মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ৯ ১৪৩২, ০৩ রজব ১৪৪৭

ইসলাম

ধ্বংসস্তুপের ভেতর গাজা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু

 প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ধ্বংসস্তুপের ভেতর গাজা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু

গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দুই বছর পর প্রথমবারের মতো সশরীরে ক্লাসে ফিরেছে। তবে তারা এমন এক ক্যাম্পাসে ফিরেছে যা ইসরায়েলের ব্যাপক গণহত্যামূলক যুদ্ধের ফলে ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও চরম ধ্বংসযজ্ঞের স্থানে পরিণত হয়েছে।

অক্টোবরে যুদ্ধবিরতির পর পুনরায় চালু হওয়া গাজা সিটির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রায় পাঁচ শ বাস্তুচ্যুত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ভবনগুলো কেবল ফাঁপা খোলসে পরিণত হয়েছে। যেখানে এক সময় লেকচার হল ছিল, সেখানে এখন সারি সারি তাঁবু। এটি গাজার গৃহহীনতা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ভাঙনের দ্বৈত সংকটের এক নির্মম চিত্র।

ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেওয়া আত্তা সিয়াম বলেন, ‘জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর আমরা এখানে এসেছি। কেননা আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা ছিল না। আমরা কিন্তু জায়গাটি শিক্ষার জন্য। এটি আশ্রয়কেন্দ্র হওয়ার কথা নয়, এটি আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার স্থান।’

অত্যন্ত সীমিত পরিসরে হলেও ক্লাস শুরু হওয়ায় হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে, যদিও পরিস্থিতি একটি সক্রীয় ও চলমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খুব কমই সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইউনেস্কোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর গাজায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯৫ শতাংশের বেশি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

প্রথম বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থী ইউমনা আলবাবা বলেন, আমি সব সময় একটি পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার এমন একটি জায়গা দরকার, যেখানে আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারি এবং সবদিক থেকে যোগ্য পরিবেশ থাকে। কিন্তু এখানে আমি আমার কল্পনার সেই পরিবেশ পাইনি। তবুও আমার আশা বেঁচে আছে। কেননা আমরা শূন্য থেকে সবকিছু গড়ে তুলছি।

মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা যাকে ‘স্কলারসাইড’ অর্থাত্ পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস বলে অভিহিত করেছেন, তার ফলে গাজায় সাত লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী টানা দুই শিক্ষাবর্ষ ধরে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। গাজাভিত্তিক আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে আরো ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৪৯৪ টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৭টি একেবারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এতে ১২ হাজার আট শ শিক্ষার্থী, সাত শ ৬০ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী এবং এক শ ৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক নিহত হয়েছেন। গাজার শেষ কার্যকর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ইসরা ইউনিভার্সিটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। 

ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সরঞ্জামের সংকট ও অপ্রতুল শিক্ষার পরিবেশের মধ্যেই শিক্ষকরা যা আছে তা নিয়েই ক্লাস চালাচ্ছেন। ড. আদেল আওয়াদাল্লাহ জানান, শিক্ষার্থীদের জায়গা করে দিতে খোলা দেয়াল প্লাস্টিক শিট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রপাতি চালাতে আমরা বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য মোটর ধার নিয়েছি। মাত্র চারটি শ্রেণিকক্ষ চালু থাকায়, হাজারো শিক্ষার্থী এসব অস্থায়ী ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সতর্ক করে বলেন, এই ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি ভেঙে দেওয়ার একটি সচেতন প্রচেষ্টা হতে পারে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যখন স্কুল ধ্বংস হয়, তখন আশা ও স্বপ্নও ধ্বংস হয়’ এবং এটিকে শিক্ষা অবকাঠামোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সহিংসতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।