মুমিনের অন্তরে খ্যাতির ভয়
কোরআন ও হাদিসে যেসব বিষয়কে মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক বলা হয়েছে, খ্যাতির মোহ তার অন্যতম। বিশেষত মুমিনের ধর্মীয় জীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। কেননা তা ইবাদতের নিষ্ঠাকে নষ্ট করে এবং আল্লাহর ভালোবাসা লাভে বাধা সৃষ্টি করে। এজন্য পূর্বসূরী আলেমরা খ্যাতিম্যান হওয়াকে ভয় পেতেন।
বিখ্যাত সুফি ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) বলেন, ‘যে খ্যাতি পেতে পছন্দ করে সে আল্লাহর ব্যাপারে (নিষ্ঠা ও ভালোবাসার দাবিতে) সত্যবাদী নয়।’ (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা : ৫/৫৬)
সাঈদ ইবনে মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, ‘প্রশংসা ও খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ থেকে যেভাবে দূরে সরাই অন্যকিছু এভাবে দূরে সরায় না।’ (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা : ১৪/২১৪)
খ্যাতির তাড়নায় ভয় কেন
ADVERTISEMENT
একজন মুমিন খ্যাতির প্রবণতা ভয় পায়। কেননা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে খ্যাতির মোহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এটা আখেরাতের সেই আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা এই পৃথিবীতে বড়ত্ব কামনা করে না ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৮৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারও সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৬)
অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের জন্য পোশাক পরে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে সেরূপ পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪০২৯)
মুমিনের অন্তরে খ্যাতির ভয়
পূর্বসূরী আলেম ও মনীষীগণ খ্যাতিম্যান হওয়াকে ভয় পেতেন। খ্যাতির আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে কয়েক বিখ্যাত মনীষীর মনোভাব তুলে ধরা হলো—
১. ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.): তিনি বলেন, ‘এক মানুষের জন্য ফেতনায় পতিত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, মানুষ তাকে দ্বিন বা দুনিয়ার ব্যাপারে আঙুল তুলে দেখায়; ব্যতিক্রম যাদেরকে আল্লাহ রক্ষা করেন।’ (আল জুহুদ : ২/৪৪২)
২. বিশর ইবনুল হারিস (রহ.): তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো ব্যক্তি দেখিনি যে পরিচিতি লাভে আগ্রহ অথচ তার দ্বিনদারি নষ্ট হয়নি এবং তার মন্দ নিয়ত প্রকাশ পায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধি লাভ করতে পছন্দ করে সে পরকালের স্বাদ পায় না।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন: ৩/২৭৬)
৩. ইবনে তাইমিয়া (রহ.): তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, সম্পদ ও খ্যাতির লোভ দ্বিনদারি ধ্বংসের কারণ। এর ক্ষতি ছাগলের পালে ক্ষুধার্ত নেকড়ের ঝাপিয়ে পড়ার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। নিশ্চয়ই ইসলাম পুতঃপবিত্র ধর্ম। এখানে লোভ-লালসার স্থান নেই।’ (মাজমাউল ফাতাওয়া : ১০/২১৫)
৪. আল্লামা ইবনে রজব (রহ.): তিনি বলেন, ‘প্রকৃত আলেম ও নেককার বান্দারা খ্যাতি অপছন্দ করেন। তারা খ্যাতির কারণগুলো এড়িয়ে চলেন এবং মানুষের আড়ালে থাকার চেষ্টা করেন।’ (মাজমুউ রাসায়িলি ইবনে রজব: ২/৭৫৫)
৫. আল্লামা ইবনে বাত্তাল (রহ.): তিনি বলেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য উচিত নয় খ্যাতির প্রত্যাশা করা। চাই তা ভালো কাজে হোক বা তা মন্দ কাজে হোক।’ (তাহজিবুল আসার, পৃষ্ঠা: ৩)
৬. ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (রহ.): তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব প্রত্যাশী ব্যক্তিরা অন্যকে হিংসা করে, আল্লাহর অবাধ্য হয়, মানুষের দোষ খোঁজে এবং (সে ছাড়া) অন্য কারো প্রশংসা করা হোক।’ (ফাতহুল মান্নান: ৩/৩৪৯)
৭. আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.): তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা করে এমন স্থানে চলে যেতে যেখানে কোনো মানুষ থাকবে না। আমি মক্কার এমন একটি টিলায় আশ্রয় নিতে চাই যেখানে আমাকে কেউ চিনবে না।’ (আল জুহুদ: ২/৪৩৫)