সোমবার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২৪ ১৪৩২, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

সুদানে ‘নৃশংসতা ঢাকার চেষ্টার’ মধ্যে মিলিশিয়া হামলা, নিহত ১১৪

 প্রকাশিত: ১২:১২, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সুদানে ‘নৃশংসতা ঢাকার চেষ্টার’ মধ্যে মিলিশিয়া হামলা, নিহত ১১৪

সুদানের কালোগি শহরে মিলিশিয়া বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) শতাধিক বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে এল ফাশেরে হাজার হাজার মানুষ হত্যার প্রমাণ মুছে ফেলছে তারা।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আরএসএফ বাহিনী বৃহস্পতিবার কর্দোফানের কালোগিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে ১১৪ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ৪৬ জনই শিশু।

“সুদানি সম্প্রদায়গুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) মিলিশিয়া পরিচালিত চলমান গণহত্যা অভিযানের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কালোগিতে প্রাথমিক আক্রমণটি একটি কিন্ডারগার্টেনকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। ড্রোন থেকে রকেট নিক্ষেপ করে এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল বিপুল সংখ্যক শিশুকে হত্যা করা।

প্রথম হামলার পর স্থানীয়রা যখন কিন্ডারগার্টেনে ছুটে আসেন, তখন আরএসএফ আরেকটি হামলা চালায়, যে হামলা আরও অনেক মানুষ ও শিশুর মৃত্যু ঘটায়।

ইউপিআই লিখেছে, আরএসএফ সদস্যরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে ‘ভুক্তভোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের ধাওয়া করে’ এবং একটি সরকারি ভবনে রকেট হামলা চালায়। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা ১১৪ জনে পৌঁছায়।

ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “স্কুলে শিশুদের হত্যা করা শিশুদের অধিকারের একটি ভয়াবহ লঙ্ঘন। সংঘাতের মূল্য কোনোদিনই শিশুদের দেওয়া উচিত নয়।”

অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সহায়তার প্রশ্নে যাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে, তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য নিরাপদ, বাধাহীন প্রবেশ নিশ্চিত করুন।”

উত্তর দারফুরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ৩৯টি ট্রাকের বহরে হামলার পর এ মানবিক সহায়তার আহ্বান এল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবর তুলে ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার তুর্ক বলেন, “এল ফাশেরের ভয়াবহ ঘটনার পর এত দ্রুত কর্দোফানে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখা সত্যিই হতবাক করার মত। আমরা কর্দোফানকে আরেকটি এল ফাশের হতে দিতে পারি না।”

দীর্ঘ অবরোধের পর ছয় সপ্তাহ আগে উত্তর দারফুরে এল ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নেয় আরএসএফ। এরপর থেকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড শুরু করে এ মিলিশিয়া বাহিনী।

গার্ডিয়ান শুক্রবার লিখেছে, এল ফাশের এখন ‘বিরাট অপরাধস্থলে’ পরিণত হয়েছে, যেখানে সড়কজুড়ে লাশের স্তূপ দেখা যাচ্ছে।

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, বেসামরিক লোকজনকে হত্যার প্রমাণ ধ্বংস করতে আরএসএফ বহু স্থানে মৃতদেহ স্তূপ করে হয় গণকবরে কবর দিচ্ছে নয়তোবা পুড়িয়ে ফেলছে।

শহরটিতে জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ তদন্তকারীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ, ফলে স্যাটেলাইট চিত্রই নৃশংসতার একমাত্র প্রমাণ।

বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, এল ফাশেরে ৬০ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেড় লাখ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।

গত দুই বছর ধরে আরএসএফ ও সুদানের সরকার গৃহযুদ্ধে লিপ্ত; এর মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরএসএফ বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছে।

যুদ্ধের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে এবং ব্যাপক মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।