ঋণ দেওয়ার কথা বলে নিঃস্ব করছে অনলাইন প্রতারক চক্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে ঋণ ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে অনুমোদন ও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কোনো আইন মানছে না। বরং তারা নীরবে পরিচালনা করছে এক বিশাল অবৈধ অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক। ফেসবুক বিজ্ঞাপন, ইনস্টাগ্রাম রিল কিংবা ইউটিউবের প্রচার—সবখানেই এই ভুয়া অ্যাপগুলোর জাল ছড়িয়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষ সহজে ঋণ পাওয়ার আশায়, বা আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি চেয়ে এই অ্যাপগুলোর ফাঁদে পা দিচ্ছেন। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে, ঋণ নয় এটি আসলে এক ধরনের ডিজিটাল শোষণ।
এই প্রতারণায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেই মানুষরা, যারা অল্প পুঁজিতে জীবিকা টিকিয়ে রাখতে চান বা ক্ষুদ্র ঋণের আশায় নির্ভরশীল। তারা অজান্তে নিজের ছবি, পরিচয়, তথ্য ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছেন অপরাধীদের হাতে। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল, হুমকি আর মানসিক নির্যাতন। প্রতারকরা তাদের ছবি বা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে, অনেক সময় তাদের পারিবারিক সম্মান পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেলে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক জরিপে বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধের মধ্যে সর্বাধিক ২৩.৭৯ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং সম্পর্কিত যার একটি বড় অংশ এই ভুয়া ঋণ অ্যাপ প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। এসব অপরাধী জানে, অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর আবেগ, প্রয়োজন ও অজ্ঞতাই তাদের সবচেয়ে বড় মূলধন। তাই তারা মানুষের বিশ্বাসকে মূলধন করে অর্থ লুটে নিচ্ছে নির্দ্বিধায়।
এখন সময় এসেছে রাষ্ট্র ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। এই ভুয়া ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শনাক্ত করে বন্ধ না করা গেলে অনলাইন প্রতারণা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিটি আর্থিক অ্যাপের যাচাই, রেজিস্ট্রেশন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ প্রতারক চক্রের শক্তি আমাদের অজ্ঞতা ও অতি বিশ্বাস। ডিজিটাল বাংলাদেশ তখনই সফল হবে, যখন অনলাইন নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় নীতির কেন্দ্রে থাকবে এবং প্রতারণার এই অন্ধকার অর্থনীতি নির্মূল হবে আইন, প্রযুক্তি ও সচেতনতার সমন্বয়ে।