খুলনায় শ্রমিক শক্তির নেতাকে গুলি: মামলায় আসামি যুবশক্তি নেত্রী
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির শ্রমিক সংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তির’ খুলনা বিভাগীয় কমিটির প্রধান মোতালেব শিকদারকে গুলি করার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার মোতালেবের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় জেলা ‘জাতীয় যুবশক্তির’ যুগ্ম সদস্য সচিব তনিমা ওরফে তন্বীকে প্রধান আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, তনিমা তন্বীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও সাত থেকে আটজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলার পর তনিমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে মোতালেবকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তার বয়স ৪২ বছর। তিনি সোনাডাঙ্গা শেখপাড়া পল্লী মঙ্গল স্কুল এলাকার মোসলেম শিকদারের ছেলে।
পুলিশ বলছে, তনিমার ভাড়া করা ফ্ল্যাটেই গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব। তার কানের পাশে গুলি লেগে বেরিয়ে যায়।
ঘটনার পর ওই ফ্ল্যাট থেকে ইয়াবা, মদের খালি বোতল ও গুলির খোসা পাওয়ার খবরও জানায় পুলিশ।
গুলিবিদ্ধ মোতালেব খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন; তার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত।
ঘটনার দিন অর্থাৎ সোমবার রাতে তনিমাকে নগরের সদর থানার টুটপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে তাকে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওসি রফিকুল বলেন, “থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সন্ধ্যার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তনিমাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে নেওয়া হয়। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোতালেব কিছুটা সুস্থ হয়েছেন।”
খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, “রোববার রাত ১২টার দিকে দুই সহযোগীকে নিয়ে তনিমা ওরফে তন্বীর ভাড়া করা নগরের আল-আকসা মসজিদ সড়কের ‘মুক্তা হাউসের’ বাসায় যান মোতালেব শিকদার। সারারাত তারা সেখানেই ছিলেন।
“সোমবার সকালে ওই বাড়িতে চার-পাঁচজনের একটি দল ঢোকে। তারা মোতালেব শিকদারকে মারধর এবং অর্থ দাবি করে। এক পর্যায়ে তারা ভয় দেখাতে গুলি করে। গুলিটি মোতালেবের মাথার চামড়া স্পর্শ করে বেরিয়ে যায়। এরপর মোতালেব নিজে হেঁটে হাসপাতালে যান। তখন অন্যরা পালিয়ে যায়।”
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “প্রায়াই তনিমার বাসায় যেতেন মোতালেবসহ অন্যরা। ওই কক্ষে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং মাদক সেবন করতেন তারা। সেখানে নিয়মিত আদকের আড্ডা বসত। গুলির ঘটনার পর ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদের খালি বোতল, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
“ঘটনাস্থলে কারা ছিল, এ তথ্য জানতে তনিমাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি কিছু তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না।”
অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি র্যাব, সিআইডি, পিবিআই ছায়া তদন্ত করছে বলে খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম জানান।
এদিকে সোমবার রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মোতালেব শিকদারের পরিবার। সেখানে মোতালেব শিকদারের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা দাবি করেন, “ফাঁদে ফেলে মোতালেবকে তনিমার বাসায় নেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “ঘটনাস্থলে কারা ছিল, অস্ত্রধারীরা কারা এবং সেই অস্ত্র কোথায় এগুলো খুঁজে বের করলে মূল রহস্য বের হয়ে আসবে।”