সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, পৌষ ৮ ১৪৩২, ০২ রজব ১৪৪৭

ব্রেকিং

তারেক রহমান ভোটার হবেন ২৭ ডিসেম্বর: সালাহউদ্দিন হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হাদি হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আইন উপদেষ্টা হাদির হত্যার বিচারে ৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের আন্দোলনের মুখে রাবির আওয়ামীপন্থি ৬ ডিনকে অপসারণ ভোট যত এগিয়ে আসবে, ভয় তত কেটে যাবে: সিইসি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭: ডিএমপি ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান রাশিয়ার দারফুরের বাজারে ড্রোন হামলায় নিহত ১০ শুটার ফয়সাল ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন ভোট: আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য ঠেকাতে মনিটরিং সেল করবে ইসি ৫ বছর দণ্ডের বিরুদ্ধে সাবেক আইজিপি মামুনের আপিল ইন্দোনেশিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত

জাতীয়

পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল? ব্যাখ্যা দিলেন ডিএমপি কর্মকর্তা

 প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল? ব্যাখ্যা দিলেন ডিএমপি কর্মকর্তা

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলার ঘটনার রাতে পুলিশ কেন নিস্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, ওই রাতে পুলিশের ‘অ্যাকশনে’ নামতে না পারার কারণ হল, তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটত। মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতি হয়নি-এটাকেই তারা অর্জন হিসেবে দেখেন বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, "যে কারণে ওখানে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারি নাই, কোনো হিউম্যান লাইফের কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় নাই। এইটা আমি বলব যে, এই এত বড় একটা ইনসিডেন্টের আমাদের এচিভমেন্ট। যে কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালটি ছাড়া এটাকে ট্যাকল দেওয়া গেছে।”

‘সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা হয়ত সম্ভব’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু একটা হিউম্যান লাইফ যখন লস্ট হয়, এটা কোনো কিছুর বিনিময়ে আর ফিরায় আনা সম্ভব না। যে কারণে আমরা ওখানে অ্যাকশনে যাই নাই।"

সোমবার রাজধানীতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে তিনি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, “হামলার ভিডিও বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হল।”

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. নাইম, মো. আকাশ আহমেদ সাগর, মো. আব্দুল আহাদ, মো বিপ্লব, মো. নজরুল ইসলাম মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল রানা, মো. হাসান, রাসেল ওরফে শাকিল, মো. আব্দুল বারেক শেখ আলামিন, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা, শফিকুল ইসলাম, মো. প্রান্ত ওরফে ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, আবুল কাসেম, রাজু হোসাইন ও মো. সাইদুর রহমান।

গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, "রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমি খুঁজতে চাচ্ছি না, এরা দুষ্কৃতিকারী। তারা আইন ভঙ্গ করছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন, যে বিচার ব্যবস্থা, সে বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক।”

'মব ভায়োলেন্স' ঠেকাতে ডিএমপি কতটা সক্ষম, প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, "আমরা সক্ষম। সবসময় সব ঘটনা আমরা কার্ভ করতে পারব, বিষয়টা এরকম না। কারওয়ান বাজারের যে ঘটনাটা, ওখানে যে অবস্থা ছিল, এইটার অন্তরালে আরো কিছু বিষয় আছে। আমরা যদি ওখানে অ্যাকশনে যেতাম তাহলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত।”

পুলিশের ওপর হামলা হলে এই বাহিনীকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া ‘সম্ভব না’ বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, "পাল্টা তারা পুলিশ ফোর্সের ওপর আক্রমণ করত। আমরা জানি না যে, তাদের মনের ভিতরে কী ছিল। যদি পুলিশের দুই চারজন সদস্য আবার সেদিন নিহত হইত, তাহলে আপনারা জানেন যে, পুলিশ জাস্ট এক বছর আগে বিরাট ট্রমা থেকে...আমরা তাদেরকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসছি, সামনে ইলেকশন। এই পুলিশের যদি আবার নতুন করে ক্যাজুয়ালটি হয়, এই পুলিশটাকে দিয়ে আমি সামনে আগাইতে পারব না।"

সেদিন তাহলে পুলিশ কোনো অ্যাকশনেই যায়নি? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, "অ্যাকশনে গেছি, যতটুকু আমরা প্রয়োজন মনে করছি, যতটুকু আমাদের অবস্থা ছিল সেটা। অ্যাকশন যেটা সর্বোচ্চ, গুলি করা পর্যন্ত যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা ওইটা অ্যাভোয়েড করার চেষ্টা করছি। কারণ যে পরিমাণ ওখানে জনবল ছিল, পাবলিক ছিল চার-পাঁচ হাজারের মত। এখানে আমার ৫০-১০০ জন ফোর্স নিয়ে অ্যাকশনে গেলে আমার পুলিশের এবং পাবলিকের বোথ সাইডে ক্যাজুয়ালিটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।”

পুলিশের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, পরিস্থিতি বিবেচনায় 'স্থান-কাল পাত্র ভেদে' পুলিশ অ্যাকশনে যায়, ইচ্ছে করলেই সব জায়গায় ‘ফায়ার ওপেন করতে পারে না, এটা করা উচিতও না’।

কারওয়ান বাজারে ওই রাতে পুলিশ কখন পৌঁছেছে, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, "পুলিশ তো ঘটনার আগেই পৌঁছাইছে। তারপর, তারপরে তো পুলিশ এটা প্রটেক্ট করার চেষ্টা করছে। পুলিশ বাধা দিছে, পারে নাই। পুলিশ এক পর্যায়ে মাফ চাইছে যে, আপনারা এই কাজটা করবেন না। কিন্তু আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার মত সেখানে অবস্থা ছিল না।"

গুলি করার আগের পর্যায় কাঁদুনে গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করার মত অবস্থাও সেখানে 'ছিল না' বলেও জানিয়েছেন নজরুল ইমলাম।

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে পুলিশ 'একইভাবে' ব্যর্থ হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা যদি এডভান্স ইনফরমেশন পাই, সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই মেজার নিব। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আর্মিও ফিল্ডে আছে, সকলেই কাজ করতেছে।”

এ ধরনের হামলার আগে কিছু 'পরিচিত মুখ' ফেইসবুক থেকে 'ইন্ধন' দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "একটা মামলায় চারটা আইন ইনক্লুড হইছে। এত বড় মামলা এর আগে হইছে কি না আমি জানি না। পেনাল কোড, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এন্টি টেরোরিজম অ্যাক্ট একই মামলার মধ্যে আছে। আমরা এটার অ্যাকশন নেব।"

আরো কোনো সংবাধমাধ্যমের ওপর হামলার আশঙ্কা বা হুমকি রয়েছে কী না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের কাছে এরকম আপাতত ইনফরমেশন নাই। তবে আমরা যদি এরকম ইনফরমেশন পাই, অবশ্যই আমরা সেটাকে কার্ভ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা, এটা আমরা নিব।"

ছায়ানট ও উদীচীতে হামলার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ছায়ানটের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ও উদীচীর ঘটনায়ও মামলা হইছে শাহবাগ থানায়, ওটা পরে ব্রিফ করব।"

সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর এলে ১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে একদল লোক কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এবং পরে ডেইলি স্টার ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে।

পরে ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনেও হামলা হয়। সেখানেও ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর উদীচীর কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।