গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ‘বিশাল শূন্যতা’ সৃষ্টি হল: ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার শূন্যতা ‘জাতি কখনো পূরণ করতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “এই সংবাদটি নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে হবে, এটা আমরা কখনো ভাবিনি। আমরা এবারও আশা করছিলাম। ঠিক আগের মতই আবারও তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
“আমরা ভারাক্রান্ত…ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার ঘোষণা করেছেন- আজ ভোর ৬টায় আমাদের গণতন্ত্রের মা আমাদের জাতির অভিভাবক আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইল্লাল্লাহি রাজিউন। এই শোক, এই ক্ষতি… এটা অস্বাভাবিক, অপূরণীয়। এই জাতি কোনোদিন পূরণ করতে পারবে না।”
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আর বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন দুইবার।
গত ৪০ দিন ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে মঙ্গলবার ভোর ৬টায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, “যে নেত্রী তার সারাটা জীবন জনগণের অধিকারের জন্য, কল্যাণের জন্য, তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন; সেই নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে নেই। এটা আমরা যারা তার সহকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মী—আমরা এটা ভাবতে পারি না।
“বাংলাদেশের রাজনীতি একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তাই নয় গণতান্ত্রিক পৃথিবীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো। আমরা দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে আমরা দলের কিছু কর্মসূচি নিয়েছি। সেই কর্মসূচিগুলো আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আপনাদের সামনে তুলে ধরছেন।”
‘প্রধান উপদেষ্টার ফোন’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আমাদেরকে ফোন করেছিলেন সাথে সাথে। ইতোমধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, (সকাল) সাড়ে ১০টায় মধ্যেই তারা স্পেশাল ক্যাবিনেট মিটিং করবেন।
“সেই ক্যাবিনেট মিটিংয়ে তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে শেষ কাজগুলো তার জানাজা, তার দাফন…. তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা, তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া—এই বিষয়গুলি নিয়ে তারা সভা করবেন। এরপরে আমরা পুরো জিনিসটাকে সমন্বয়ক করে আবার সেটা আপনাদের সামনে জানাব।”
‘স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা’
ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিএনপি সাত দিনব্যাপী বিএনপি শোক পালন করবে। নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সহ দেশের সকল কার্যালয়ে সাত দিন কালো পতাকা উত্তোলন থাকবে। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা এই সাত দিনব্যাপী কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।
“প্রতিটি দলীয় কার্যালয় দেশনেত্রীর জন্য সাতদিন ব্যাপী কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলা পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে শোক বই খোলা হবে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং হবে সাড়ে ১২টায়। সে মিটিংয়ে আমরা আরো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করব।
“আর সরকার যে সমস্ত কর্মসূচি তার সঙ্গে সমন্বয় আমরা করব এবং সে বিষয়গুলো আমরা আপনাদেরকে পরে জানাব।”
এর আগে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বিএনপি চেয়ারপারসনের মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।
তিনি বলেন, “আপনারা সবাই জানেন নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখে সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে এভারকেয়ার হসপিটালে আমাদের দেশনেত্রী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আমাদের জাতির মা খালেদা জিয়া ভর্তি হয়েছিলেন।
“আমরা দীর্ঘ এক মাস ১০ দিন তার বিভিন্ন চিকিৎসা করে উনাকে সুস্থ করার জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল; বাট আমি মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে আজ সকাল আজ ভোর ৬টায় ৩০শে ডিসেম্বর উনার মৃত্যু ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করেছিলাম। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে উনার জন্য দোয়া চাই, আপনারা দোয়া করবেন উনি যেন বেহেশত নাসী হোন।”
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ছিলেন।
লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের বড় সময় কেটেছে রাজপথের আন্দোলনে। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন; তবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কখনো তিনি হারেননি।