মিথ্যা বর্জনে সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ
মুমিনের অন্যতম পরিচয় হলো মহান আল্লাহকে ভয় করে সদা সত্য কথা বলা। সত্যের সঙ্গে থাকা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পরিপূর্ণ তাকওয়া অবলম্বনের পাশাপাশি সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাকওয়া অবলম্বনকারীদের সাথে থাক।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)
যার অন্তরে আল্লাহ-ভীতি থাকবে সে সত্যবাদীও হবে। আর যে মিথ্যুক হবে, তার অন্তর আল্লাহভীতি থেকে খালি হওয়া বাধ্যতামূলক। এ জন্যই মহানবী (সা.) মিথ্যাকে মুনাফিকের স্বভাব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
জিহ্বা দ্বারা সম্পাদিত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পাপের একটি হলো, মিথ্যা বলা। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় এর ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক। (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১০)
ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মাদ বলেন, আমি উপরোক্ত সানাদে ইবনে আবদুর রহমান থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি—যদিও সে সওম পালন করে এবং সলাত আদায় করে এবং মনে করে যে, সে মুসলিম। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬)
মিথ্যার অনেক স্তর রয়েছে। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য স্তর হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর মিথ্যা রটানো। সাধারণত এ ধরনের মিথ্যার দ্বারা মানুষ ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই। ইসলামের বিভিন্ন বিধান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এ ধরনের মিথ্যুকদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তার চেয়ে অধিক জালিম কে, যে না জেনে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়? নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত করেন না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪৪)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩)
অনেকে আবার নিজেকে আধ্যাত্মিক শক্তিধর হিসেবে চিত্রিত করার জন্য মিথ্যা স্বপ্ন দেখার দাবি করে। বাস্তবে যে স্বপ্ন সে দেখেইনি। এ ধরনের মিথ্যাকে আমরা হালকা ভাবলেও প্রকৃত পক্ষে ইসলামের দৃষ্টিতে এসব মিথ্যাও খুবই জঘন্য অপরাধ।
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হলো আপন চক্ষু দিয়ে এমন কিছু দেখার (দাবি করা) যা চক্ষুদয় দেখতে পায়নি। (বুখারি, হাদিস : ৭০৪৩)
বিপুল সংখ্যক মানুষ মিথ্যা বলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে। পণ্য বেচাকেনার প্রয়োজনে মিথ্যা বলা, মিথ্যা কসম খাওয়াকেও মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়। অনেকেতো ব্যবসায়িক কৌশলের বৈধ অংশ মনে করে। অথচ পণ্যের দোষ গোপন করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বেচা-কেনাও জঘন্য অপরাধ।
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না আর তাদের পবিত্রতা প্রত্যায়ন করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (তারা হলো) দানকৃত বস্তুর খোঁটাদানকারী, পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয়কারী। (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬৪)
এমনিভাবে রাজনীতির মাঠে জনগণকে বোকা বানানোর জন্য অহেতুক মিথ্যা বলাও জঘন্য পাপ। যদিও মানুষের ধারণা, রাজনীতিতে মিথ্যা বলা দোষনীয় নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না।
রাবী আবু মুআবিয়াহ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)
ইসলাম মিথ্যাকে এতটাই ঘৃণা করে যে, নিছক মজা করার জন্য, মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলাকেও ইসলাম সমর্থন দেয় না।
রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষকে হাসানোর যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে, তার জন্য ধ্বংস, ধ্বংস, ধ্বংস। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯০)
এক কথায় বলতে গেলে মুমিনের উচিত, সব ধরনের মিথ্যা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কারণ মিথ্যা মানুষের দুনিয়া-আখিরাতের শান্তি কেড়ে নেয়।