তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার
সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া ব্যবসায়ীদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্ম গেইটের খামার বাড়িতে বস্ত্র অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবসের’ কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছি। একই সাথে আমরা তাদের একটি সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”
গত ১৪ অক্টোবর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বোতলের সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ছয় টাকা এবং খোলা তেল আট টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা আসে। তার এক দিন আগে খুচরা বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ থেকে বেড়ে ১৯৮ টাকা হয়ে যায়। খোলা তেলের লিটারে বাড়ে ৫ টাকা।
কিন্তু সরকারের তরফে সেই সিদ্ধান্তে সায় মেলেনি। সরকারকে না জানিয়েই আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে বলে দাবি করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, “তারা (ব্যবসায়ীরা) আমাদের না জানিয়ে কাজটি করেছে। তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করেছে। আমি গতকাল (বুধবার) এটা স্পষ্ট করে বলেছি–আমরা ব্যবস্থা নেব।’’
আগের দিন সরকারের তেল কেনার সবশেষ তথ্য তুলে ধরে শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “উনারা (ব্যবসায়ীরা) যে দামে আজ বাজারে তেল বিক্রি করছেন, সেখান থেকে প্রায় ২০ টাকা কমে আমাদেরকেই তেল দিয়েছেন।
“তাহলে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রির কোনো যৌক্তিকতাই দেখি না। গতকালই তো কিনেছি উনাদের থেকে; ৫০ লাখ লিটার তেল কিনেছি; এক-দুই লিটার না। যদি ৫০ লাখ লিটার তেল টেন্ডারে ২০ টাকা কমে আমরা কিনতে পারি, তাহলে বাজারে কেন এত দাম হবে? যৌক্তিক কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না।’’
‘অযোগ্য, অদক্ষ ও দুর্নীতিতে ধ্বংস হয় পাট’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের পাট শিল্প ধ্বংস হওয়ার পেছনে ‘নীতিগত ত্রুটিও’ ছিল।
কোনো প্রকার আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই শিল্পটি জাতীয়করণ করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে।”
জাতীয়করণ করার পরে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তা চালানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। এই সিদ্ধান্ত ‘ভুল’ ছিল মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “অদক্ষ, অযোগ্য এবং দুর্নীতি পরায়ণতা দিয়ে পরিচালিত হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত কলগুলো। পাটকে বৈচিত্র্যময় করতে ব্যর্থ হয়, উচ্চ বাজার চাহিদা সত্ত্বেও পাট পণ্যের সরবরাহে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি ছিল।’’
পাট নিয়ে সেই ভুল আর হবে না–এমন আশাবাদ রেখে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “অযোগ্য, অদক্ষ লোকগুলো নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পাট নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল, যা বাস্তবমুখী ছিল না।
“সারা দেশের ৭১টা কলেজ-ইনস্টিটিউট থেকে যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হচ্ছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশের মোট রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চাই, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই বস্ত্র খাতের। আমরা রঙিন স্বপ্ন দেখাতে চাই না, যাতে কোনো ভুল আবার না হয়।”
অন্তর্বর্তী সরকার ১৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে তথ্য দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আরো কয়েকটি শিল্প প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এগুলো ভালো চলছে।”