মাধ্যমিকের ৩ কোটি ৮৯ লাখ বই ছাপানো এখনো বাকি
প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক শতভাগ মুদ্রণ ও সরবরাহ হলেও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবই এখনো ছাপানো হয়নি। ছাপানো শেষ না হাওয়ায় সরবরাহও বাকি রয়েছে।
ফলে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী নতুন বছরের ১ জানুয়ারি নতুন বই হাতে পাবে না।
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের মান উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি এবং ষষ্ঠ ও নব শ্রেণির শতভাগ শিক্ষার্থী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বই হাতে পাবে।
আর ১ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৭০ শতাংশ এবং অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৬০ শতাংশ বই হাতে পাবে। মাধ্যমিক স্তরের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাঠ্যবই হাতে পাবে ১৫ জানুয়ারি।
এনসিটিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩০ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৪টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের চাহিদা নির্ধারণ করে মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে স্তর ভিত্তিক হিসেবে প্রাথমিকে ১১ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬১টি ও মাধ্যমিকে ১৮ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৬৯৩টি।
আর শিক্ষা ধারা ভিত্তিক হিসেবে সাধারণ শিক্ষায় ২২ কোটি ৯২ লাখ ২৬২টি, মাদরাসা শিক্ষায় ৭ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫২টি ও কারিগরি শিক্ষায় ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪০টি।
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয় ৫ মে, প্রাথমিক স্তরে প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ১৯ মে প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রাথমিক স্তরের সাধারণ শিক্ষা ধারার পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের শেষ তারিখ ছিল ১৫ ডিসেম্বর। আর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দরপত্র পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের তারিখ ছিল ২৮ আগস্ট।
মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয় ২ সেপ্টেম্বর, সপ্তাম শ্রেণির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর এবং অষ্টম শ্রেণির জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয় ৪ সেপ্টেম্বর।
চুক্তি অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের শেষ তারিখ ছিল ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি এবং নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের শেষ তারিখ ছিল ২ ফেব্রুয়ারি।
মুদ্রণ বাকি ৩ কোটি ৮৯ লাখ
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সংখ্যার হিসেবে মোট পাঠ্যবই ১৮ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৬৯৩টি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ, ২১ হাজার ৮৮৩টি (৭৮.৭২%)। মুদ্রণ বাকি আছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮১০টি বই।
মোট সরবরাহ হয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৮৬১টি (৫৮.৬৮%)। সরবরাহ বাকি আছে ৭ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৮৩২টি।
চুক্তি অনুযায়ী মুদ্রণ ও সরবরাহের শেষ তারিখ ২২ জানুয়ারি, তবে সরবরাহের সম্ভাব্য তারিখ ১৫ জানুয়ারি। সবশেষ পুনঃদরপত্র হওয়া ১৭টি লটের (ইবতেদায়ি, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণি) ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৪১১টি বইও ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরবরাহ করা যাবে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ইবতেদায়িসহ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণ হয়েছে ৮৭ দশমিক ০১ শতাংশ, যার মধ্যে সরবরাহ হয়েছে ৬৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণ হয়েছে ৬৬ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং সরবরাহ হয়েছ ৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণ হয়েছে ৫৪ দশমিক ০৩ শতাংশ, যার সরবরাহ হয়েছে ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
নবম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণ হয়েছে ৮৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার সরবরাহ হয়েছে ৭২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
আর ইবতেদায়ির পাঠ্যবই মুদ্রণ হয়েছে ৯৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, যার মধ্যে সরবরাহ হয়েছে ৯৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। ইবতেদায়ির পাঠ্যবই প্রাথমিক স্তরের হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে বাজেট প্রাপ্তির কারণে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে দরপত্র কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছে এনসিটিবি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী জানান, মাধ্যমিক ও কারিগরি স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির প্রায় শতভাগ এবং সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির যথাক্রমে ৭০ শতাংশ ও ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সর্বশেষ সময়সীমা ৩ ফেব্রুয়ারি হলেও আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ বই সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, নিবিড় যাচাই-বাছাইয়ের কারণে এবার অতিরিক্ত ১ কোটি বইয়ের চাহিদা এড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং মান রক্ষার্থে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২২টি মুদ্রিত বই বাতিল করা হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে শতভাগ মুদ্রণ ও সরবরাহ
এনসিটিবি জানায়, গত ১৫ ডিসেম্বর প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চুতর্থ ও পঞ্চম) মোট পাঠ্যপুস্তক ১১ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬১টি। চুক্তি অনুযায়ী, মুদ্রণ ও সরবরাহের শেষ তারিখ ছিল ৪ জানুয়ারি, কিন্তু মুদ্রণ শেষে মোট বই বিজয় দিবসে ১৬ ডিসেম্বর দেশের সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ফলে ১ জানুয়ারি সব প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি স্তরের শিক্ষার্থী এবং ব্রেইল পদ্ধতির সব পাঠ্যপুস্তক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫টি ভাষায় মুদ্রিত শতভাগ পাঠ্যপুস্তক হাতে পাবে।
পাঠ্যবই অনলাইনে অবমুক্ত
নতুন বছর শুরুর আগেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের সব স্তরের পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ (পিডিএফ) উন্মুক্ত করেছে এনসিটিবি। রোববার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এনসিটিবি কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে (www.nctb.gov.bd ও www.nctb.portal.gov.bd) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ব্রেইল পদ্ধতি, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি স্তরের মোট ৬৪৭টি পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু করে, তার আগে প্রায় শতভাগ বই পৌঁছে যাবে। বইয়ের মান নিয়ে যে সব প্রেসের নাম এসেছিল সেখানে যাওয়া হয়েছিল। পুনঃদরপত্র করতে হয়েছে, নির্ভুল করার জন্য সময় লেগেছে। এসব সমস্যা না হলে ডিসেম্বরের ৫-৭ তারিখের মধ্যে বই পৌঁছে দিতে পারতাম। আজ ওয়েবসাইটে উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে বাচ্চারা সামনের বছর কী বই পাবে, সেটা তারা অনলাইনে দেখতে পাবে।
প্রাথমিকে বই উৎসব ১ জানুয়ারি
রোববার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী ১ জানুয়ারি সারাদেশে পালিত হতে যাচ্ছে ‘বই বিতরণ উৎসব’। ১ জানুয়ারি প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উৎসবের পাশাপাশি মা/অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।