মঙ্গলবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ১৬ ১৪৩২, ১০ রজব ১৪৪৭

জাতীয়

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, বুধবার সাধারণ ছুটি

 আপডেট: ১৪:০২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, বুধবার সাধারণ ছুটি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার, বুধবার তার জানাজার দিনে এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে তার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে প্রচার করা হয়।

৪০ দিন ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে মঙ্গলবার ভোর ৬টায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আর বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন দুইবার।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, ''আজ আমাদের পুরো জাতি গভীর শোক ও বেদনায় নিস্তব্ধ। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

''বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। তার মৃত্যুতে জাতি এক মহান অভিভাবককে হারিয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই গভীর শোকের মুহুর্তে আমি তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং অগণিত কর্মী-সমর্থকের প্রতি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

“মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা—তিনি যেন আমাদের সবাইকে এই গভীর শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দান করেন।''

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ''বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক পরম মহিমান্বিত ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অসামান্য ভূমিকা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার আপসহীন নেতৃত্ব বারবার জাতিকে গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে এবং মুক্তির প্রেরণা যুগিয়েছে।

“দেশ ও জাতির প্রতি তার সমুজ্জ্বল অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।''

ইউনূস বলেন, ''তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে তার অবিচল ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন একজন মহান, দূরদর্শী ও নিখাঁদ দেশপ্রেমিক নেত্রীর শূন্যতা পূরণ হবার নয়।''

জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ''এই শোকাবহ মুহূর্তে আপনাদের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান, আসুন আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে মহান আল্লাহর দরবারে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

“একই সঙ্গে জাতির এই কঠিন সময়ে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। শোকের এই সময়ে কেউ যেন অস্থিতিশীলতা বা নাশকতার অপচেষ্টা চালাতে না পারে, সে বিষয়ে আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এই সময়ে আমাদের সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত জরুরি।''

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং আগামীকাল তার নামাজে জানাজার দিনে একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছি।

“নামাজে জানাজাসহ সব ধরনের শোক পালনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি সবার প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।''

ইউনূস বলেন, ''আমি জানি, আপনারা সবাই এই সময়ে অনেক আবেগাপ্লুত। আমি আশা করছি, শোকের এই সময়ে আপনারা ধৈর্যের পরিচয় দেবেন এবং তার জানাজাসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা পালনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করবেন।

“মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ধৈর্য, শক্তি ও ঐক্যবদ্ধ থাকার ক্ষমতা দিন।'