কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধরা
কুড়িগ্রাম, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): পৌষ আসতে না আসতেই জেলাজুড়ে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। শৈত্যপ্রবাহ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও হিমেল বাতাস, ঘন কুয়াশা আর রাতভর বৃষ্টির মতো শিশির ঝরায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
নদনদী বেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোতে শীতের তীব্রতা যেন আরও কয়েক গুণ বেশি। কুড়িগ্রামের ১৬টি নদীর তীরে বিস্তৃত ৪৬৯টি চরের মধ্যে ২৬৯টিতে মানুষের বসবাস। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ এই চরাঞ্চলের বাসিন্দা। শীতের শুরুতেই হিমেল বাতাসে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ।
সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী দইখাওয়ার চর, রাউলিয়া, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চরগুজিমারি দাগারকুটি, চিলমারীর কড়াই, বরিশাল, অষ্টমীর চর, রৌমারীর সুখের বাতি এবং রাজারহাটের তিস্তা তীরবর্তী চর বিদ্যানন্দ, ধরলা নদীর তীরবর্তী গোরক মন্ডল, ধনী রাম, জগমোহনের চরসহ সব চরাঞ্চলে তীব্র শীত জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নেও শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ-বেষ্টিত এ ইউনিয়নে প্রায় ২০টি চর রয়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বাসসকে বলেন, কালির আলগা, গোয়াইলপুরী, ঝুনকার চর, রলাকাটা, পোড়ার চর, ভগবতীপুরসহ এসব চরে বসবাসকারী প্রায় ১৬ হাজার মানুষ শীতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েছেন মহাবিপাকে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে একটি শীতবস্ত্রও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, শীতের তীব্রতায় দিনমজুর শ্রেণির মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বাসসকে বলেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর কুড়িগ্রামে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। এ কয়েকদিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির আশপাশে ওঠানামা করবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। জেলা সদর হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সর্দি-কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা এসময় শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শীতের প্রকোপে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়েছে। সারাদেশে স্কুলগুলোতে এখন চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন গোয়াইলপুরী চরের গোয়াইলপুরী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মোছা:সুমাইয়া বাসসকে বলেন,এখন প্রচণ্ড শীত আর হিমেল হাওয়ার কারণে স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে। একটু ঠান্ডা বাতাস লাগলেই সর্দি-কাশি শুরু হয়ে যায়।
কথা হয় একই বিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। এসময় রিক্তা খাতুন ও সুমি আক্তার জানান, হিমেল হাওয়ার কারণে চর অঞ্চলে শীত অনুভূত হাওয়ায় স্কুলে যাতায়াতসহ নানা সম্যাসায় পড়তে হচ্ছে।
তিস্তা নদীর তীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার বিন্দান্দ ইউনিয়নের পাড়ামৌলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ(৬০) বাসসকে বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় আমার পরিবারসহ এই এলাকায় মানুষজন শীতে কষ্ট পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো শীত বস্ত্র পাইনি।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন স্বপন কুমার বিশ্বাস বাসসকে বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এই শীতে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া ভালো। এই আবহাওয়ায় হঠাৎ করেই ঠান্ডা লেগে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এসময় পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।