সোমবার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২৪ ১৪৩২, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি : ক্লাস শুরু ১ জানুয়ারি, ‘চূড়ান্ত হচ্ছে’ অধ্যাদেশ মাগুরায় সংঘর্ষে আহত যুবকের মৃত্যু, ফের সংঘাতে আহত ৫০ ভোট: এবার নিবন্ধন পেল ৮১ স্থানীয় পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ক্ষমতায় যাওয়ার অপেক্ষায় জামায়াত, বললেন পরওয়ার কারাগারে শওকত মাহমুদ, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার বিটিভি-বেতারে সিইসির তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড ১০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা আরো পেছাল মহানবীকে কটূক্তি: তিতুমীরের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ রিমান্ডে উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রিমান্ডে দিলে হার্ট অ্যাটাক করতে পারি: আদালতকে নাসার নজরুল আনিসুল-মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যায় গৃহকর্মী, ধারণা পুলিশের সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির ভারতের গোয়া নাইটক্লাব অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২৫ জনের মধ্যে নেপালি ৪ জন নিউইয়র্কে ইসরাইল, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত

ইসলাম

ইসলাম ও জ্ঞানচর্চা: মুসলিমরাই বিশ্বসভ্যতার প্রথম দীপাধার

 প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ও জ্ঞানচর্চা: মুসলিমরাই বিশ্বসভ্যতার প্রথম দীপাধার

ইসলামের প্রথম বাণী ‘ইকরা’ বা পড়ো। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার হেরা গুহায় জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে অনুরণিত হয়েছিল এ বাণী। সে ঐশী ধ্বনিই মুসলিমদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রথম অনুপ্রেরণা। কাল-কালান্তরে এই একটিমাত্র শব্দতরঙ্গ জ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণায় মুসলিমদের উতলা করে তুলেছে।

ইসলাম জ্ঞানচর্চায় যেটুকু গুরুত্বারোপ করেছে পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম ও মতবাদ এতটা গুরুত্বারোপ করেনি। ইলম বা জ্ঞানের গুরুত্বে ও মাহাত্ম্যে কোরআন ও হাদিসে প্রচুর উদ্ধৃতি রয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়তম রাসুল (সা.)-কে শিখিয়েছেন জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি বলুন—হে আমার প্রভু, আপনি আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১১৪)

প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে জ্ঞানার্জনে উদ্বেলিত করতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইলম তথা জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)

রাসুল (সা.) জ্ঞানার্জনের চেতনা মুসলিমদের মধ্যে এমনভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন যে তরুণ, বৃদ্ধ ও নর-নারী সবাইকে জ্ঞানচর্চার চেতনায় উজ্জীবিত করে দিয়েছিল। ফলে তাঁরা শুধু একটি হাদিসের জন্য এক মাসের পথ পাড়ি দিয়ে মদিনা থেকে সুদূর সিরিয়ায় গমন করতেও পিছপা হতেন না। জ্ঞানের জন্য তাঁরা আন্দালুস বা স্পেন থেকে খোরাসান পর্যন্ত চষে বেড়াতেন।news24bd

ধর্ম-জীবন- ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, 

ইসলামের প্রথম বাণী ‘ইকরা’ বা পড়ো। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার হেরা গুহায় জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে অনুরণিত হয়েছিল এ বাণী। সে ঐশী ধ্বনিই মুসলিমদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রথম অনুপ্রেরণা। কাল-কালান্তরে এই একটিমাত্র শব্দতরঙ্গ জ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণায় মুসলিমদের উতলা করে তুলেছে।

ইসলাম জ্ঞানচর্চায় যেটুকু গুরুত্বারোপ করেছে পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম ও মতবাদ এতটা গুরুত্বারোপ করেনি। ইলম বা জ্ঞানের গুরুত্বে ও মাহাত্ম্যে কোরআন ও হাদিসে প্রচুর উদ্ধৃতি রয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়তম রাসুল (সা.)-কে শিখিয়েছেন জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি বলুন—হে আমার প্রভু, আপনি আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১১৪)

প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে জ্ঞানার্জনে উদ্বেলিত করতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইলম তথা জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)

রাসুল (সা.) জ্ঞানার্জনের চেতনা মুসলিমদের মধ্যে এমনভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন যে তরুণ, বৃদ্ধ ও নর-নারী সবাইকে জ্ঞানচর্চার চেতনায় উজ্জীবিত করে দিয়েছিল। ফলে তাঁরা শুধু একটি হাদিসের জন্য এক মাসের পথ পাড়ি দিয়ে মদিনা থেকে সুদূর সিরিয়ায় গমন করতেও পিছপা হতেন না। জ্ঞানের জন্য তাঁরা আন্দালুস বা স্পেন থেকে খোরাসান পর্যন্ত চষে বেড়াতেন।

রাসুল (সা.) থেকে জ্ঞানাহরণের জন্য পালাক্রমে একজন সাহাবি সাংসারিক কাজকর্ম করতেন, আরেকজন রাসুল (সা.) থেকে জ্ঞান আহরণ করে অপরজনকে জানাতেন। আবু হুরায়রা (রা.) খেয়ে না খেয়ে রাসুল (সা.) থেকে জ্ঞানাহরণের জন্য মসজিদে নববীর একপাশে দিনাতিপাত করতেন। এভাবে ইলমচর্চার ফলে জাহিলিয়াতের নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমগ্র বিশ্বের অনুকরণীয় এক বিস্ময় জাতিতে পরিণত করেছিল।

মুসলিমরা কোরআনের তাফসির, হাদিস ও তার ব্যাখ্যা, সাহিত্য ও অলংকারশাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, ফিক্বাহ শাস্ত্রসহ অন্যান্য ধর্মদর্শনে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি জাগতিক সব বিদ্যায় বিস্ময়কর অবদান রেখেছেন ও রাখছেন। আবহাওয়াবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আইনবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ববিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, গণিতশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্য সব ক্ষেত্রে মুসলিমদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাদের পদচারণ ছিলো সরব ও সফল।

অস্ত্রোপচার বিদ্যায় আবুল কাসেম জাহরাভির ‘আত-তাসরিফ’, চোখের ব্যাধি ও তার উপশমে আবুল কাসেম মাওসিলির ‘আল মুন্তাখাব ফি ইলাজিল উয়ুন’, রসায়নে জাবের বিন হায়্যানের ‘কিতাবুর রহমাত’, ‘কিতাবুত-তাজমি’, ‘সুন্দুকুল হিকমা’ ও ‘রিসালাহ ফিল কিমিয়া’, বিজ্ঞানী রাজীর ‘কিতাবুল হাজার’, ‘কিতাবুল আকসীর’, ‘কিতাবুদ-তাদবীর’, ইবনে আব্দুল মালেক আল-খাওয়ারেজমি আল-কাসির ‘আয়নুস-সানাহ’, জ্যোতির্বিদ্যায় আল-বাত্তানির ‘কিতাবুল জিজ’, আবু মাশার আল জাফরের ‘জিজ আবি মাশার’, মহাবিজ্ঞানী আল-বিরুনীর ‘কানুনে মাসউদি’, বীজগণিতে উমর খৈয়ামের ‘কিতাবুল জাবর’, আল-কারখির ‘আল-কাফি ফিল হিসাব’, অ্যালজেব্রাখ্যাত মুসা আল-খাওয়ারিজমীর ‘হিসাবুল জাবরি ওয়াল মুকাবালাহ’, চিকিৎসাবিদ্যায় আবু আলী ইবনে সিনার ‘আল কানুন ফিত-তিব’, আলী ইবনে রাব্বানের ‘ফিরদাউসুল হিকমাহ’, বিজ্ঞানী রাজীর ‘আল-কিতাবুল মানসুরি’, ‘আল কিতবুল হাভি’, ‘আল জুদারী ওয়াল হাসবাহ’, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ফারাবির ‘সিয়াসাত’ ‘আরা’, ইবনে খালদুনের ‘মুকাদ্দামা’, ইতিহাসশাস্ত্রে কালবীর ‘জামহারাতুন-নাসাব’, ওয়াকেদির ‘আল-মাগাজি’, বালাচজুরির ‘ফুতুহুল বুলদান’, ইমাম তাবারির ‘তারিখুল রুসুল ওয়াল-মুলুক’, আরবের হিরোডাটাসখ্যাত আল-মাসউদির ‘মিরআতুয-জামান’, ইমাম জাহাবির ‘তারিখুল ইসলাম’, ইমাম ইবনে আসাকিরের ‘তারিখে মদিনাতে দিমাশক’, স্পেনীয় মনীষী ইবনে খালদুনের ‘তারিখে ইবনে খালদুন’সহ মুসলিমদের শতসহস্র জ্ঞানগ্রন্থ জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের উজ্জ্বল স্মারক বহন করে চলছে। হিরকখণ্ডতুল্য এসব গ্রন্থ আধুনিক সভ্যতার দিকপালে পরিণত হয়েছে।

এসব জ্ঞানগ্রন্থ আরবি থেকে লাতিন ও ইংরেজিতে অনূদিত হওয়ার পর জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। (বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, মুহাম্মাদ নুরুল আমীন)

সুতরাং মুসলিমরাই বিশ্বসভ্যতার প্রথম ও প্রকৃত দীপাধার। আজকের আধুনিক বিশ্বের উন্নতি ও চোখ-ধাঁধানো উৎকর্ষের নেপথ্যে রয়েছে মুসলিম মনীষীদের অদম্য জ্ঞানসাধনা ও নিরলস বিদ্যাচর্চা। এ কথা পাশ্চাত্য ও ইউরোপের বহু গবেষক অকপটে স্বীকার করেছেন। যেমন—বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ কার্লাইল লেখেন, ‘আরবরা ছিল মরুচারী বেদুইন। যুগ যুগ ধরে তারা ছিল অবহেলিত। এরপর যখন তাদের মধ্যে একজন নবীর আবির্ভাব ঘটল, তখন তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হলো। স্বল্পতার পর আধিক্যতা লাভ করল। অবহেলিত হওয়ার পর বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ আসন অর্জন করল। এক শতাব্দী পার হতে না হতেই তারা তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমগ্র জাহান আলোকিত করে ছাড়ল।’ [আর-রাসুলুল মুআল্লিম ওয়া আসালিবুহু ফিত্তালিম; শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ, ১১ (টীকা)]