এক সুফি আলেমের রাজনৈতিক অবদান
শায়খ ওমর বাশির আল-খালিদি (রহ.)। মালয়েশিয়ার বিখ্যাত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও নকশাবন্দি তরিকার সুফি আলেম। যিনি তাঁর পুরো জীবনকে স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা সুদূর ইয়েমেনের হাদারামাউত অঞ্চল থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য মালয়েশিয়ার পেনাং অঞ্চলে আসেন।
এখানেই ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে শায়খ ওমর বাশির (রহ.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর মেধা, যোগ্যতা, আত্মত্যাগ, মানবসেবা ও নেতৃত্বের গুণাবলির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের হৃদয় জয় করেন।পেনাংবাসীর কাছে শায়খ ওমর বাশির (রহ.) ছিলেন একজন অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর ব্যক্তি ও জনপ্রিয়তার কারণে শাসকগোষ্ঠিও তাঁকে সমীহ করত। শায়খ ওমর (রহ.)-এর বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে ১৮৬৭ সালে পেনাংবাসী ভয়াবহ দাঙ্গা ও সামাজিক সংঘাত থেকে রক্ষা পায়। তিনি একজন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতা হওয়ার পরও ব্রিটিশ প্রশাসন দাঙ্গা থামাতে তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিল। তখন ১ মহররম হিজরি নববর্ষ পালন নিয়ে স্থানীয় মুসলিম ও ভারতীয় মুসলিমদের ভেতর দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল এবং ক্রমেই তা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পরিণত হয়েছিল। তাঁর একটি ফাতাওয়া এই সংঘাত থামিয়ে দিয়েছিল। তিনি নিয়ম করেছিলেন উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা এক সপ্তাহ পর পর অন্য সম্প্রদায়ের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করবে।
শায়খ ওমর বাশির (রহ.) ছিলেন নকশাবন্দি তরিকার খালিদি ধারার অনুসারী। এই ধারার সুফিরা নির্জন সাধনাকে প্রাধান্য দেন। তিনি তাঁর বাড়িতে নীরবে আল্লাহপ্রেমের সাধনা করতেন। তিনি আল্লাহপ্রেমী মানুষরাই ঠিকই তাঁর কাছে ভিড় করত। ফলে দিনে দিনে তাঁর বাড়িটি একটি খানকায় পরিণত হয়। শায়খ ওমরের অনুসারীরা তাঁর কাছে অবস্থান করে ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির সাধনা করত। তাদের কেউ কেউ দীর্ঘদিন তাঁর কাছে অবস্থান করত। তাঁর অনুসারীরা নিজেদেরকে খালিদি বলে পরিচয় দিয়ে থাকে।
এমনকি কেদাহ রাজপরিবারের সদস্যরাও দোয়া ও উপদেশ গ্রহণের জন্য শায়খের খানকায় যাতায়াত করত। শায়খ ওমর বাশির (রহ.) খালিদি ধারার ছিলেন, যারা নির্জনে আল্লাহর ইবাদত করতে পছন্দ করে, তবে তাঁর এই নীতি ও আদর্শ তাঁকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তাঁর জনসম্পৃক্তা ও জনসেবার পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত ছিল।শায়খ ওমর বাশির (রহ.) ৬৯ নং লেবু অচেহতে বসবাস করতেন। এটা মুসলিম জনবসতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। তিনি এই এলাকাটি বেছে নিয়েছিলেন যেন মুসলিমদের ইসলামী শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও হজে গমন সহজ হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ক্যাপটেন ফ্যান্সিস লাইটের সচিব ১৮৬০ সালে তাঁকে একটি বাড়ি উপহার দেন। ১৮৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত তিনি এই বাড়িতেই বসবাস করতেন।
মৃত্যুর পর তাঁকে ক্যাম্পাং মেলাউয়ের আয়ির হাতিমে দাফন করা হয়। এখানে বর্তমানে একটি সমাধি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় মুসলিম শ্রমিকরা সৌধটি নির্মাণ করেছে। সাদা সমাধিটিকে পেনাংয়ের অন্যতম সুন্দর ও প্রধান মুসলিম স্থাপনা মনে করা হয়। ২০০৫ সালে মালয় সরকার সমাধি সৌধকে জাতীয় ঐতিহ্য বলে ঘোষণা করে।