শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

কাদিয়ানী এবং অন্যান্য কাফেরের মধ্যে পার্থক্য

মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ.

 প্রকাশিত: ২১:১০, ১১ জানুয়ারি ২০২২

কাদিয়ানী এবং অন্যান্য কাফেরের মধ্যে পার্থক্য

[এটি হযরত মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ.-এর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ।

এখানে তা সংক্ষিপ্ত আকারে পেশ করা হল। -অনুবাদক]

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى.

আমাদের অনেক ভাইয়ের মনেই প্রশ্ন, পৃথিবীতে কাদিয়ানীদের মতো অমুসলিম তো আরও কত আছে। ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু অমুক তমুক আরও কত। কিন্তু কাদিয়ানীদের প্রতিহত করার জন্য যেমন স্বতন্ত্র সংগঠন ও দল রয়েছে অন্যান্য কাফেরদের প্রতিহত করার জন্য তো এমন স্বতন্ত্র ও বৈশ্বিক কোনো সংগঠন নেই। তাহলে হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ. থেকে শাইখুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ বানূরী রাহ. পর্যন্ত এবং আমীরে শরীয়ত সায়্যিদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রাহ. থেকে হযরত মাওলানা মুফতী মাহমূদ রাহ. পর্যন্ত সকল আকাবির কাদিয়ানীদের বিষয়ে কেন এত গুরুত্ব দিলেন? কাদিয়ানী এবং অন্যান্য অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য কী?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটা উদাহরণ দিচ্ছি- আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, শরীয়তে মদ নিষিদ্ধ। মদ পান করা, মদ বানানো, বিক্রি করা সবই হারাম। আপনারা এটাও জানেন, শরীয়তে শূকর হারাম এবং নাপাক। শূকরের গোশত বিক্রি করা, লেনদেন করা, খাওয়া অকাট্যভাবে হারাম। এখন এক ব্যক্তি কেবল মদ বিক্রি করে, সেও অপরাধী। আবার আরেকজন মদের বোতলে যমযমের লেবেল লাগিয়ে মদকে যমযম পানি বলে বিক্রি করে, সেও অপরাধী। কিন্তু দুই অপরাধী কি সমান? তেমনিভাবে এক ব্যক্তি শূকরের গোশত বিক্রি করে এবং স্পষ্ট বলে দেয়, এটা শূকরের গোশত, যার ইচ্ছা নেবে, যার ইচ্ছা নেবে না। আরেক ব্যক্তি শূকর ও কুকুরের গোশত ছাগলের গোশত বলে বিক্রি করে। এরা উভয়েই অপরাধী, কিন্তু উভয়ের অপরাধের ধরনের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। একজন হারামকে হারাম বলেই বিক্রি করে। আরেকজন সেই হারামকে হালাল বলে বিক্রি করে। 

যেই পার্থক্য শূকরের গোশতকে শূকরের গোশত বলে বিক্রেতা এবং শূকরের গোশতকে ছাগল বা দুম্বার গোশত বলে বিক্রেতার মাঝে, ঠিক একই পার্থক্য ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দু এবং কাদিয়ানীদের মধ্যে। 

কুফর সর্বাবস্থায়ই কুফর। তবে অন্যান্য কাফেররা তাদের কুফরকে ইসলাম বলে না; কিন্তু কাদিয়ানীরা তাদের কুফরকে ইসলাম বলে মানুষকে ধোঁকা দেয়।

কাফের তিন প্রকার : এক. যারা প্রকাশ্য কাফের। দুই. যারা ভেতরে ভেতরে কাফের, তবে প্রকাশ্যে নিজেকে মুসলমান বলে। তিন. যারা নিজের কুফরকে ইসলাম প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

প্রথম প্রকারের কাফের তো সুস্পষ্ট কাফের। তাতে ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু সকলেই অন্তর্ভুক্ত। মক্কার মুশরিকরাও এর অন্তর্ভুক্ত। এরা প্রকাশ্য এবং সুস্পষ্ট কাফের।

দ্বিতীয় প্রকারকে মুনাফিক বলে। যারা মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, কিন্তু মনে কুফর লালন করে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন- 

اِذَا جَآءَكَ الْمُنٰفِقُوْنَ قَالُوْا نَشْهَدُ اِنَّكَ لَرَسُوْلُ اللهِ ۘ وَ اللهُ یَعْلَمُ اِنَّكَ لَرَسُوْلُهٗ  وَ اللهُ یَشْهَدُ اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ لَكٰذِبُوْنَ.

অর্থাৎ মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলে, আমরা সাক্ষ্য দেই, আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তাআলা জানেন, আপনি বাস্তবিকই আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ সাক্ষ্য দেন, মুনাফিকরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। -সূরা মুনাফিকূন (৬৩) : ১

মুনাফিকদের কুফর সাধারণ কাফেরদের চে’ও বড়। কেননা তারা কুফর ও মিথ্যাকে মিশ্রণ করে। তারা কালিমা তায়্যিবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ পড়ে কুফর ও মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে। এই মুনাফিকদের চে’ও ওই তৃতীয় প্রকারের কাফেররা বড় অপরাধী, যারা নিজেদের কুফরকে ইসলাম বলে। তাদের আকীদা সুস্পষ্ট কুফুরী। অথচ তারা একে ইসলাম বলে উপস্থাপন করে। শরীয়তের পরিভাষায় এদেরকে ‘যিনদীক’ বলা হয়।

সারকথা হল, যারা ভেতরে বাইরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে অথবা গোপনে কুফর লালন করে, তারা কাফের। যারা মনের মধ্যে কুফর গোপন করে আর মুখে মিছামিছি কালিমা পড়ে তারা মুনাফিক। যারা নিজেদের কুফরের ওপর ইসলামের রঙ চড়িয়ে নিজেদের কুফরকে ইসলাম প্রমাণ করার চেষ্টা করে তারা যিনদীক।

যিনদীকের হুকুম

সকল ইমাম এ বিষয়ে একমত, যিনদীক মুরতাদেরই একটি প্রকার। ইসলামী হুকুমতে মুরতাদের শাস্তি যেমন মৃত্যুদ- তেমনই ইসলামী হুকুমতে যিনদীকের শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড।

এখন প্রশ্ন হল, যিনদীক  তওবা করলে, তওবার কারণে তার শাস্তি মাফ হবে কি না? এ বিষয়ে আর্দ্দুরুল মুখতার, ফাতাওয়া শামী (রদ্দুল মুহতার) এবং ফিকহের অন্যান্য কিতাবে আছে,  যিনদীক নিজে এসে তওবা করলে তওবা গ্রহণ করা হবে এবং ইরতিদাদ বা ধর্মত্যাগের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু যদি গ্রেফতার হওয়ার পরে তওবা করে, তাহলে শত তওবা করলেও তওবা গ্রহণ করা হবে না; বরং শাস্তি কার্যকর করা হবে।১

অর্থাৎ যিনদীক নিজ থেকে তওবা করলে তো মাফ পেয়ে যাবে। কিন্তু তওবা করার আগেই যদি গ্রেফতার হয়ে যায়, তাহলে তার শাস্তি আর মাফ হবে না। যেমন যিনা বা ব্যাভিচারের শাস্তি তওবা দ্বারা মাফ হয় না। তওবার পরেও শাস্তি কার্যকর করা হয়। অথবা চুরি করলে যেমন হাত কেটে ফেলা হয় এবং তওবার পরেও শাস্তি মাফ হয় না। তেমনই যিনদীক নিজ থেকে তওবা করার আগেই তাকে গ্রেফতার করা হলে তওবা করলেও শাস্তি মাফ হবে না। (তবে এ শাস্তি কে কার্যকর করবে তা ভিন্ন আলোচ্য বিষয়।)

কাদিয়ানীরা কেন যিনদীক?

ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত, কাদিয়ানীরা কেন যিনদীক। কারণ তারা কাফের হওয়ার সাথে সাথে নিজেদের কুফরকে ইসলাম বলে। নিজেদের ব্যাপারে তারা বলে, ‘আমরা আহমদিয়া জামাত, আমরা মুসলমান। ইসলাম প্রচার করি। নামায পড়ি, রোযা রাখি।’

অথচ তাদের আকীদার একটি বিষয় দেখুন। মুসলমানদের আকীদা হল, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বহু হাদীসে নবীজী বিভিন্নভাবে খতমে নবুওতের বিষয়টি বুঝিয়েছেন।

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী- একথার উদ্দেশ্য হল, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই। আর কাউকে নবুওত দেওয়া হবে না। আল্লাহ তাআলা যত নবী পাঠাবেন বলে নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে সর্বশেষ হলেন, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবী আসার ধারা পূর্ণ হয়ে গেছে।

কাদিয়ানীরা বলে, খাতামুন নাবিয়্যীনের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তাঁর পরে নবুওতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে; বরং উদ্দেশ্য হল, ভবিষ্যতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর থেকে নবী বানানো হবে।

মির্যা কাদিয়ানী বলে, ‘মহা প্রতাপশালী আল্লাহ আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামকে খাতামের অধিকারী বানাইয়াছেন। অর্থাৎ তাঁহাকে পরিপূর্ণ আশিসের জন্য মোহর দেওয়া হয় যাহা আর কোনো নবীকে কখনো দেওয়া হয় নাই। এই কারণেই তাঁহার নাম খাতামুন্নাবীঈন সাব্যস্ত করা হইয়াছে। অর্থাৎ তাঁহার পরিপূর্ণ অনুবর্তিতা নবুওয়ত দান করে এবং তাঁহার আধ্যাত্মিক মনোনিবেশ নবী সৃষ্টিকারী হয়।’ [মির্যা কাদিয়ানীকৃত হাকীকাতুল ওহী, (বাংলা), পৃষ্ঠা ৭৫]

সুতরাং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অর্থে খাতামুন নাবিয়্যীন যে, তাঁর মাধ্যমে অন্যরা নবী হবে। আগে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নবুওত দান করতেন, কিন্তু এখন এই সিদ্ধান্তের ভার হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সোপর্দ করা হয়েছে। এখন তিনি মোহর লাগিয়ে নবী বানান।

এই হল যানদাকা। কাদিয়ানীরা যিনদীক। তাদের আকীদা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারে কুফুরী। কিন্তু তারা নিজেদের কুফুরী আকীদাকে ইসলামের নাম দেয় এবং কুরআন-হাদীসকে নিজেদের কুফুরী আকীদা অনুযায়ী সাজানোর জন্য তাতে বিকৃতি করে।  

অতএব চিন্তা করে দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী এবং কাদিয়ানীদের কুফরী কতটা জঘন্য!

কাদিয়ানীদের বংশের হুকুম

কাদিয়ানীদের শত প্রজন্ম পরিবর্তন হলেও তারা যিনদীকই রয়ে যাবে। কারণ তাদের যে অপরাধ, অর্থাৎ কুফরকে ইসলাম আর ইসলামকে কুফর বলা, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও তা পাওয়া যায়। চাই তারা ইসলাম ত্যাগ করে কাদিয়ানী হোক বা জন্মগতভাবে কাদিয়ানী।

কাদিয়ানীদের ব্যাপারে মুসলমানদের আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয় দেওয়া উচিত

কাদিয়ানীদের একটি অপরাধ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হল। এবার আরেকটি কথা বলছি, তার আগে একটি উদাহরণ পেশ করছি-

‘এক লোকের দশ সন্তান। তারা তার ঘরেই জন্ম নিয়েছে। সেও তাদেরকে নিজ সন্তান বলে পরিচয় দেয়। ওই লোকটির মৃত্যুর পরে অন্য একজন এই দাবি করল, আমি মৃত লোকটির আসল সন্তান। ওই দশজন তার সন্তান নয়।’

এর ভিত্তিতে আপনাদের কাছে দুটি প্রশ্ন। একটি হল, পৃথিবীর কোনো আদালত কি এই অপরিচিত ব্যক্তির দাবি শুনে রায় দেবে, সে-ই মৃত লোকটির আসল সন্তান আর ওই দশজন তার সন্তান নয়?

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, এই ব্যক্তি যে ওই দশজনকে তাদের বাবার আসল সন্তান বলে মানে না। এখন ওই দশজন এর সাথে কেমন আচরণ করবে?

এ দুটি ব্যাপার মনে রেখে এবার শুনুন, আলহামদু লিল্লাহ! আমরা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। তাঁর আনীত পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানি। আমরা তাঁর রূহানী সন্তান। এই ব্যাপারে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-

اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ.

মুমিনদের জন্য নবী তাদের নিজেদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশি ঘনিষ্ঠ। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৬

অর্থাৎ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের কোনো ব্যক্তির নিজের সত্তার সাথেও এতটা গভীর সম্পর্ক নেই, যতটা গভীর সম্পর্ক হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর প্রতিটি উম্মতের।

তারপরে বলা হয়েছে,  وَ اَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمْ ‘আর তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা।’ স্পষ্ট কথা, যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুণ্যবতী স্ত্রীগণ আমাদের মা, আমরা তাঁদেরকে উম্মাহাতুল মুমিনীন বলি, কাজেই তাঁরা আমাদের মা হলে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রূহানী পিতা। সন্তানদের মধ্যে কেউ মা-বাবার বেশি অনুগত আর কেউ কম। সকল সন্তান একরকম হয় না। তাদের মধ্যে পার্থক্য হয়। কিন্তু সকলেই তাদের পিতার সন্তান।

তের শ শতাব্দী ধরে মুসলমানগণ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাঁটি উম্মত ছিলেন, তাঁর রূহানী সন্তান ছিলেন। চৌদ্দশ শতাব্দীর শুরুতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এসে দাবি করল, শুধু সে এবং তাঁর অনুসারীরাই নাকি মুসলমান। বাকি সব মুসলমান কাফের। (দ্রষ্টব্য : তাযকেরাহ, ৫১৯; ২৮০; নুযূলুল মাসীহ, রূহানী খাযায়েন ১৮/৩৮২; হাকীকাতুল ওহী, রূহানে খাযায়েন ২২/১৮৫)

পৃথিবীর সকল সভ্য আদালতে আমাদের অভিযোগ- যদি অপরিচিত কারও এই কথা গ্রাহ্য না করা হয়, ‘আমি ওই লোকটির আসল সন্তান, বাকিরা তার আসল সন্তান নয়।’ তাহলে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এই উম্মতের বাইরের একজন হওয়া সত্ত্বেও তার এই অসার দাবি কেন শোনা হবে?

কথা হল, আমাদের যেসব ভায়েরা কাদিয়ানীদের আহ্বানে প্রতারিত হন তাদের কি ওই দশ সন্তানের মতও আত্মমর্যাদাবোধ নেই! তারা কাদিয়ানীদের এই দাবি কীভাবে মেনে নিচ্ছেন, সারা পৃথিবীর মুসলমানরা ভুল আর মির্যা সঠিক! সারা পৃথিবীর মুসলমান কাফের আর কাদিয়ানীরা মুসলমান! কী আশ্চর্য! তাদের কি বিন্দুমাত্র আত্মমর্যাদাবোধও জাগে না?

মুসলমানদের আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয় কী হওয়া উচিত? যিনদীকের ব্যাপারে ইসলামের বিধান তো আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা মুসলিম সরকারের কাজ। কেউ ব্যক্তিগতভাবে তা করতে পারে না। তবে অন্তত এতটুকু তো অবশ্যই করা দরকার, আমরা কাদিয়ানীদের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কচ্ছেদ করব। তাদেরকে আমাদের কোনো মাহফিল-মজলিসে জায়গা দেব না। সর্বাত্মকভাবে তাদের প্রতিহত করব। 

ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায় তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। একদিন পুরো পৃথিবী এই বাস্তবতা স্বীকার করবে, কাদিয়ানীরা মুসলমান নয়, বরং ইসলামের গাদ্দার। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গাদ্দার। ইনশাআল্লাহ! সারা বিশ্বে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। আর শেষ বিজয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীদেরই হবে।

হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফাআত-প্রত্যাশী প্রত্যেক মুসলমানের কাছে আবেদন- সারা বিশ্বে খতমে নবুওতের ঝাণ্ডা বুলন্দ করার জন্য সকল মুসলমান কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে ঈমানী ও দ্বীনী আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয় দিন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

[অনুবাদ ও প্রস্তুতকরণ : মাওলানা ফযলুদ্দীন মিকদাদ]

 

১  قَالَ فِي الْفَتْحِ قَالُوا لَوْ جَاءَ زِنْدِيقٌ قَبْلَ أَنْ يُؤْخَذَ فَأَخْبَرَ بِأَنَّهُ زِنْدِيقٌ وَتَابَ تُقْبَلُ تَوْبَتُهُ، فَإِنْ أُخِذَ ثُمَّ تَابَ لَا تُقْبَلُ تَوْبَتُهُ وَيُقْتَلُ لِأَنَّهُمْ بَاطِنِيَّةٌ يَعْتَقِدُونَ فِي الْبَاطِنِ خِلَافَ ذَلِكَ فَيُقْتَلُ وَلَا تُؤْخَذُ مِنْهُ الْجِزْيَةُ. اهـ.

وَسَيَأْتِي فِي بَابِ الْمُرْتَدِّ أَنَّ هَذَا التَّفْصِيلَ هُوَ الْمُفْتَى بِهِ . (رد المحتار ৪/১৯৯)

وَسَيَأْتِي أَيْضًا فِي بَابِ الرِّدَّةِ أَنَّ السَّاحِرَ أَوْ الزِّنْدِيقَ الدَّاعِيَ إذَا أُخِذَ قَبْلَ تَوْبَتِهِ ثُمَّ تَابَ لَمْ تُقْبَلْ تَوْبَتُهُ وَيُقْتَلُ، وَلَوْ أُخِذَ بَعْدَهَا قُبِلَتْ. (رد المحتار ৪/৬৩) ويراجع أيضا: البحر الرائق ৫/১৩৬

মন্তব্য করুন: