ডিসি রদবদলে শুরু হল নির্বাচনি প্রশাসন সাজানো
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনার মধ্যে এবার মাঠ প্রশাসনে নজর দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে ঢাকাসহ ১৫ জেলার ডিসি পাল্টে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার রোববার বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির লক্ষ্যে ভোটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যারা থাকবেন প্রশাসন-পুলিশে, রদবদল আনা হচ্ছে এবং হবে।
“বিশেষ করে ভোটের কাজে সম্পৃক্ত ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা থাকবেন, তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত এ ধরনের রদবদল চলবে। নিরপেক্ষ, যোগ্য কর্মকর্তাদের ভোটের দায়িত্বে রাখা হবে।”
তফসিল ঘোষণার পরে যাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসবে, খতিয়ে দেখে তাদের রদবদল করা হবে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাঠ প্রশাসনসহ পাঁচটি বিশেষ সমন্বয় ও তদারকি কমিটি গঠন করেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। মাঠ প্রশাসন সমন্বয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিতে সামনে আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়েও জোর দেন তিনি। ইতোমধ্যে সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও সচিব বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় করে এসেছেন। নতুন আচরণ বিধিমালা জারির কথা রয়েছে দুয়েক-দিনের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল বলেন, “আমরা সিরিয়াসলি আচরণবিধির উপর কাজ করব। জেলায় জেলায় আমরা যাচ্ছি। ম্যাজিস্ট্রেটদের বলা হচ্ছে, ডিআইজিদের বলা হচ্ছে।
“এটা যেন কঠিনভাবে দেখা হয়। তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে আমরা কঠোর থাকব।”
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিংসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিতদের’ না রাখার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
রাজনৈতিক দলগুলোও লেভেল প্লেলয়িং ফিল্ড নিশ্চিতেতে প্রশাসন-পুলিশে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রদবদলে জোর দিয়ে আসছে।
ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ভোট প্রস্তুতির সার্বিক অগ্রগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নিয়ে প্রথম সমন্বয় সভা করেছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের বাছাই করে নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত স্থানে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ‘সক্ষম’ ব্যক্তিদের বেছে নিয়ে নিয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
আগে তত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের ক্ষণগণনা শুরুর নির্ধারিত সময় ঘিরে প্রশাসন-পুলিশে রদবদলের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রশাসন সাজানোর বার্তা পাওয়া যেত।
২৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম সমন্বয় সভা করে। এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তফসিল ঘোষণার দেড় মাস আগে নভেম্বরের প্রথমে ভোটের প্রচারাভিযান শুরু করে নেমেছে রদবদলে।
ভোটের প্রাক-প্রস্তুতিমূলক আন্তঃন্ত্রণালয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা সভা করেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি। ৩০ অক্টোবর বৈঠকে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইসি বলেছে, এখন পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল হবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে। এরপর যখন তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখন নির্বাচন কমিশনও রদবদলের নির্দেশনা দেবে।
ইসির নির্দেশনার বিষয়ে সচিব আখতার আহমেদের ভাষ্য, “মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল হবে। মাঠ প্রশাসনের যে সমস্ত রদবদল হবে, সেটা প্রাথমিকভাবে এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করছেন।
“পরবর্তীতে যখন নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করবে, তখন আমরা নির্বাচন কমিশন থেকেও তাদের সেভাবে জানাব।”
ভোটপ্রস্তুতি গুছিয়ে এনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। এরপরই শনিবার প্রথমধাপে ১৫ জেলা প্রশাসক রদবদল করা হয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৃহস্পতিবার বলেন, “সব কাজ গুছিয়ে তফসিল ঘোষণার জন্য শেষ ধাপে রয়েছে আমাদের ভোট প্রস্তুতি। এখন সমন্বয়ের কাজটি অন্যতম। কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নসূচি ধরে কাজের গতি আরও বাড়বে তফসিল ঘোষণার পরে।”
আচরণবিধি প্রতিপালনে জোর
নির্বাচনি পরিবেশ অনুকূলে আনতে সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যে দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াও শুরু করছে। তাতে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় গোলযোগের খবর আসছে। আবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনি এলাকা ছেয়ে আসছে নানা রঙের পোস্টারে।
এবার নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার বন্ধসহ নানা বিধিনিষেধ যোগ হয়েছে। সেই সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারেও রয়েছে কড়াকড়ি।
তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালনে জোর তৎপরতায় নামবে নির্বাচন কমিশন। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব বণ্টনের পাশাপাশি নির্বাচন কর্মকর্তারাও তদারকির ভার পাবেন। ইসির নির্দেশনায় রিটার্নিং অফিসার সার্বিক তত্ত্বাবধানের কাজ করবেন।
এর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে সম্পৃক্ত করে ইসি সচিবালয় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার আগেই সব নির্বাচনি এলাকা থেকে পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানারসহ সব ধরনের প্রচার সামগ্রী অপসারণ করার সময় বেঁধে দেবে।
সেই সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তাদের জেল-জরিমানার বিধান তুলে ধরে আগাম সতর্কও করতে পারে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।