মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

বাজেট কফি চেইন এলএপিকে ঘিরে বিতর্ক, বার্লিনে ক্ষোভ-প্রতিবাদ ট্রাম্পের সঙ্গে `মুখোমুখি` আলোচনায় প্রস্তুত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো জাতিসংঘের গাজা প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের অধিকার পূরণে ব্যর্থ: হামাস জাতিসংঘের গাজা ভোটকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন মাসে গড়ে ঢাকায় ২০ হত্যা: পুলিশ নির্বাচন `উৎসবমুখর` করতে তথ্যচিত্র বানাবে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা স্ত্রী-কন্যাসহ নানকের ৫৭ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও স্ত্রীর ৩৩ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ লি‌বিয়া থে‌কে দে‌শে ফি‌রলেন ১৭০ বাংলা‌দে‌শি আগামী সপ্তাহ থেকে ক্রমশ তাপমাত্রা কমবে হাসিনার বিরুদ্ধে রায় প্রমাণ করে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়: প্রধান উপদেষ্টা কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর দণ্ডিত আসামির বক্তব্য প্রচার নয়: এনসিএসএ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন

আন্তর্জাতিক

বাজেট কফি চেইন এলএপিকে ঘিরে বিতর্ক, বার্লিনে ক্ষোভ-প্রতিবাদ

 প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

বাজেট কফি চেইন এলএপিকে ঘিরে বিতর্ক, বার্লিনে ক্ষোভ-প্রতিবাদ

গাড় নীল রঙের বৈদ্যুতিক সাইনবোর্ড দেখে সহজেই চেনা যায় ‘এলএপি কফি’ হাউজগুলো। গত দুবছরে বার্লিনের আধুনিক এলাকাগুলোতে এই ক্যাফে চেইন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সাদামাটা সাজসজ্জা, সহজলভ্য সেবা এবং মাত্র ২.৫০ ইউরো (২.৯০ ডলার) মূল্যে ক্যাপুচিনো পাওয়া যায় বলে বাজেট সচেতন বার্লিনবাসীর কাছে এই কফিহাউজ স্বস্তির ঠিকানা।

তবে ‘লাইফ অ্যামং পিপল’ (এলএপি) নামে পরিচিত এই স্টার্টআপের বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্যাফেগুলোকে কোণঠাসা করার অভিযোগ উঠেছে। 

সমালোচকরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত তাদের শাখা বাড়াচ্ছে। ফলে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের ক্যাফে বন্ধ করতে বা সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর জেরে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ভাঙচুরের মত ঘটনাও ঘটেছে।

২০২৩ সালে বার্লিনে যাত্রা শুরু করা এলএপি বর্তমানে রাজধানীতেই ১৬টি শাখা রয়েছে। পাশাপাশি হ্যামবুর্গ ও মিউনিখে আরও ৮টি শাখা পরিচালনা করছে।

ক্যাফেগুলোর ভেতরে আসন ব্যবস্থা খুবই সীমিত। মূল ভাবনা হল, দোকানের আকর্ষণীয় সাজসজ্জার সামনে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার জন্য ছবি তোলা। এরপর এলএপিুএর সিগনেচার নীল রঙের কাপে কফি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া।

কাউন্টারের পেছনে কর্মীরা টাচস্ক্রিনে অর্ডার করা কফির লোগোতে প্রেস করেন। এরপরই মেশিনটি চালু হয় এবং কফি বেরিয়ে আসে। এতে আলাদা করে গ্রাইন্ড বা ফিল্টার করার দরকার হয় না।

‘খুবই দ্রুত!’ পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করলেন ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আরতুর ক্লুগে। বার্লিনের ট্রেন্ডি প্রেনৎসলাউয়ার বার্গ এলাকায় একটি শাখা থেকে কফি নিচ্ছিলেন তিনি। 

আরতুর আরও বলেন, কফির মান ‘মোটামুটি ভালো’। তবে তিনি মূলত এলএপিুতে যান দামের কারণেই।

দেশটিতে গত এক বছরে কফির দাম ২১.৩ শতাংশ বেড়েছে। বার্লিনের এই শিক্ষার্থীর ভাষায়, ‘দুই-তিন ইউরোতে কফি পাওয়া সত্যিই সাশ্রয়ী।’

‘ন্যায্য ও সৎ কফি’
তবে বার্লিনের সবাই এই নতুন চেইনকে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। অক্টোবর মাসে শহরের কয়েকটি শাখার বাইরের অংশে লাল রঙ স্প্রে করে ভাঙচুর করা হয়। 

রাস্তার পোস্টারগুলোতে বলা হয়েছে, চেইনটির ‘আক্রমণাত্মক’ সম্প্রসারণ ঘটছে।  এটিকে ‘রোটেন চেরি অন টপ অব অ্যা জেন্ট্রিফিকেশনের প্রসেস’ বা ‘শহুরে উন্নয়নের কারণে স্থানীয়দের বিতাড়ন’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই কফি চেইন স্থানীয় মানুষ ও ছোট ব্যবসাগুলোকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করছে। 

কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত ‘আন্টিজ ক্যাফে’র মালিক উমুত একিনচি মনে করেন, এলএপি বাজারের ধারা বদলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রেনৎসলাউর বারর্গে এখনও ম্যাকডোনাল্ডস বা স্টারবাকসের মত বৈশ্বিক চেইন ঢুকতে পারেনি। অথচ এলএপি সেখানে ইতোমধ্যে ছয়টি শাখা খুলেছে। 

একিনসি বলেন, ‘ওদের তো শুধু একটা বাটন চাপতে হয়। কফি বেরিয়ে আসে, তারপর গ্রাহককে বিদায়—এতেই কাজ শেষ।’

তিনি আরও বলেন, মানুষ দাম কম বলে খুশি, এটা বুঝতে পারি। কিন্তু এর ফলে অন্য ছোট কফিশপগুলো টিকে থাকতে পারছে না।

এলএপি-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা রালফ হাগে এএফপিকে বলেন, তারা আসলে গ্রাহকদের ‘ন্যায্য দামে ভালো কফি’ দিতে চায়। এর আগে রেডবুল ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে কাজ করেছেন তিনি।

তার ভাষায়, গত ৩০ বছরে কফি তৈরির ক্ষেত্রে খুব বেশি নতুন ধারণা তৈরি হয়নি। আমরা দাম কম রাখতে পারছি মূলত প্রস্তুত প্রক্রিয়ার দক্ষতা ও প্রযুক্তির কারণে।

তার দাবি, এলএপি কোন বহুজাতিক কর্পোরেশন নয়, বরং একটি ‘স্থানীয় ব্যবসা। আমরা সবসময়ই অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজী আছি।

‘শহরকে বদলে দিচ্ছে’
মারিও (৪৩) নামে একজন সমাজকর্মী ও এলএপিুবিরোধী কর্মী ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তার দাবি, জনপ্রিয় আবাসিক এলাকায় দোকান বা বাণিজ্যিক স্পেসের ভাড়া বাড়িয়ে এলএপি শহরকে বদলে দিচ্ছে।

মারিও বলেন, একদিকে তারা সস্তায় কফি দিচ্ছে, অন্যদিকে অস্বাভাবিক বেশি ভাড়ায় দোকান নিতেও রাজি হচ্ছে।

এলএপি-এর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে দ্রুতবর্ধনশীল প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কাজ করা ইনসাইট পার্টনার্স এবং ফ্লিক্সবাস ও জায়মান পোশাক ব্র্যান্ড জালান্ডোর মালিকানা সংস্থা এইচভি ক্যাপিটাল।

মারিও বলেন, ‘এই বড় চেইনগুলো ছড়িয়ে পড়ায় কম মুনাফা করা ছোট ও স্বাধীন ব্যবসাগুলোর জন্য জায়গা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে।’

এলাকাজুড়ে লাগানো লিফলেটে অভিযোগ করা হয়েছে, সামরিক ড্রোন ও এআইভিত্তিক অস্ত্র উৎপাদন প্রকল্পের  বিনিয়োগকারীরাও এলএপিকে অর্থ জোগান দিচ্ছে।

মারিওর আশঙ্কা, এই ধারা চলতে থাকলে শহরে শুধু বড় তহবিল-সমর্থিত চেইন আর বিলাসবহুল রেস্তোরাঁই টিকে থাকবে। ছোট ব্যবসায়ীদের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।