বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ৩১ ১৪৩২, ২০ মুহররম ১৪৪৭

ব্রেকিং

এনবিআর সংস্কার পরিষদের বহু সদস্যের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’, মাঠে ফেরার প্রস্তুতি ৭.৭৫ কোটি টাকার স্থাপনা ভেঙে নতুন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ার কাজ শুরু ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল: ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সংস্কার ছাড়া যেনতেন নির্বাচন চায় না জামায়াত: শফিকুর রহমান আশরাফুল, সাকিবদের পর এবার নতুনদের চিনছে শ্রীলঙ্কা বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি করা যাবে না: সাকি সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায়(পিআর) ‘ভবিষ্যৎ বিভক্তি’র শঙ্কা তারেক রহমানের জুলাই বিপ্লব নিয়ে কটূক্তি করায় কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ক্লোজড কলেজ প্যাডে ছাত্রদলের প্রচারণা? অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা ঘিরে বিতর্ক মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সংঘাত বিস্তার: বিশ্লেষণ কলম্বিয়ায় পাহাড়ধসে মৃত্যু ১৬, নিখোঁজ অন্তত ৮ “ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা তেহরানে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার চলছেই, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫০ ইরানে বাংলাদেশিদের সহায়তায় হটলাইন চালু উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: সিলেটে তিনজন কারাগারে ইসরায়েলের টার্গেটে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

ইসলাম

স্বাধীনতা সুরক্ষাই বিজয়ের প্রাণ

মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ

 আপডেট: ১৭:৫৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

স্বাধীনতা সুরক্ষাই বিজয়ের প্রাণ

যে কোনো বড় বিষয় অর্জন করা কঠিন কাজ। কিন্তু অর্জিত বিষয়টিকে রক্ষা করা তার চেয়েও কঠিন, গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি কাজ। এই নীতিটি যদি আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে, রাষ্ট্রের অর্জিত স্বাধীনতা ও স্বাধীন অস্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় তাহলে সেটি আরও জোরালোভাবে ধরা পড়ে। অর্জিত স্বাধীনতা ও বিজয়ের চল্লিশ বছর পূর্তিকালে অর্জনকে রক্ষা করার বিষয়টি মিলিয়ে দেখা এবং এর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ১৯৭১ সালে নয় মাসের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন অস্তিত্ব লাভ করেছে। এর আগে এ অঞ্চলটি ছিল পাকিস্তানের অংশ-পূর্ব পাকিস্তান। তারও আগে (১৯৪৭ সনের আগে) এ অঞ্চলটি পূর্ববঙ্গ হিসেবে খ্যাত ছিল এবং বৃহত্তর বৃটিশ উপনিবেশ-পাক-ভারত উপমহাদেশের অংশ ছিল। এজন্যই বলা হয়, এ অঞ্চলটি গত ষাট বছরে দু’ দুবার স্বাধীন হয়েছে। একবার বৃটিশ উপনিবেশ থেকে, আরেকবার যুক্ত পাকিস্তানের কাঠামো থেকে। শেষোক্ত অর্জনকেই এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয় স্বাধীনতা অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় হিসেবেও এ পর্বটিকেই বিবেচনা করা হয়।

সে বিজয় বা অর্জনের পর এরই মধ্যে চল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এই চল্লিশ বছরে আমাদের স্বাধীনতার স্বরূপ ও মূল অবয়ব কতোট অক্ষুণ্ণ আছে কিংবা স্বাধীনতার সাফল্য কতটুকু বজায় রয়েছে-তার একটি পরিমাপ করা এবং রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্বকে শংকামুক্ত করতে আরও সতর্ক হওয়ার বিষয়টি নানা কারণে এখন বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। কারণ, অর্জিত বিষয় রক্ষা করতে না পারলে অর্জনের কোনো মূল্য থাকে না।

দুই.

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেবল দেশের স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে নিবেদিত হওয়ায় তাকে কোনো খেতাব দেওয়া হয়নি। ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার হওয়ার পরও তিনি খেতাব পাননি। বিজয়ের পর পর মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী রাষ্ট্র-ভারতে দেশের সম্পদ পাচার হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পর্যন্ত নিক্ষেপ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রথমে সমাজতান্ত্রিক ধারায় এবং জীবনের শেষ পাঁচ-ছয় বছর ইসলামী ধারার রাজনীতিতে পুরোপুরি নিবেদিত ছিলেন তিনি। তিনি একটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যেটি পরে ছোট পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল-‘অরক্ষিত্স্বাধীনতাই পরাধীনতা’। শিরোনামের মধ্যেই আসলে পুরো প্রবন্ধের বক্তব্য ফুটে উঠেছে। তিনি তার প্রবন্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রটির আগ্রাসী তৎপরতার মুখে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংকটের বিভিন্ন চেহারা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে তার প্রবন্ধের এই শিরোনামটি বহু দেশপ্রেমিক লেখক-বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে দেখেছি।

মরহুম মেজর এম এ জলিলের প্রবন্ধের শিরোনামটির ভাব ও বক্তব্য অক্ষুণ্ণ রেখে উল্টো করে বললে আমরা এখন বলতে পারি, স্বাধীনতার সুরক্ষাই বিজয়ের প্রাণ বা বিজয়ের স্বার্থকতা। কারণ স্বাধীনতা অর্জনের পর তার নানামাত্রিক আবেদন ও দাবি ধারণ করতে না পারলে প্রকৃত স্বাধীনতা টিকে থাকে না; বরং স্বাধীনতার নামে একটা মোড়ক শুধু অবশিষ্ট থাকে। ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রের হৃদয় ও আত্মায় পরাধীনতার সব আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠে।

ভূ-গোল ঠিক রেখেও স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব খোকলা করে দেওয়া যায়। একটি রাষ্ট্রের মানচিত্রে বড় রকম আঘাত না করেও তার পানি, ভূমি, পরিবেশ, অর্থ, ব্যবসা, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও চেতনায় পরাধীনতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বহু সূক্ষ্ম ও পরিণামদর্শী মানুষের বিবেচনায় আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে এখন সেই বিষটি বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্র ভারত।

তিন.

বাংলাদেশ ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটা একটি রাষ্ট্রের নাম। এ রাষ্ট্রটি সেদিন থেকেই স্বাধীন। সংবিধান, নীতি-ধারা ও চর্চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অটুটই আছে। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র-সত্ত্বার স্বকীয়তা ও সার্বভৌমত্বের যেসব সূচক ও উপাদান থাকে তার সবকটিই এখনও অক্ষুণ্ণ আছে কি না-এ প্রশ্নটি আজ বেশির ভাগ নাগরিকের মনে উঁকি দিচ্ছে।

স্বাধীনতা বিঘ্নিত ও অরক্ষিত হওয়ার প্রধান সূচক হচ্ছে মানচিত্রে আঘাত আসা। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে এমন সমস্যা এখন প্রকট যে, সমুদ্রে আমাদের সীমানার শতাধিক মাইল অঞ্চল হাতছাড়া হওয়ার জোগাড় এবং সে অঞ্চলে রয়েছে একাধিক তেল-গ্যাস ক্ষেত্র। সম্প্রতি সিলেটসহ দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে সীমান্ত সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশের একরের পর একর জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশের জন্য। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে অবস্থিত তালপট্টি দ্বীপও এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা এবং একতরফা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও প্রকাশ্য।

এছাড়াও স্বাধীনতা অরক্ষিত হওয়ার অপর একটি দিক হচ্ছে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অপর কোনো দেশের পক্ষ থেকে কোনো শংকামূলক উপাদান ও উপলক্ষ বিরাজ করা। সম্প্রতি ভারতের এক অংশ থেকে অপর অংশে যাওয়ার করিডোর দিয়ে সে শংকামূলক উপলক্ষ তৈরি করা হয়েছে।

স্বাধীনতার সুরক্ষা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আরেকটি দিক হচ্ছে অপর দেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নদী-প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে পানি আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে বিপর্যস্ত করে তোলা। সত্তরের দশক থেকে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলের নদীগুলোকে পানিশূন্য করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ। এতে স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো শুকিয়ে মাঠ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক আগ্রাসন, বাণিজ্য বৈষম্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, মিডিয়া ও চেতনাগত আগ্রাসনেও এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বকীয়তা বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করছে প্রতিবেশী বড় দেশটি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী এ দেশটি বিজয়ের দিন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল প্রাণকে নির্জীব ও নিষ্প্রাণ রাখতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে। যেমন করছে তারা নেপাল-ভুটানের ক্ষেত্রেও। যার ফলে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকছে না। এ কারণেই প্রতিবেশী দেশের লোকেরা এদেশে এসে এদেশের মন্ত্রীদের সামনে বলতে পারছে, বাংলাদেশ ভারতের ‘বাফার স্টেট’ হবে। তাই বিজয়ের চল্লিশ বছর পর অবশ্যই স্বাধীনতা সুরক্ষার বিষয়ে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সক্রিয় ও সচেতন ভাবনা ভাবতে হবে।

চার.

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমাদের জীবনযাপন ও বসবাস আল্লাহ তাআলার দান। রাষ্ট্রটি মুসলিমপ্রধান। বহু ঝড়-ঝাপটা ও ভ্রুকুটি সত্ত্বেও এ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রধর্ম এখনও ইসলাম। আমাদের প্রধান দুটি প্রতিবেশীর একটি রাষ্ট্র হিন্দুপ্রধান, অপরটি বৌদ্ধপ্রধান। নামে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও হিন্দুপ্রধান প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রটি ইতিহাস ও বর্তমানের যে কোনো বিবেচনায় সবচেয়ে হিংস্র-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগুলোর একটি। এ সাম্প্রদায়িকতা রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রের নাগরিক-মানসিকতা উভয় দিক থেকে এবং দেশের ভেতরে ও বাইরে সবখানে। এ রকম পরিবেশে আমাদের স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

চিন্তার আরেকটি দিক হচ্ছে, উন্নয়নশীল মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ওপর এখন বিশ্বসাম্রাজ্যবাদী শক্তির কু-নজরও সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। এ জন্য মুসলিমবিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলোকেও তারা উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাম্প্রতিক চিত্র এক্ষেত্রে বড় রকম উদাহরণ। এসব দিক নিয়ে বিবেচনায় বসলে সহসাই আমাদের স্বাধীনতার নিশি্ছদ্র নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য নিরন্তর প্রয়াসের প্রয়োজনটা সামনে চলে আসে। তাই অর্থ-বাণিজ্য, খনিজসম্পদ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, পানি ও ভূমিসহ সবক্ষেত্রেই প্রকৃত স্বাধীন একটি অবয়ব ও অস্তিত্ব ধারণ করতে না পারলে এদেশের অর্জিত স্বাধীনতা বিপণ্ণ হতে পারে যে কোনো সময়। বিজয়ের চল্লিশ বছর পূর্তিকালে বাস্তব নানা কারণে এ ধরনের জ্বলন্ত আশঙ্কার বিষয়গুলো নিয়ে বাধ্য হয়ে ভাবতে বসাও বেদনার। বেদনার হলেও উপায় নেই। কারণ কেবল বিজয় আর স্বাধীনতার জয়ধ্বনি তুলে তালি বাজালেই বিজয় অর্থবহ হতে পারে না। সে পর্যায়ে নেই আমরা। স্বাধীনতা সুরক্ষার চিন্তা না করে কোনো উপায় নেই।

এ পর্যায়ে আরেকটি বিষয়ে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। সেটি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ণয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নির্ধারণে কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করতে না পারা। একইভাবে জরুরি রাষ্ট্রীয় ইস্যুগুলোতে ইতিবাচক ঐকমত্য সৃষ্টি করতে না পারা। মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল, সে যুদ্ধের চেতনা কী এবং কতটুকু পর্যন্ত বিস্তৃত-এ সম্পর্কে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে কী কী থাকতে হবে-সে বিষয়েও জাতির কর্ণধারদের কমন কোনো বক্তব্য নেই। ক্ষমতাহীন দলগুলো সংবিধানে এ পর্যন্ত পরস্পরবিরোধী পনেরটি সংশোধনী এনেছে। সংবিধানের মূল চেহারা ও সংশোধিত চেহারা নিয়ে এখন বিতর্ক ও বিশৃঙ্খলা অনেক তুঙ্গে। এতে করে জাতীয় ঐক্যের ভিত তো ফেটে চৌচির হচ্ছেই উল্টো অনৈক্য ও পারস্পরিক বিরাগভাজনে গোটা দেশের নাগরিক সমাজ প্রচন্ডভাবে বিভক্ত হয়ে আছে। স্বাধীনতা সুরক্ষার ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিটা মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয়ের প্রাণ অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইলে দেশের সব মহলের উপর-নীচ সব পর্যায়ে সজাগ, সতর্ক, ঐক্যবদ্ধ ও সাহসী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

পাঁচ.

স্বাধীনতা সুরক্ষার ভিত্তি কী হবে-এটি একটি প্রশ্ন হতে পারে। এ প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে আরেকটি প্রশ্ন নিয়ে আমরা ভাবতে পারি। সেটি হচ্ছে, এখন এ মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর কেউ খড়গহস্ত হলে কেন হবে। উত্তর : এক. এ দেশটি আক্রান্ত হতে পারে সম্ভাবনাময় মুসলিমপ্রধান একটি দেশ বলে। সুতরাং স্বাধীনতা হরণকারী হতে পারে মুসলিম বিনাশী এক বা একাধিক শক্তি। সে হতে পারে বিশ্ব বা আঞ্চলিক কোনো মাদবর-মোড়ল অথবা যৌথশক্তি। দুই. দেশে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য থাকলে বহিঃশক্তির পক্ষে অর্জিত স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেওয়া সহজ হতে পারে।

এবার আমরা প্রথম প্রশ্নের উত্তরে যেতে পারি। সে উত্তরটি হচ্ছে, এ দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষার ভিত্তি হতে হবে ঈমান ও আমানতদারি। ঈমান, ইসলাম ও মুসলিমবিনাশী শক্তির আগ্রাসনের মুখে কোনো দেশের মুসলমানই ঈমান থেকে দূরে সরে গিয়ে বাঁচতে পারেনি। শত্রুরা তাদের রেহাই দেয়নি, বিশ্বাস করেনি। ঈমানহীন মুসলিম আল্লাহর মদদ পায়নি, শত্রুর করুণাও পায়নি। অসহায় পতন হয়েছে তাদের। এজন্যই মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রধান অবলম্বন ঈমান। পূর্ণাঙ্গ মুমিনের জীবন ও চেতনা ধারণ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা হবে না। নাগরিকদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধ চেতনা গড়ে উঠার জন্য সর্বব্যাপী ঈমানের বলে বলীয়ান শক্তির প্রয়োজন সর্বাধিক।

আর প্রয়োজন আমানতদারির। দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্যের অবক্ষয়ে ডুবে গেলে ছোট শত্রুও ‘বড় ভূমিকা’ রাখার সুযোগ পেয়ে যায়। তাই আমানতদারির জীবন অবলম্বন করতে হবে। এই আমানতদারি দ্বিমুখী। বান্দার প্রতি আল্লাহর আমানত। মানুষের প্রতি মানুষের আমানত, এই দুই আমানতের যথাযথ মর্যাদা দিলে ইনশাআল্লাহ স্বাধীনতার সুরক্ষা নিয়ে বারবার শংকিত হতে হবে না এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাধীনতার প্রাণ ছিনিয়ে নেওয়ার মতো কোনো শক্তির মুখোমুখিও হতে হবে না আমাদের।