মঙ্গলবার ০৪ নভেম্বর ২০২৫, কার্তিক ২০ ১৪৩২, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রেকিং

এনসিপিসহ ৩ দল পাচ্ছে নিবন্ধন আওয়ামী আমলে জলবায়ু প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি: টিআইবি দুটি দল যা বলে সরকার ‘তাই করছে’: মির্জা আব্বাস যশোরে আলোচনায় ‘কম বয়সী’ প্রার্থী শ্রাবণ শাহজালালের ই-গেট খুলে দেওয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নোয়াখালীতে ট্রাকের চাপায় ৬ অটোরিকশাযাত্রী নিহত নেতাকর্মীদের অবৈধ সুবিধা দিলেই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শাহজালাল বিমানবন্দর: পোড়া কার্গো কমপ্লেক্সের ভল্ট ভেঙে অস্ত্র চুরির অভিযোগ আগামী সপ্তাহে হাসিনার বিচার হবে: তথ্য উপদেষ্টা এই নির্বাচন আমার শেষ নির্বাচন: মির্জা ফখরুল ভোট: প্রশিক্ষণ পেলেন ৪৮ হাজার পুলিশ সদস্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত `যথাসময়ে` প্রার্থী ঘোষণা করবে জামায়াত: শফিকুর ফেরারি হলে ভোটে অযোগ্য, আর যা যা পরিবর্তন এল আরপিওতে জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট, অধ্যাদেশ জারি মেক্সিকোর মাদক চক্র প্রভাবিত রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ১৩

পর্যটন

দর্শনার্থীদের বরণে প্রস্তুত কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর

 প্রকাশিত: ১৮:৩২, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

দর্শনার্থীদের বরণে প্রস্তুত কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর

কুমিল্লা, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অমূল্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর অন্যতম। লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চলের কোলে, সবুজে মোড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিহার শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নয়— এটি দেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতা, স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির জীবন্ত সাক্ষ্য।

আসন্ন শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন এ দুই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঘিরে সাজানো হয়েছে ফুলের বাগান, উন্নত করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনরাত কাজ করছে।

জেলা সদর উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত শালবন বৌদ্ধ বিহারটি ধারণা করা হয় খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রী ভবদেব নির্মাণ করেন। প্রায় ৩৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ এবং চারপাশের দেয়ালের পুরু প্রায় পাঁচ মিটার। কেন্দ্রে অবস্থিত মূল মন্দিরটি ঘিরে রয়েছে ১১৫টি কক্ষ, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিদ্যা ও ধর্মচর্চায় নিমগ্ন থাকতেন। প্রতিটি কক্ষে তিনটি করে কুলুঙ্গি ছিল, যেখানে রাখা হতো দেবমূর্তি, প্রদীপ ও ধর্মীয় সামগ্রী।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে পাওয়া গেছে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়া মাটির ফলক, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি—যা প্রমাণ করে এ অঞ্চলে একসময় সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। 

বিহারের নামকরণ হয়েছে এখানকার শাল-গজারির ঘন বন থেকে, যার অবশিষ্ট কিছু এখনো টিকে আছে।

বিহারের পাশেই অবস্থিত ময়নামতি জাদুঘর, যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে লালমাই-ময়নামতির বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে উদ্ধার করা অসংখ্য পুরাকীর্তি, মূর্তি, টেরাকোটা ফলক ও মুদ্রা। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘর বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্য ও প্রাচীন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেশ-বিদেশের গবেষক ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে।

জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়ি এলাকা এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। 

শীতকাল এলেই এখানে নেমে আসে দর্শনার্থীদের ঢল দেশি-বিদেশি পর্যটক, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সফর দল, পরিবার ও বন্ধুদের পিকনিক পার্টিতে মুখর থাকে পুরো এলাকা।

নরসিংদী থেকে কুমিল্লা বার্ডে প্রশিক্ষণে এসে ঘুরতে আসা দিলীপ রড়ুয়া বলেন, এখানকার ইতিহাস সমৃদ্ধ নিদর্শনগুলো আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতা ও স্থাপত্যশৈলী দেখে মনে হয় যেন জীবন্ত ইতিহাসের ভেতরে হেঁটে চলেছি।

মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত প্রকৌশলী তানভীর আহম্মেদ বলেন, শালবন বিহার ঘুরে আমরা মুগ্ধ। এখানকার ফুলের সৌন্দর্য ও পরিবেশ চমৎকার। তবে আশেপাশে উন্নতমানের হোটেল ও বিশ্রামাগার থাকলে পর্যটকদের আরও সুবিধা হতো।

লাভ ফর বাংলাদেশ টুরিজমের সভাপতি মীর মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে এখানে পর্যটকদের আগমন বাড়ছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করছে। স্থানীয় অর্থনীতি, হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়ের ক্ষেত্রও এতে প্রসারিত হচ্ছে। তবে পর্যটন অবকাঠামো ও আবাসন সুবিধা আরও উন্নত করা গেলে কুমিল্লা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

জাদুঘর ও বিহারের কাস্টেডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী এখানে আসেন। শীত মৌসুমে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নিরাপত্তা, সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি পুরো বিহার এলাকা ফুলের বাগানে সাজানো হয়েছে, যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ আরও বাড়াচ্ছে।

জাদুঘর ও বিহার প্রাঙ্গণে এখন নানা প্রজাতির ফুলে সাজানো বাগান দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কারছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা ফুলের চারা রোপণ করে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে রঙিন স্বর্গরাজ্যে।

তিনি আরও জানান, প্রতি বছর শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়। দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্বও ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ টাকায়।

ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য সমন্বয় শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর শুধু কুমিল্লার নয়, পুরো বাংলাদেশের ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে নবজাগরণে মুখরিত এই ঐতিহাসিক স্থান জেগে উঠছে নতুন উদ্দীপনায়।