ব্যাংকের লভ্যাংশ মসজিদ-মাদরাসায় ব্যয় করা যাবে কি
ব্যাংকের লভ্যাংশ মসজিদ-মাদরাসায় ব্যয় করা যাবে কি -
আমরা নানান সময়ে নিজেদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য ব্যাংকে নিজেদের টাকা পয়সা জমা রাখি। আর ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী জমাকৃত টাকায় লভ্যাংশ জমা হয়। এক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সেই অর্থ কোনো মসজিদ বা মাদরাসায় ব্যয় করা যাবে কিনা?
এ প্রশ্নের জবাব হলো, আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। সুদভিত্তিক ব্যাংক আর শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে ডিপোজিটররা যে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে তা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে সুদ বলে বিবেচিত। এই বিষয়ে ইসলামিক স্কলারদের কোনো দ্বিমত নেই।
কারণ, ব্যাংকে রাখা ডিপোজিট শরিয়তের দৃষ্টিতে ‘করজ’ তথা ঋণ বলে গণ্য হয়। আর ঋণের ওপর সব অতিরিক্ত অংশই সুদ। এক হাদিসে এসেছে : ‘যে ঋণ কোনো উপকার বয়ে আনে তা-ই সুদ।’ (ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ : ৩/৩৮০; দায়লামি : ৪৭৭৮)
আর সুদের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো, প্রথমত, যেসব একাউন্টে সুদ দেওয়ার চুক্তি করা হয় সেগুলোতে টাকা ডিপোজিট রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তা যে নামেই প্রদান করা হোক না কেন। প্রয়োজনে সুদহীন কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখার অবকাশ আছে।
ADVERTISEMENT
দ্বিতীয়ত, অগত্যা এসব ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া নিজের দায় মুক্তির জন্য ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে জাকাতের উপযুক্ত অসহায়, দুঃস্থ ও গরিবদের প্রদান করতে হবে। রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, হাসপাতাল, মসজিদ ও মাদরাসা ইত্যাদির মতো সামাজিক কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না।
কারণ এসব স্থাপনা থেকে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ উপকৃত হন। আর সুদি অর্থের একমাত্র হকদার যাকাতের উপযুক্ত লোকেরা। অধিকন্তু মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ পবিত্র। তার ঘরও পবিত্র। তার পবিত্র ঘরে হারাম অর্থ ব্যয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাদিসে আছে—‘হে লোকেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি কেবল পবিত্র সমপদই গ্রহণ করে থাকেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)
তবে মাদরাসার নির্মাণকাজ ও সাধারণ তহবিলে সুদি অর্থ ব্যয় করা নাজায়েজ হলেও ‘গুরাবা তহবিল’ নামক বিশেষায়িত তহবিলে এ টাকা দান করার অবকাশ আছে। কারণ, এই তহবিল থেকে জাকাতের হকদার গরিব ছাত্রদের ব্যয়ভার বহন করা হয়।
আর আমাদের দেশের প্রচলিত ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত মুনাফার ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত আছে। একদল আলেম একে হালাল মনে করলেও ইসলামিক স্কলারদের বৃহৎ একটি অংশ মনে করেন, আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে ইসলামী পদ্ধতিতে লেনদেন করার দাবি করলেও মাঠে-ময়দানে তারা ইসলামের বিধান অনুসরণ করে না। তাই ইসলামের বিধিবিধান প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক সমূহ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা গ্রহণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য।
সুতরাং এ ধরনের মুনাফা ভোগ করা অনুচিত। এমনকি তাদের ভাষ্য মতে, একেও দায়মুক্তির আশায় কোনো সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে। তাই এ ধরনের সন্দেহযুক্ত অর্থ কোনো মসজিদ বা মাদরাসায় ব্যয় করার অবকাশ নেই। তবে মসজিদের কোনো স্টাফ জাকাতের উপযুক্ত হলে এবং মাদরাসার ‘গুরাবা তহবিল’/‘লিল্লাহ বোর্ডিং’-এ এ ধরনের অর্থ ব্যয় করার অবকাশ আছে। কিন্তু তা কোনোভাবেই বেতন-ভাতা বাবত হতে পারবে না।