার গ্রেফতার হয়েছেন, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সর্বোচ্চ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও যন্ত্রণা, একাকিত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেও তিনি অদম্য সাহস, সহানুভূতি ও দেশপ্রেম সঞ্চার করেছিলেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে।”
স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া, তখন তিনি নিতান্তই একজন গৃহবধূ।
গণতন্ত্রের সংগ্রামে খালেদা জিয়ার পারিবারিক ক্ষতির প্রসঙ্গে টেনে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান বলেছেন, “দেশের জন্য তিনি হারিয়েছেন স্বামী, হারিয়েছেন সন্তান। তাই এই দেশ, এই দেশের মানুষই ছিল তাঁর পরিবার, তাঁর সত্তা, তাঁর অস্তিত্ব।
“তিনি রেখে গেছেন জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। ওই সময়ে লন্ডনে নির্বাসিত ছিলেন তারেক রহমান। একদিন পরে কোকোর মরদেহ দেশে এনে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সদ্য মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তারেক রহমান লিখেছেন, “আপনারা সবাই আমার মা’র জন্য দোয়া করবেন।
“তাঁর প্রতি দেশবাসীর আবেগ, ভালোবাসা ও বৈশ্বিক শ্রদ্ধায় আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ।”