১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সারার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন সংক্রান্ত সার্বিক প্রস্তুতি আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে সুন্দর, উৎসবমুখর ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
প্রেস সচিব বলেন, আজকের প্রায় দুই ঘণ্টার এই সভায় মূলত চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। প্রথমত সোশ্যাল ডিসইনফরমেশন বা এআইসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ানো অপপ্রচার, ভুল তথ্য (মিসইনফরমেশন/ডিসইনফরমেশন) দ্রুততার সঙ্গে মোকাবিলা করা। দ্বিতীয়ত পদায়ন ও বদলি বিষয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠ প্রশাসনে যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের পদায়ন। তৃতীয়ত, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কার্যকর প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং চতুর্থত, নির্বাচনের আগে ও পরের ৭২ ঘণ্টাসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট (মোতায়েন)।
শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা (বিশেষ করে ডিসি, এডিসি, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার হিসেবে) কোনো ভূমিকায় থাকলে তারা এবারের নির্বাচনে পদায়ন পাবেন না। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, কর্মদক্ষতা, শারীরিক ফিটনেস, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের স্বচ্ছতা এবং পূর্বেকার পোস্টিং ও কোনো নেতিবাচক রিপোর্ট আছে কি না, এসব বিষয় যাচাই করে যোগ্যতম ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হবে।
শফিকুল আলম আরও বলেন, নিজ জেলায় বা শ্বশুরবাড়ি রয়েছে এমন কোনো এলাকায় পদায়ন হবে না। কোনো আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেক্ষেত্রেও পদায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।
প্রেস সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন যে পুলিশ বাহিনীও একই মানদণ্ডে ৬৪ জেলায় একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং পদায়নে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও অপপ্রচার মোকাবিলার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজ (বিশেষ করে এআই-জেনারেটেড ছবি ও ভিডিও) মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিসইনফরমেশনের জন্য সেন্ট্রাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইসিটি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে খুব দ্রুততার সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপপ্রচার ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা ঠেকানো যায়।
‘যেহেতু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ফেক নিউজ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও নিবিড় আলোচনার জন্য বলা হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রায় ৯২ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এর মধ্যে ৯০ হাজার আর্মি সদস্য। সেনাবাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি করে থাকবে। নির্বাচনের আগের ও পরের ৭২ ঘণ্টার পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে টিভিসি, ডকুমেন্টারি ও ভিডিও দ্রুত তৈরি করে বিটিভি, সংসদ টিভি (নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে) এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য নির্বাচন কমিশন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
প্রবাসীদের জন্য অ্যাপ ও ব্যালট সুবিধার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের জন্য এবং আরও তিনটি বিশেষ গ্রুপের (আইনের আওতায় থাকা বা জেলে থাকা ব্যক্তি, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা) জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুবিধাসহ একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছে। খুব দ্রুত এই অ্যাপটি নির্বাচন কমিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হবে।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—যত ঝড় যাই থাকুক আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে এবং ‘বেস্ট প্রিপেয়ারড’ হয়ে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।