খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দিতে আসছে মানুষ, নিরাপত্তা জোরদার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।
জানাজা ঘিরে মানিক অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের আশেপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে জানাজায় অংশ নিতে রাজধানী ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ের পূর্বপ্রান্তে আর্চওয়ে গেইট পার হয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর ৬ টায় মারা যান খালেদা জিয়া। ওই হাসপাতালে তিনি চিৎসাধীন ছিলেন ৪০ দিন ধরে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আর বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন দুইবার।
দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের দিনে দেশজুড়ে শোকের আবহ চলছে।
বুধবার ভোরে দেশের সব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মধ্য দিয়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক শুরু হয়েছে। এদিন সাধারণ ছুটিও চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠান হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। এজন্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার মরদেহ নেওয়া হচ্ছে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ে।
বেলা ১১টার দিকে জাতীয় পতাকাবাহী শোভিত তার লাশবাহী গাড়ি গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ি থেকে রওনা হয়। গাড়িবহরে একটি বাসে রয়েছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সকালে গুলশান অ্যাভিনিউয়ে ১৯৬ নম্বর বাসায় খালেদা জিয়ার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখান বিএনপির নেতা কর্মী ও স্বজনেরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে স্থাপিত মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কফিন রাখা হবে। এদিন বাদ জোহর সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই ১৯৮১ সালের ২ জুন তার স্বামী, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জানাজার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাকে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভেনিউজুড়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে।
জানাজায় অংশ নিতে সিরাজগঞ্জ থেকে একজন বলেন, “ম্যাডামের জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য আসছি। আমরা গার্মেন্টসে কাজ করি গাজীপুরে। ফজরের নাম পড়ে বের হয়েছি, সকাল সাড়ে ৮টায় পৌঁছেছি। গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রীর কথা মনে হলে আর থাকতে পারিনা; শীত ঝড়বৃষ্টি কোনো কিছু বাধা না। আমার মত হাজারও খেটে খাওয়া মানুষ এখানে জড়ো হয়েছে।”
কান্নজড়িত কণ্ঠে ষাটোর্দ্ধ একজন বলেন, “আমরা এসেছি নাটোর থেকে। এখানে রাত ৪টার সময় এখানে এসেছি। দেশমাতা আপোসহীন নেত্রীর জানাজায় এসেছি। শেষবারের মত প্রিয় মাকে বিদায় জানাতে এসেছি, মহানেআল্লাহ যেন জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দেন।”
বান্নাজড়িত কণ্ঠে বিএনপির এক কর্মী বলেন, “খালেদা জিয়াকে মায়ের মত স্মরণ করছি। আমাদের মা চলে গেছেন, উনাকে মায়ের রূপে দেখে আসছি। আল্লাহ যেন বেহেস্ত নসিব করেন।”
রাজশাহী থেকে আসা এক ব্যক্তি ভোর সাড়ে ৪টায় নামেন বিমানবন্দর স্টেশনে।
তিনি বলেন, “জানাজায় অংশ নিতে এসেছি। দল করি, নেত্রীর জন্যই এসেছি।”
সকাল ৮টার আগেই ময়মনসিংহ থেকে আসা তরুণ রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার মত বহু মানুষ জানাজায় অংশ নিতে ঢাকায় ঢুকেছেন পায়ে হেঁটে।
তারা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পশ্চিম দিক থেকে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধার মুখে পড়েন নিরাপত্তা সদস্যদের; জানাজার প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করতে ও শৃঙ্খলা বজায়ে এ প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
রহিম বলেন, “আসাদগেট-আড়ংয়ের মোড় থেকে নানা অলিগলি ঘুরে খামারবাড়িতে পৌঁছি। জানাজায় অংশ নিতে ভিড়ের কথা ভেবেই সকাল সকাল চলে এলাম; দেখি এখনই জনস্রোত।”
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে জানাজায় অংশ নিতে চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী এসেছেন।
একজন বলেন, “আমরা হাজার হাজার নেতাকর্মী এসেছি জানাজায় অংশ নিতে । আজ মজলুম জননেত্রী ছিলেন, সবার প্রাণ প্রিয় ছিলেন। সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উনার জন্য কাঁদছে। উনি যেন বেহেস্তে সর্বোচ্চ স্থান পান-এ দোয়া করছি “