সোমবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ভাদ্র ১৭ ১৪৩২, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন পুরো বাংলাদেশকে এক সুতোয় বেঁধেছিল : আখতার

 প্রকাশিত: ১৭:২৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন পুরো বাংলাদেশকে এক সুতোয় বেঁধেছিল : আখতার

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০২৫(বাসস) : জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই গণআন্দোলনে এমন মানুষজন রাস্তায় নেমেছেন যারা একে অপরকে চিনতেন না, কিন্তু বিপদের মুহূর্তে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গুলিবিদ্ধ আহতকে অপরিচিত কেউ তুলে নিয়েছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহযোদ্ধাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। এ সময়টা আমাদের জাতিকে একসূত্রে বেঁধেছে—এটাই ছিল আমাদের বড় অর্জন।

আখতার হোসেন একজন দৃঢ়চেতা, আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিক হিসেবে ছাত্রাবস্থা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই তার সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা শুরু হয়। ২০১৮ সালে ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অনশন ও অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়েন। তার দৃঢ় অবস্থানের ফলে প্রশাসন বিতর্কিত সেই ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণে বাধ্য হয়।

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে সমাজসেবা সম্পাদক পদে ছাত্রলীগ-সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি বিজয়ী হন, যা ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ২০২১ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং শিক্ষার্থী ও জনস্বার্থে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন আদর্শবান ও কার্যকর নেতারূপে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে দীর্ঘ ৩৬ দিনের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান- এই সময়ে তিনি নির্দলীয় ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন, যা তাকে আরও একবার ছাত্রজনতার আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। ব্যক্তিগত মোহ ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করে রাজনীতিতে তিনি তৈরি করেছেন ভিন্নধারার এক পরিচিতি। রাজনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা।

রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের সদরা তালুক গ্রামের আব্দুস সালাম ও রোকেয়া বেগমের সন্তান আখতার হোসেন। রংপুরের ভায়ার হাট পিয়ারিয়া ফাযিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ধাপ-সাতগড়া বায়তুল মুকাররম মডেল কামিল মাদ্রাসায় আলিম সম্পন্ন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন তিনি। একবারে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা এ তরুণ বাংলাদেশের একটি অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক সংগঠনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ছ্ত্রানেতা থেকে জাতীয় নেতার পথটি কুসুম-কোমল ছিল না আখতার হোসেনের জন্য। একাধিকবার জেল-জুলুম, হামলা, মামলা, নির্যাতন ও জীবনহানির শঙ্কার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হয়েছিল। তারপরও শক্ত হয়ে লড়েছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন দেশের মাটি ও মানুষের নেতা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর প্রতিবেদক আল সাদী ভূঁইয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব, ভিতরের নানা ঘটনা, নির্যাতন, কারাভোগ ও মুক্তি নিয়ে তার নানান অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করেন।

আন্দোলনের শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও যৌক্তিক দাবি-আন্দোলন। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কখনোই সম্পূর্ণ কোটা বাতিল চাননি; বরং যুগোপযোগী সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। কারণ, অনগ্রসর ও পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কিছু অংশে কোটা সংরক্ষণের যৌক্তিকতা তখনও ছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তড়িঘড়ি করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে কোটা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেয় এবং পরবর্তীতে তা পরিপত্র আকারে জারি করে। তখন থেকেই আমাদের মধ্যে আশঙ্কা ছিল, এ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ভিন্নমুখী রায় আসার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেটিই বাস্তব হয়ে দেখা দেয়।

২০২৪-এ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার কর্মকান্ড নিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪-এ সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরো বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হলেন। ২৪-এর আগের ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, সড়ক আন্দোলন বা আবরারর ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের ক্ষমতাকাঠামোর যে সামান্য চিড় ধরেছিল সেটা সারতে তারা পরবর্তীতে মরিয়া হয়ে উঠে। যে পরিস্থিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলো সেটাকে ২৪ -এ ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন। 

ঠিক একইপন্থায় হাইকোর্টে রিট করে তারা কোটা ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সেদিনের ৫ জুন যখন রায় ঘোষণা করা হয় তখন আমি আমার ল’ চেম্বারে কাজ করছিলাম। ফেসবুকে ঢুকে জানতে পারি। ঠিক সে সময়টাতে এটা যে একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ও আমাদের শিক্ষার্থীদের ত্যাগের বিনিময়ে যে অর্জন এসেছিল তার সাথে প্রতারণা করা হলো। সে বিষয়ে ফেসবুকে লিখতে দেখি। 

আমার তৎকালীন সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা শুরু করি। এরমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক আমার কাছে আসেন সেখানে তারা কোটা বিষয়টাই সরকারের ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে কথা বলেন। তখন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নাহিদ, আসিফ, আবু বাকের মজুমদারসহ কথা বলে ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেই। তখনই আমাদের মধ্যে ভাবনা আসে, যে যতটুকু সম্ভব, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোচ্চার ছিলেন—তাদের সবাইকে একত্র করে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া দরকার। সেই চিন্তা থেকেই আমরা সেদিন সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করি