বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫, কার্তিক ১৫ ১৪৩২, ০৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

সুদানে মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে হাসপাতালে ঝরেছে ৪৬০ প্রাণ

 প্রকাশিত: ১১:০৬, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

সুদানে মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে হাসপাতালে ঝরেছে ৪৬০ প্রাণ

সুদানের এল-ফাশের দখল করার কয়েক দিনের মধ্যেই র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) মিলিশিয়া বাহিনী শহরের প্রধান হাসপাতালে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে খবর দিয়েছেন জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।

তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, হাসপাতালে ৪৬০ জনকে হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বিস্মিত ও গভীরভাবে শোকাহত’।

এর আগে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক বলেছিল, আরএসএফ যোদ্ধারা মঙ্গলবার সৌদি হাসপাতালে যাকে পেয়েছে—রোগী, তাদের আত্মীয়স্বজন এবং উপস্থিত অন্য সবাইকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে।

সংগঠনটি নিহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না জানিয়ে বলেছে, শহরের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানায়’ পরিণত করা হয়েছে।

নেটওয়ার্কটি অভিযোগ করেছে, আরএসএফ চারজন ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন নার্সকে অপহরণ করেছে এবং তাদের মুক্তির জন্য দেড় লাখ ডলারের বেশি মুক্তিপণ দাবি করছে।

সৌদি হাসপাতালে মঙ্গলবারের এ হামলার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় অধিকার কর্মীদের সংগঠন এল-ফাশের রেজিস্ট্যান্স কমিটিও। তারা বলেছে, এ ঘটনায় ‘ভয়ঙ্কর নীরবতা’ নেমে এসেছে।

বিবিসি লিখেছে, শহরটি ছিল দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি, যা টানা ১৮ মাসের অবরোধের পর রোববার আরএসএফের দখলে চলে যায়। এ অবরোধের সময় ব্যাপক গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে, দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে আরএসএফ ও তাদের মিত্র আরব মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে—তারা দারফুরে অনারব জাতিগোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। যদিও আরএসএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এল-ফাশেরের পতনের পর শহরটিতে আটকা পড়া প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, মানবাধিকার কর্মী ও সাহায্য সংস্থাগুলো। আটকেপড়াদের অনেকেই অনারব সম্প্রদায়ের।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেখানে আসলে কী ঘটছে তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে জানিয়ে বিবিসি লিখেছে, তারা সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও যাচাই করে দেখেছে, আরএসএফ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে।

সাহায্য সংস্থাগুলোর মনে করছে, এল-ফাশের ও আশেপাশের ধ্বংসযজ্ঞের পুরো চিত্র এখনো প্রকাশ পায়নি।

কিছু মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এল-ফাশেরের পশ্চিমে ৬০ কিলোমিটার দূরের তাওইলা শহরে পালিয়ে গেছে এবং তারা ভয়াবহ সহিংসতার বর্ণনা দিয়েছে।

তাদের একজন বিবিসি আরবির ‘সুদান লাইফলাইন’ অনুষ্ঠানকে বলেন, “শনিবারের গোলাবর্ষণ এতই তীব্র ছিল যে আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না—আমরা এল-ফাশের ছেড়ে পালাতে বাধ্য হই।

“পথে আরএসএফ আমাদের ভিডিও করে, মারধর করে, অপমান করে—আর আমাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র লুট করে নেয়। অনেককে আটক করে তাদের মুক্তির জন্য মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

“যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। যাত্রাপথে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করেছি।”

জাতিসংঘের সাবেক শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তা ইয়ান এগেল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’।

“মাসের পর মাস অনটন, বঞ্চনা, চিকিৎসাহীনতার মধ্যে আমরা গণহত্যা দেখেছি। আমি মনে করি, পৃথিবীর এখন সবচেয়ে খারাপ জায়গা এটি; এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় এবং সবকিছু ঘটছে অন্ধকারে, কারণ সুদানে যা ঘটছে তা নিয়ে খুব কম মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।”

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক তেদ্রোস বলেন, সৌদি হাসপাতালে হামলার আগে স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনার ওপর ১৮৫টি হামলার তথ্য যাচাই করে দেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এসব হামলায় ১২০৪ জন নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যসেবার ওপর সব হামলা অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে বন্ধ করতে হবে। সব রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আওতায় সুরক্ষিত রাখতে হবে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক!”

বিবিসি লিখেছে, এল-ফাশের দখল হওয়ার ফলে দেশটি কার্যত বিভক্ত হয়ে গেছে; আরএসএফ এখন দারফুর ও পাশের কর্ডোফানের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, আর সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুম, মধ্য ও পূর্বাঞ্চল (লোহিত সাগর) নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই গোষ্ঠী একসময় মিত্র ছিল— ২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তারা যৌথভাবে ক্ষমতায় আসে। পরে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত বেসামরিক সরকার রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ঘিরে তাদের মধ্যে বিভাজন দেখা দেয়।